শিশুদের জন্য স্কুল হোক দ্বিতীয় বাড়ি

[int-intro]যে বয়সে শিশুদের খেলে বেড়ানোর কথা, ছুটে বেড়ানোর কথা সেই বয়সটাতেই তাদের হয়ে উঠতে হয় রেসের ঘোড়া। শিশু ছুটবে, দৌড়াবে, হোঁচট খাবে আর এর ভেতর দিয়েই শিখতে শিখতে বড় হবে- এই দৃশ্যটা আমাদের চারপাশে দৃশ্যমান বর্তমান বাস্তবতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। রুদ্ধশ্বাসে ছুটছে সবাই। এমনকি শিশুটিও। কিন্তু সব অভিভাবকই কি শিশুকে রেসে নামিয়ে দিয়ে রেজাল্ট আর সার্টিফিকেটের জন্য ‍উদগ্রীব হয়ে থাকেন? বস্তুত তা নয়। অনেকেই চান না। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে সিন্দাবাদের বুড়োর মত ঘাড়ে চেপে বসা সিস্টেমটাকে ঘাড় থেকে নামাতে পারেন না অনেকেই। সন্তানদের পড়াশোনা এবং পড়াশোনার চাপ নিয়ে মনের খবরের মুখোমুখি হয়েছেন প্রীতি ওয়ারেসা। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন মনের খবরের বিশেষ প্রতিবেদক সাদিকা রুমন।[/int-intro]
[int-qs]আপনার কয়জন সন্তান?[/int-qs]
[int-ans name=”প্রীতি”]আমার দুই সন্তান।[/int-ans]
[int-qs]ওদের বয়স কত?[/int-qs]
[int-ans name=”প্রীতি”]বড়জন ছেলে,তার বয়স ১১ বছর। ছোটজন মেয়ে,তার বয়স ৯ বছর।[/int-ans]
[int-qs]স্কুলে যায়?[/int-qs]
[int-ans name=”প্রীতি”]দুইজনই স্কুলে যায়।[/int-ans]
[int-qs]কোন ক্লাসে পড়ে?[/int-qs]
[int-ans name=”প্রীতি”]ছেলে ক্লাস ফাইভে পড়ে,মেয়ে ক্লাস থ্রিতে।[/int-ans]
[int-qs]ওদেরকে স্কুলে কী কী বিষয় পড়তে হয়?[/int-qs]
[int-ans name=”প্রীতি”]মেয়ে ক্লাস থ্রিতে পড়ে। তাকে সাধারণ বাংলা,বাংলা ব্যাকরণ,নিউ অক্সফোর্ড ইংলিশ, ইংলিশ গ্রামার,বিজিএস,ম্যাথ, রিলিজিয়ন,আইসিটি, সায়েন্স, আর্ট এসব বিষয় পড়তে হয়। ছেলে পড়ে ক্লাস ফাইভে। ছেলেকে বাংলা ১, বাংলা ২, ইংলিশ ১, ইংলিশ ২, ম্যাথ, বিজিএস, সায়েন্স, রিলিজিয়ন পড়তে হয়।[/int-ans]
[int-quote]আমি চাই বাচ্চারা বেড়ে উঠুক আনন্দ নিয়ে।  পড়ালেখার পাশাপাশি খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ হোক তাদের গুরুত্বপূর্ণ বিকাশ মাধ্যম। যে শিক্ষা আনন্দের না সেটা দিনশেষে জীবনের অপচয় ছাড়া আর কিছু নয়। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় মানুষ হবার পরিবর্তে সবাইকে পরিকল্পনা করতে হয় কোন বিষয়ে পড়লে অর্থের মানদণ্ডে ক্যারিয়ার উজ্জ্বল ও জীবনযাত্রা স্বাচ্ছন্দ্যময় হবে। এমন শিক্ষাব্যবস্থা কারও জন্যই কোনো মঙ্গল বয়ে আনতে পারে না।[/int-quote]
[int-qs]আপনি কি মনে করেন এতটুকু বয়সেই এতগুলো বিষয় কিংবা এত বিস্তৃত পড়াশুনা প্রয়োজন রয়েছে?[/int-qs]
[int-ans name=”প্রীতি”]একেবারেই মনে করি না যে,এতোগুলো বিষয় এই বয়সী বাচ্চাদের পড়ার দরকার আছে। ইউরোপের উন্নত দেশগুলোর কথা বাদই দিলাম এশিয়ার একটি দেশ জাপানের কথাই যদি বলি তাহলে দেখব তাদের শিক্ষাব্যবস্থাতে ১০ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের পড়ার কোনো চাপই নেই, নেই কোনো পরীক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা। তারা কি সুশিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে না! আমাদের শিশুদের এত এত পড়িয়ে আমরা তাদের দিয়ে কী এমন ঘোড়ার আণ্ডা উৎপন্ন করছি! আমি চাই বাচ্চারা বেড়ে উঠুক আনন্দ নিয়ে।  পড়ালেখার পাশাপাশি খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ হোক তাদের গুরুত্বপূর্ণ বিকাশ মাধ্যম। যে শিক্ষা আনন্দের না সেটা দিনশেষে জীবনের অপচয় ছাড়া আর কিছু নয়। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় মানুষ হবার পরিবর্তে সবাইকে পরিকল্পনা করতে হয় কোন বিষয়ে পড়লে অর্থের মানদণ্ডে ক্যারিয়ার উজ্জ্বল ও জীবনযাত্রা স্বাচ্ছন্দ্যময় হবে। এমন শিক্ষাব্যবস্থা কারও জন্যই কোনো মঙ্গল বয়ে আনতে পারে না।[/int-ans]
[int-qs]বাচ্চাদের স্কুলের পড়াশুনার পদ্ধতি এবং  মান নিয়ে আপনি তুষ্ট?[/int-qs]
[int-ans name=”প্রীতি”]একেবারেই তুষ্ট না। মুখস্থবিদ্যা দিয়ে জাতি কীভাবে এগোবে! জ্ঞান বিষয়টা তো অধরাই থেকে যাচ্ছে। এই শিক্ষা পদ্ধতি শিশুদের জ্ঞান অর্জন বিষয়ে কোনো উৎসাহ সৃষ্টি করে না। শিক্ষাক্রম তৈরি হয়েছে মুখস্ত করার জন্য আর শ্রেণিকক্ষে আছে ভালো নম্বর পাওয়ার অমানুষিক তাগাদা।[/int-ans]
[int-qs]ওদের স্কুলের পড়াশুনার যে কাঠামো সেটা কি শিশুদের মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা  রাখতে পারছে?[/int-qs]
[int-ans name=”প্রীতি”]অবশ্যই না। এক গাদা হোম ওয়ার্কের চাপ বাচ্চাদের মানসিক বিকাশকে ব্যহত করছে। স্কুলের পরে বাসায় ফিরে বই নিয়ে বাচ্চাদের সাথে অভিভাবকদের বসে থাকতে হয় পড়া মুখস্থ করার জন্য। মুখস্থবিদ্যা ও বেশি নম্বর পাওয়ার এইরকম অসুস্থ প্রতিযোগিতার ফাঁদে ফেলে মওকা বুঝে ব্যবসা করে যাচ্ছে কোচিং সেন্টারগুলো। আর আমাদের শিশুরা হারাচ্ছে তাদের শৈশব ও কৈশোরের দারুণ দুরন্ত সময়। পড়ার চাপে খেলাধুলা ও মানসিক বিকাশের অন্যান্য কার্যকলাপে যুক্ত হওয়ার সময় পর্যন্ত তাদের নেই![/int-ans]
[int-qs]কী ধরনের পড়াশুনা এবং স্কুল আপনি সন্তানের জন্য প্রত্যাশা করেন?[/int-qs]
[int-ans name=”প্রীতি”]আমি চাই পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত স্কুল শেষে বাচ্চারা যেন তাদের বই স্কুলেই রেখে আসার সুযোগ পায়। বাসায় যেন হোম ওয়ার্কের কোনো চাপ না থাকে। এতে করে স্কুল শেষে শিশুরা অফুরন্ত সময় পাবে। নিশ্চিন্তে পছন্দের কাজে মনোনিবেশ করতে পারবে। শিশুদের জন্য স্কুল হোক দ্বিতীয় বাড়ি,পড়ালেখা হোক আনন্দের। শুধু হড়েদরে জেনারেল সাবজেক্টে পড়িয়ে কিংবা ট্রেন্ড ফলো করে বাচ্চাদের ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার,এমবিএ না বানিয়ে শিশুর আগ্রহের দিকে লক্ষ্য রেখে তাদের ক্যারিয়ার পরিকল্পনা করা উচিত। এ কাজে সাহায্য করবে স্কুল পাঠ্যক্রম। সবাইকে গুটি কয়েক পেশার দিকে ঠেলে দেওয়া স্কুলের কাজ হতে পারে না। শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য মেধার বিকাশ,উদ্দেশ্য পৃথিবীর বিপুল রঙ-রসে শিশুকে উস্কে দেওয়া। সব বুঝেসুঝে নিয়ে একসময় যেন এই শিশুরাই সিদ্ধান্ত নিতে পারে তার কার্যক্রম কী এবং কোথায় হবে। কিন্তু আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা শিশুদের এই উস্কে দেওয়ার কাজে একেবারেই ব্যর্থ।[/int-ans]
[int-qs]এক্ষেত্রে অভিভাবক কি কোনো ভূমিকা রাখতে পারে?[/int-qs]
[int-ans name=”প্রীতি”]অবশ্যই পারে। অভিভাবকদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনই পারে মুখস্থবিদ্যার এই পাঠ্যক্রম পরিবর্তন করতে। কিন্তু অভিভাবকগণ সেভাবে সোচ্চার না। কেউ কেউ সোচ্চার হলেও তারা সংগঠিত না। বিচ্ছিন্ন বা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর বিচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা খুব একটা ফলদায়ক হয় না। হচ্ছেও না। সন্তানের সুশিক্ষা নিশ্চিত করতে অভিভাবকদের অনেক বেশি সচেতন হতে হবে এবং অতি অবশ্যই অভিভাবককেই পদক্ষেপ নিতে হবে সন্তানের ভবিষ্যৎ রচনায়।[/int-ans]
প্রীতি ওয়ারেসার বক্তব্যের রেশ ধরেই বলা যায়- অভিভাবকদের সচেতনতাও অনেক কিছু বদলে দিতে পারে। অভিভাবক যদি ‍উপেক্ষা করতে পারেন চটকদার রেজাল্টের প্রলোভন,সন্তানের প্রথম হওয়ার একরোখা আকাঙ্ক্ষা ও মানুষ হওয়া মানে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হওয়া- এই দৃঢ়মূল মনোভাব তাহলে আপনা থেকেই আমাদের ঘাড় আঁকড়ে থাকা সিন্দাবাদের বুড়ো আলগা হয়ে যাবে। আমরা শিশুদেরকে দিতে পারব একটা নির্ভার শৈশব।
এমএসএ

Previous articleএকা থাকতে ভয় পাই
Next articleস্বাগত ২০১৮

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here