’মানসিক স্বাস্থ্য’ বিশ্বজুড়েই একটি আলোচিত শব্দ। শুধুমাত্র প্রাপ্তবয়স্ক কিংবা তরুণদের মাঝেই থেমে নেই, শিশুদের মাঝেও বাড়ছে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা। গবেষণায় দেখা যায়, দেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষই মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন। কিন্তু প্রয়োজনীয় চিকিৎসার অভাবের দেশে এখনো অবহেলিত আছে মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসা সেবা।
সর্বশেষ ২০১৫ সালে মানসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার অবকাঠামো-সংক্রান্ত জরিপ হয়ে ছিলো। ওই জরিপ অনুযায়ী, দেশে মাত্র ২২০ জন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ রয়েছেন। এছাড়াও ৫০ জনের মতো প্রশিক্ষিত ক্লিনিক্যাল মনোবিজ্ঞানী থাকার বিষয়ে জানানো হয়।
২০০৭ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অ্যাসেসমেন্ট ইনস্ট্রুমেন্ট ফর মেন্টাল হেলথ সিস্টেমস রিপোর্টের তথ্যমতে, মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দানকারী প্রতিষ্ঠানে প্রতি এক লাখ মানুষের জন্য স্বাস্থ্যকর্মী শূন্য দশমিক ৪৯ জন। যারমধ্যে প্রতি লাখে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ শূন্য দশমিক ০৭৩ জন, সাইকিয়াট্রিক নার্স শূন্য দশমিক ১৯৬ জন, মনোবিজ্ঞানী শূন্য দশমিক ০০৭ জন, সমাজসেবাকর্মী শূন্য দশমিক ০০২ জন, পেশাদার থেরাপিস্টশূন্য দশমিক ০০৩ জন এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী আছেন শূন্য দশমিক ০২৯ জন।
এদিকে বিভিন্ন পেশা ও বয়সের মানুষের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকলেও বাস্তবতা হচ্ছে, এখন পর্যন্ত দেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থাপনা নেই। এ কারণেই মানুষ এখনো ঝুঁকছে ঝাড়ফুঁক, পানি পড়া ও বিভিন্ন ধরনের কুসংস্কারের দিকে।
রাজধানীর ঢাকার জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পাশাপাশি দেশের বেশ কিছু মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকলেও সেখানে আছে নানান সঙ্কট। একইসঙ্গে নেই পর্যাপ্ত জনবল। দক্ষ জনবল তৈরিতেও নেই কোনো উদ্যোগ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটাও মনে রাখতে হবে যে দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধিও এতদিন থেমে থাকেনি, যেমনটা থেমে থাকেনি আনুপাতিক বিবেচনায় আক্রান্তের হারও। মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা নিয়ে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায় থেকে নানান রকমের বক্তব্য দেওয়া হলেও বিশেষজ্ঞদের মতে স্বাধীনতার পরে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের অর্জন মানসিক স্বাস্থ্য আইন- ২০১৮, মানসিক স্বাস্থ্যনীতি ও মানসিক স্বাস্থ্যের কর্মকৌশল পরিকল্পনা- যা এখন পর্যন্ত বাস্তবায়নের জন্য নেই কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ।
এছাড়াও মানসিক স্বাস্থ্যনীতিতে সমতা ও ন্যায়বিচার, সমন্বিত সেবা, প্রমাণ-ভিত্তিক পরিচর্যা এবং মান নিশ্চিতকরণের বিষয়গুলো রাখার বিষয়ে জানানো হলেও যারা মানসিক চিকিৎসা সেবা দেওয়া তাদের পদোন্নতি ও মানোন্নয়ন নিয়েও নেই কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ।
বিশেষজ্ঞরা আরো বলছেন, শুধুমাত্র সরকারি বাজেট বাড়িয়েই নয়, প্রয়োজনে আলাদা ইউনিট গঠন করে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে প্রান্তিক পর্যায়ে। পাশাপশি মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণা ও কুসংস্কার দূর করে জনসচেতনতামূলক প্রচারণা করতে হবে।
এছাড়াও প্রাথমিক স্কুল পর্যায় থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায় পর্যন্ত মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসা ব্যবস্থাকে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলার পাশাপাশি জনগণকে দ্রুত এই পরিষেবা সম্পর্কে অবগত করা প্রয়োজন বলেও মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
স্বাস্থ্য অধিদফতর কর্তৃপক্ষ জানায়, দেশে মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসার জন্য বিশেষজ্ঞসহ বর্তমানে প্রায় ৫০০ জন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মী রয়েছেন। তবে সর্বশেষ জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য জরিপ ২০১৮-১৯–এর তথ্য অনুযায়ী, দেশে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের সংখ্যা মাত্র ২৭০ জন। অর্থাৎ প্রতি ৯৩ হাজার রোগীর জন্য মাত্র একজন বিশেষজ্ঞ।
স্বাস্থ্য অধিদফতর ও স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতর থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পার করতে থাকলেও দেশে জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে এখন পর্যন্ত মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসা সেবা পৌঁছানো সম্ভব হয়নি।
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে