বলা যায়, ক্রোধ এমন এক দাহ্য যা আপনার শরীর এবং মনকে জ্বালিয়ে অঙ্গার করে দেবে। ক্রোধ মানুষকে হিতাহিত জ্ঞান শূন্য করে দেয় এবং মানুষ তার মানবীয় গুণাবলী হারিয়ে পশুতে পরিণত হয়। তাই সুস্থ ও সুন্দরভাবে মানুষের মত বেঁচে থাকতে হলে এই ক্রোধকে নিয়ন্ত্রণ করা খুবই জরুরী।
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এমন অনেক কিছুই ঘটে যা হয়তো স্বাভাবিক নয়। অনেক নিয়ম নীতির ব্যাত্তয় আমাদের চারিদিকেই ঘটছে। ব্যক্তিগত, পারিবারিক বা সামাজিক জীবনে সব সময় সব কিছু কোন সমস্যা ছাড়াই ভালোভাবে চলবে এমনটা আশা করাও যায়না। অনেকেই আছেন যারা খুব সহজে এসব মেনে নিতে পারেন না। নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন এবং রেগে যান। কিন্তু রেগে গেলেই সব কিছু সঠিক হয়ে যাবে এমনটা কিন্তু নয়। তবে রেগে গেলে আপনার শরীর ও মনের ক্ষতি হবে এটা স্বাভাবিক এবং অবশ্যম্ভাবী। ক্রোধ একজন স্বাভাবিক সুস্থ মানুষকে হিতাহিত জ্ঞান শূন্য করে মানসিক বিকার গ্রস্ত করে তুলতে পারে। যখন একজন মানুষ মানসিক সন্তুলান হারিয়ে ফেলে তখন তার শরীর তার নিয়ন্ত্রণে থাকেনা, তার জ্ঞান বুদ্ধি লোপ পায়, খুব সহজেই সে তার মূল্যবোধ এবং সব রকম উন্নত গুণাবলী হারিয়ে ফেলে।
ক্রোধ একজন মানুষকে বাস্তবতা বর্জিত একজন মানুশে পরিণত করে। ক্রোধান্বিত ব্যক্তি ঠিক একজন মাদকাশক্ত মাতাল ব্যক্তির মত আচরণ করে। তার মনে হয় সে যা করছে সেটাই সঠিক এবং ধীরে ধীরে তার ক্রোধ সীমা ছাড়িয়ে যায়। ঠিক কোন অবস্থায় তাকে থামতে হবে বা কতটুকু রাগ করলে তার মাত্রা কোন যুক্তি সঙ্গত পর্যায়ে থাকবে সেটি সে ভুলে যায়। তার কাছে মনে হয় সে সঠিক কাজটিই করছে যেখানে বাস্তবতা থাকে ঠিক তার বিপরীত। সে সম্পূর্ণ রূপে বাস্তবতার বিষয়ে অজ্ঞ হয়ে যায়।
যখন একজন ব্যক্তি ক্রোধান্বিত থাকে, তার আচার আচরণ, চিন্তা ভাবনা সব কিছু প্রভাবশালী কিছু রাসায়নিকের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। এমিগডালা নামক মস্তিষ্কের একটি অংশ তাৎক্ষণিক ভাবে ক্রোধ উদ্রেক করার জন্য দায়ী। যখন এমিগডালা শরীরে এই সংকেত প্রেরণ করে যে আপনি রাগান্বিত, আপনার এড্রিনাল গ্লান্ড সমূহ সেই অনুযায়ী কাজ করতে শুরু করে দেয়। এড্রিনালিন এমন একটি রাসায়নিক আপনার হৃদ যন্ত্রের গতি বাড়িয়ে দেয়, মস্তিষ্ক এবং মাংশ পেশীতে অতিরিক্ত রক্ত সঞ্চালিত করে রক্তের চাপ বাড়িয়ে দেয়।
আপনার শরীর তখন অতিরিক্ত টেস্টস্টেরন নিঃসরণ করতে শুরু করে, যে রাসায়নিক আপনার ক্রোধের পরিমাণ বহু মাত্রায় বাড়িয়ে দেয়। যখন এই অবস্থার সাথে আপনার শরীর ও তাল মিলিয়ে কার্যক্রম শুরু করে তখন আপনি দিক শূন্য হয়ে, মানসিক সন্তুলান হারিয়ে বোধ বুদ্ধিহীন উন্মাদের মত আচরণ করতে শুরু করেন। এ কারনেই ক্রোধ আপনাকে ব্যবহার করে এমন সব কথা বলায়, এবং এমন সব আচরণ করায় যা প্রকৃতপক্ষে মোটেও আপনার ব্যক্তিত্ব বা মানসিকতাকে প্রতিফলিত করেনা। আপনি আদতে যা ভাবছেন, ক্রোধ আপনাকে সম্পূর্ণ তার বিপরীত আচরণ করতে বাধ্য করে যা সত্য নয়।
যখন কেউ কোন বিষয়ে রেগে যায়, দেখা যায় তার পেছনে বেশ কিছু কারণ কাজ করে। অনেক সময় দেখা যায়, যে কারণে আপনি ক্রোধ প্রকাশ করছেন তা নিছক ভুল বোঝাবুঝি ছাড়া আর কিছুই নয়। হতে পারে প্রতিপক্ষের কোনরূপ আক্রমণের সম্ভাবনা বা অন্য কারও হয়ে প্রতিবাদ করা অথবা আপনার কাছে অন্যায় বা অন্যায্য কিছু হচ্ছে ইত্যাদি বিভিন্ন ধারণা থেকে ক্রোধের উদ্রেক হতে পারে। আপনার কাছে এই সবই যুক্তিসঙ্গত আবেগের ফলাফল। কিন্তু যেমন ই হোক, যখন এই যুক্তিসঙ্গত আবেগের বহিঃপ্রকাশ ক্রোধ বা রাগের মাধ্যমে হয়, পরিস্থিতি একদমই আপনার বিপরীত এবং পরিবেশ আরও খারাপ হয়ে যায়।
এটা অবশ্যই সঠিক যে ক্রোধ বা রাগ আপনার আবেগ অনুভূতি প্রকাশের একটি সাধারণ মাধ্যম এবং যখন এটি আপনার নিয়ন্ত্রণে থাকে তখন এটি কোন সমস্যাই সৃষ্টি করেনা। এটা তখনই কোন অপৃতিকর অবস্থার সৃষ্টি করে যখন আপনি আপনার নিজের উপর থেকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। যদি একটু গভীর ভাবা ভেবে দেখা হয় তাহলে দেখবেন ক্রোধের ফল কখনোই ভাল কিছু বয়ে আনেনা। আত্ম নিয়ন্ত্রণে থাকা অসন্তোষ আপনার প্রতিবাদের ভাষাকে আরও সুদৃঢ় করে কিন্তু অত্যধিক মাত্রায় ক্রোধ আপনার নিজের মনস্তাত্ত্বিক দশাকে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত করে তেমনি আপনার শারীরিক বিভিন্ন সমস্যাও সৃষ্টি করে। তাই নিজের স্বার্থেই অতি মাত্রার ক্রোধ ত্যাগ করতে হবে। এতে আপনি নিজের ও আপনার কাছের মানুষদের শারীরিক ও মানসিক প্রশান্তি বজায় রাখতে সক্ষম হবেন।
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে