কনজেনিটাল হার্ট ডিজিজের ব্যক্তিরা মানসিক সমস্যায় বেশি আক্রান্ত হয়

0
16
কনজেনিটাল হার্ট ডিজিজের ব্যক্তিরা মানসিক সমস্যায় বেশি আক্রান্ত হয়

কার্ডিয়াক সাইকিয়াট্রি বলতে আমরা বুঝি হার্ট ডিজিজে আক্রান্ত (Acute or Chronic condition) কোনো রোগীর মানসিক স্বাস্থ্য, আচরণ এবং শারীরিক সুস্থতার সঙ্গে কার্ডিয়াক ফাংশনের যে যোগসূত্র তা নিয়ে আলোচনা করা। এটাকে অনেক সময় বিহেভিয়ারেল কার্ডিওলজিও বলা হয়। সুতরাং এর পরিধি একদমই ছোটো নয়। এরই একটা অংশ হিসেবে আমরা জন্মগতভাবে যাদের হার্টে ত্রুটি আছে বা কনজেনিটাল হার্ট ডিজিজে যারা আক্রান্ত তাদের নিয়ে করা একটি গবেষণা এখানে আলোচনা করব।

চিকিৎসা বিজ্ঞানের অভূতপূর্ব উন্নতির কারণে জন্মগত হার্টের সমস্যা আছে তাদের অনেকেরই জীবন আকাঙ্ক্ষা বেড়েছে। জীবনের পরিধি বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের মধ্যে জীবনযাপনের মান কেমন এবং কোনো মানসিক সমস্যায় তারা পড়ছে কিনা-তা নিয়েও রয়েছে গবেষক বিজ্ঞানীদের আগ্রহ। জীবনযাত্রার মান বলতে বোঝায় শারীরিক, সামাজিক এবং মানসিক ক্ষেত্রে ব্যক্তি কেমন আছে এবং এর একটা বড়োসড়ো প্রভাব আছে মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর।

কনজেনিটাল হার্ট ডিজিজের ক্ষেত্রে দেখা যায়, বাবা-মায়ের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর এইসব শিশুদের লালন পালনের বিষয়টি দুভাবেই জড়িত, যেমন অনেক গবেষণার ফলাফল এ দেখা গেছে, এই রোগের বার্ডেন শিশু এবং পিতা-মাতার ইন্টার‌্যাকশন বা আন্তঃসম্পর্ককে ব্যাহত করে আবার পিতা-মাতা অতিরিক্ত মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তার কারণে এইসব শিশুদের পরিচর্যা বা লালন-পালন ব্যাহত হয়। বিষণ্ণতা, দুশ্চিন্তা, নিরাশা ইত্যাদি মানসিক সমস্যা অনেক বেশি দেখা যায় মায়েদের মধ্যে বাবাদের তুলনায়। সার্বক্ষণিক দুশ্চিন্তা শিশুর চিকিৎসা এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে, হাসপাতালে প্রায় ফলোআপ করা, চিকিৎসাসহ আনুষঙ্গিক ব্যয় এইসব বিষয় শিশুর পরিচর্যার প্রতি বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

সাধারণ মানুষের তুলনায় তাই কনজেনিটাল হার্ট ডিজিজে আক্রান্ত ব্যক্তিরা বেশি মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত হয় এবং তারা শিশু বয়স থেকে ট্রমাটিক অভিজ্ঞতা এবং অ্যাবিউজিং ব্যবহারের শিকার হয়। আলোচ্য গবেষণা প্রবন্ধে এই বিষয়গুলোই দেখা হয়েছে-

কনজেনিটাল হার্ট ডিজিজের রোগীদের মাঝে চাইল্ড ম্যাল্টট্রিটমেন্টের হার কত?

সাধারণ মানুষের সাথে এই ফলাফল এর তুলনামূলক পর্যালোচনা।

চাইল্ড ম্যাল ট্রিটমেন্টের সঙ্গে ডিপ্রেশন, অ্যাংজাইটি এবং কোয়ালিটি অব লাইফের সম্পর্ক আছে কিনা?

চাইল্ড ম্যাল ট্রিটমেন্টের সঙ্গে কার্ডিয়াক ফাংশনের কোনো অবনতি হয় কিনা?

এই ৪টি উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে পরিচালিত এই গবেষণায় ১৯৬ জন প্রাপ্ত বয়স্ক কনজেনিটাল হার্ট ডিজিজের পেশেন্টকে (১০৯ জন পুরুষ, ৮৭ জন মহিলা) ইন্টারভিউ করা হয়। যাদের গড় বয়স ছিল ৩৫.২১ বছর। চাইলড ম্যাল ট্রিটমেন্ট নির্ণয় করার জন্য ব্যবহার করা হয় Childhood trauma questionnaire (CTQ), এটা পেশেন্ট নিজেই পূরণ করা হয় এবং ৫টি বিষয়ে প্রশ্ন থাকে-মানসিক, শারীরিক, সেক্সুয়ালি হয়রানি বা অপব্যবহার, আবেগীয় অবহেলা এবং শারীরিক অবহেলা। বিষণ্ণতা এবং দুশ্চিন্তা পরিমাপ করা হয় Hospital Anxiety and Depression Scale (HADS) এবং WHO Quality of Life – এর সাহায্যে জীবনযাত্রার মান।

কার্ডিয়াক ফাংশন দেখার জন্য ইকোকার্ডিওগ্রাম করা হয় একজন অভিজ্ঞ কার্ডিওলজিস্টের মাধ্যমে। ফলাফলে দেখা যায়, চাইল্ড ম্যাল ট্রিটমেন্ট অনেক কমন কনজেনিটাল হার্ট ডিজিজ পেশেন্টদের মাঝে এবং বিষণ্ণতা, দুশ্চিন্তাসহ জীবনযাত্রার নিম্ম  মানের সঙ্গেও সম্পর্কিত। জার্মানিতে করা এই গবেষণায় লেখকরা বলেছেন তাদের জানা মতে এরকম স্টাডি এই প্রথম, তাই এ নিয়ে আরো গবেষণার প্রয়োজন আছে এবং এই গবেষণার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে বলা যায় যে, প্রয়োজনীয় মনোসামাজিক সাহায্য বা ইন্টারভেনশনের ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এই সমস্যা অনেকাংশে লাঘব করে কঞ্জেনিটাল হার্ট ডিজিজের পেশেন্টদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা সম্ভব।

 

ডা. সাদিয়া আফরিন

রেসিডেন্ট এমডি (চাইল্ড অ্যান্ড অ্যাডোলসেন্ট সাইকিয়াট্রি)

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়।

সূত্রঃ মনের খবর মাসিক ম্যাগাজিন, ৪র্থ বর্ষ, ৯ম সংখ্যায় প্রকাশিত।

স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে  

“মনের খবর” ম্যাগাজিন পেতে কল করুন ০১৮ ৬৫ ৪৬ ৬৫ ৯৪
Previous articleমানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসায় মুসলিম বিজ্ঞানী
Next articleঅবহেলিত মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসা সেবা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here