জীবনের কঠিন সময়ে নিজের উপর আস্থা রাখা এবং সবরকম পরিস্থিতিতে ভালো দিকটা খুঁজে বের করা উত্তরণের ভালো উপায় হতে পারে। কিন্তু সব পরিস্থিতিতেই ইতিবাচক চিন্তা ক্ষতির কারণও হতে পারে।
অতিরিক্ত আশাবাদী মনোভাব মানুষের মধ্যে ভালো লাগা তৈরি করে। এই ভালো লাগা থেকে মানুষ চিন্তা করতে শুরু করে এবং চিন্তা-কল্পনায় অনেকসময় অনেক কিছু অর্জন করে ফেলে কিন্তু বাস্তবতা এতটা মসৃণ হয় না।
তিন ধরনের আশাবাদী চিন্তা ভালোর বদলে মানুষের জীবনে বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে-
ইতিবাচকতার অতিরঞ্জন
“সবাই আমাকে অনেক পছন্দ করে”, “আমি যাকে ভালোবাসি তার প্রতিটা দিক আমার অনেক পছন্দের”। এই ধরনের চিন্তাধারী ব্যক্তিরা তাদের আচরণ ও চিন্তার সব দিককে সঠিক বলে মনে করেন, এ কারণে তারা নিজেরদের ক্রমাগত উন্নয়নের কোনো চেষ্টাই করেন না। এছাড়া তারা নেতা বা পরিচালক হিসেবে অন্যদের অবনতিও রোধ করতে পারেন না, বিপদের সম্ভাবনা দেখলে তারা নিজেদের গুটিয়ে নিয়ে ইতিবাচক চিন্তার চাদরে মুড়িয়ে রাখতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।
কার্যক্ষমতার উপর অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস
অতিরিক্ত আত্মসম্মানবোধ এবং অধিক আত্মবিশ্বাস মানুষের জন্য দুর্বিপাকের কারণ হতে পারে । যেমন: কেউ অনেক দিন ধরে পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার পর পরীক্ষার আগের দিনে এসে পড়া কমিয়ে দিলো এবং ভাবলো আর না পড়লেও হবে। ফলে যে খারাপ ফলাফল হবে, তা অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসেরই কুফল ।
সফলতার ক্ষেত্রে উচ্চাশা
ধরুন, আপনি একজন ব্যবসায়ী। ব্যবসায় সফল হওয়ার সবদিক সুনিশ্চিত করে ফেলেছেন। আপনি যে নতুন বিনিয়োগ করতে চলেছেন, তার ফলে পর্যাপ্ত মুনাফা আসলেও কিছু ঝুঁকি থাকতে পারে, উচ্চাশার কারণে আপনি এই দিকটা লক্ষ্য করতে ভুলে যেতে পারেন, যা অনেক সময় পুরো অর্জনের অন্তরায় হয়ে উঠতে পারে।
প্রখ্যাত সাইকোথেরাপিস্ট , ‘মেন্টাল স্ট্রেইনথ ট্রেইনার’ এবং ‘থার্টিন থিংস মেন্টালি স্ট্রং পিপল ডোন্ট ডু’ বইয়ের লেখক ‘এমি মরিন’ বলেন, ‘‘চিন্তা করার সময় যৌক্তিকতা ও বাস্তবতাকে মাথায় রেখে করা উচিত। সেইসাথে সামঞ্জস্য রেখে আশাবাদী মনোভাব যথেষ্ট কার্যকরী। এই ধরনের চিন্তা মনের পেশীকে শক্তিশালী করে এবং মানুষকে তখন মনের ব্যাথা লুকিয়ে রাখতে অবাস্তবতা ও অতিরঞ্জনের মুখোশ পরে থাকতে হয় না। আমি আমার কাজে সেরা হবো, এমন না ভেবে বরং ভাবা উচিত, আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। এইধরনের অভিজ্ঞতা মনে গভীর শান্তি তৈরি করে, যেহেতু এতে আত্মবিশ্বাস থাকে এবং ফলাফল যা-ই হোক, তার জন্য মন প্রস্তুত থাকে । তার মানে এই নয় যে, তারা সবকিছুতেই সহিষ্ণু প্রকৃতির হয়ে যাবে বা কাজের ক্ষেত্রে নিষ্ক্রিয় ভূমিকা রাখবে। প্রকৃতপক্ষে, তারা তাদের সর্বোত্তম সম্ভাবনাকে স্পর্শ করতে আপ্রাণ চেষ্টা করবে। সেই সাথে নিজেদের সীমাবদ্ধতা, দুর্বলতা এবং অপারগতা নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে।
সুখবর হচ্ছে যে, মানুষ চাইলেই তাদের মস্তিস্ককে ভিন্ন ভিন্নভাবে চালানোর প্রশিক্ষণ দিতে পারে। অনুশীলনের মাধ্যমে মানুষ তাদের স্বাস্থ্যকর দৃষ্টিভঙ্গি উন্নত করতে পারে যেটা তাদের মস্তিস্কের পেশী গঠনে সাহায্য করবে।
সাইকোলজি টুডে জার্নাল থেকে ভাষান্তর জেসমিন মাহমুদা জুথী
তথ্যসূত্র:
https://www.psychologytoday.com/blog/what-mentally-strong-people-dont-do/201712/how-mentally-strong-people-think-its-not-always