যখন আপনি ছোট ছিলেন, তখন টিভির দিকে তাকিয়ে থাকতেন এবং মনে করতেন, এটি একটি ষড়যন্ত্র। নেটওয়ার্ক আমাদের বোকা বানানোর পরিকল্পনা করছে। কিন্তু যখন আপনি একটু বড় হলেন তখন বুঝতে পারলেন এটি সত্য নয়। নেটওয়ার্কগুলো মানুষ যা চায়, ঠিক তা-ই দেওয়ার মাধ্যমে ব্যবসা করে। এটা অনেক বেশি হতাশাজনক চিন্তা। (Steve Jobs, Wired magazine, 1996)
আরেকটু বড় হয়ে যখন জানা শুরু করলেন তখন দেখলেন কেউ কেউ বলছে টিভি আপনার ক্ষতি করছে। টিভিতে প্রচারিত বিনোদন আপনাকে উপকারও করছে বলে শুনছেন। আসলে কী? চলুন দেখি গবেষণা কী বলছে।
এক গবেষণায় দেখা গেছে, আমেরিকানরা প্রতিদিন গড়ে প্রায় তিন ঘণ্টা টেলিভিশন দেখার পেছনে ব্যয় করে। তার মানে এটা বলা যায়, আমেরিকানরা আট বছরে ধরতে গেলে গড়ে এক বছরের (২৪ ঘণ্টা) সমান সময় টেলিভিশন দেখায় ব্যয় করে!
আগের গবেষণা টিভি দেখা এবং ইতিবাচক অনুভূতি, যেমন-ইতিবাচক মানসিক অবস্থা, উচ্চ মাত্রার কর্মশক্তি, প্রবল আগ্রহ এবং উদ্দীপনার মধ্যে নেতিবাচক সম্পর্ক খোঁজে পেয়েছে। কিন্তু এই সংযোগের কার্যকারিতার দিকটি স্পষ্ট নয়। উভয় দাবির প্রতি সমর্থন রেখে এটা বলা যায়, অসুখী ব্যক্তিরা টিভি দেখার প্রতি আকৃষ্ট হয়। অন্যদিকে এটাও বলা হয়, টেলিভিশন দেখাও অসুখী হওয়ার কারণ।
উদাহরণস্বরূপ, টেলিভিশন দেখা ইতিবাচক প্রভাব হ্রাস করে এটা প্রমাণিত। এমনকি যখন টিভি অনুষ্ঠান দেখার সময় মেজাজ ভালো হয়, তখন সেটার প্রভাব অস্থায়ী হয়। বিকল্প এবং সম্ভাব্য উপকারজনক আচরণ, যেমন: স্বেচ্ছাসেবক হওয়া, পরিবার এবং বন্ধুদের সাথে ভালো সময় ব্যয় করা এবং শখগুলো পুরণ করার জন্য নির্দিষ্ট সময়ের গণ্ডিতে চলে আসতে হয়।
উপরন্তু টিভি দেখা একটি অভ্যন্তরীণ কার্যকলাপ এবং এটা আমাদের বাইরে সময় ব্যয় করা থেকে বাধা দেয়। গবেষণায় দেখানো হয়েছে যে, বাইরে সময় অতিবাহিত করা- বিশেষ করে প্রকৃতিতে , সুস্থতার জন্য যথেষ্ট উপকারী হতে পারে।
বিপরীত ক্রিয়াকাণ্ডের দিকনির্দেশনা সম্পর্কে কি এমন কোনো প্রমাণ রয়েছে যে, নিম্নতর ইতিবাচক প্রভাবগুলি টিভি দেখার উৎসাহ বাড়াচ্ছে? হ্যাঁ, আছে।
উদাহরণস্বরূপ, খুব খুশি মানুষ অসন্তুষ্ট ব্যক্তিদের তুলনায় সামাজিকীকরণে উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি সময় এবং টিভি দেখায় কম সময় ব্যয় করে।
সুখী মানুষ আরো নতুন এবং আকর্ষণীয় কার্যক্রম করতে আগ্রহী হয়, যেখানে অসুখী মানুষের উদ্দেশ্যই থাকে পুরনো এবং আন্দাজের মধ্যে সান্ত্বনা খুঁজে পাওয়া, যা কি-না তাদের পূর্ব নির্ধারিত সম্প্রচারিত সময়ে পরিচিত সেলিব্রিটিতে পূর্ণ পরিচিত টিভি শো।
বর্তমান গবেষণা টেলিভিশন দেখা এবং অসুখী থাকা উভয়ের মধ্যে কারণিক নির্দেশনার প্রমাণ দাঁড় করিয়েছে, এই সংশয়পূর্ণ প্রশ্নটি ব্যাখ্যা করার উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছে।
Bayraktaroglu এবং তাঁর সহযোগীরা গবেষণা করে দেখেছেন, টিভি দেখে সময় ব্যয় করার ফলে ইতিবাচক অনুভূতিতে কোনো প্রভাব পরে কি-না, বিপরীতভাবে নির্দিষ্ট দিনের ইতিবাচক অনুভূতি পরবর্তী দিন কম বা বেশি টিভি দেখার পূর্বাভাস দেয় কি-না।
১৬৬৮ জন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি, যাদের বয়স পরিসীমা ৩৩-৮৩ বছর, তারা এ গবেষণায় অংশগ্রহণ করেন।তাদেরকে তাদের অনুভূতি এবং তাদের টিভি দেখার সময় বলতে বলা হয়েছিল।
এই গবেষণার ফলাফল বলে যে, একটি নির্দিষ্ট দিনে টিভি দেখার সময়কাল পরের দিনের ইতিবাচক অনুভূতির পূর্বাভাস দেয় না, কিন্তু একটি নির্দিষ্ট দিনের ইতিবাচক অনুভূতির মাত্রা পরের দিন টিভি দেখার ক্ষেত্রে পূর্বাভাস দেয়।
সহজভাবে বললে, টিভি দেখা মানুষদের পরের দিন অসন্তুষ্ট মনে হচ্ছিল না , তবে যারা আগে থেকেই অসন্তুষ্ট ছিল, তাদের পরের দিন টেলিভিশন দেখার সম্ভাবনা আরও বেশি ছিল।
তথ্যসূত্র: সাইকোলজি টুডে ডটকমে প্রকাশিত এক রচনা অবলম্বনে লিখেছেন সুমাইয়া জান্নাত।
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে
/এসএস