আমাদের কাছের মানুষ গুলোর সাথে আমাদের সম্পর্ক যত গভীর, বিপদ মোকাবেলায় আমাদের মানসিক শক্তি থাকবে ততোটাই বেশী।
যে কোন বিপদ মোকাবেলায় পরিবার ও কাছের মানুষদের সাথে আমাদের সম্পর্কের বন্ধনই আমাদের মানসিক ভাবে দৃঢ় রাখে, সাহস যোগায়। করোনার মত এমন মহা সংকটের সময়েও আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এবং শারীরিক ও মানসিক অন্যান্য সমস্যা মোকাবেলা করতে প্রয়োজনীয় মানসিক শক্তি যোগান দেয় এবং মনোবল অটুট রাখে। আর মানসিক শক্তি এবং আত্মবিশ্বাস বজায় থাকলে যে কোন বিপদ মোকাবেলা করা অত্যন্ত সহজ হয় এবং সফলতাও নিশ্চিত থাকে।
করোনা সংক্রমণে পরিবারের প্রতিটা সদস্যই বিচিন্নভাবে হরেক রকম সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। বাড়ির বৃদ্ধ থেকে শিশু, সব বয়সী মানুষ এক এক রকম ভাবে প্রতিকূল অবস্থা মোকাবেলা করছে। শিশুরা যেমন বাইরে যেতে পারছেনা, খেলাধুলা করতে পারছেনা, তাদের স্কুল বন্ধ, তেমনি বৃদ্ধেরা বাড়িতে একাকী জীবন যাপন করছে, তাদের চিকিৎসা সহ সব কাজে বাধা বিপত্তির সৃষ্টি হয়েছে। আবার উপার্জনক্ষম ব্যক্তিদের অনেকের চাকরী চলে গেছে, দৈনন্দিন কাজ বন্ধ হয়ে গেছে এবং চরম অর্থনৈতিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এভাবে বাড়িতে থাকা প্রত্যেকটি সদস্যই কোন না কোনভাবে করোনা দ্বারা পীড়িত জীবন যাপন করছে। দীর্ঘ দিন ধরে এমন অস্বাভাবিক অবস্থা চলতে থাকায় এ সকল সমস্যা সবার মাঝেই সৃষ্টি করেছে চরম মানসিক চাপ, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, হতাশা, একাকীত্ব, বিষণ্ণতা সহ নানা ধরণের মানসিক সমস্যা এবং এর সাথে সাথে নানা ধরণের শারীরিক জটিলতাও সৃষ্টি হচ্ছে। সমস্ত পৃথিবীই এখন রোগ, শোক, জরা, ব্যাধি, দারিদ্র্য, ক্ষুধা, অন্যায়, অবিচার সহ নানা ধরণের নেতিবাচক সমস্যায় জর্জরিত। আর করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে কার্যকরী কোন প্রতিষেধক আবিষ্কৃত না হওয়ায় এর থেকে মুক্তি পাবার পথও কারও জানা নেই। এমন অবস্থায় করোনা থেকে নিজের ও পরিবারের সুরক্ষা নিয়ে তাই সবার মাঝেই তৈরি হয়েছে চরম হতাশা যা অনেক ক্ষেত্রেই এটি আত্যহত্যার মত সামাজিক সমস্যাও জন্ম দিচ্ছে যা চরম উদ্বেগজনক।
মানসিক অবস্থা এবং বাস্তব জীবনে যখন এমন সংকট ব্যক্তিগত সম্পর্ককেও প্রভাবিত করে। এমন সময়ে একে অপরের পাশে থাকা এবং একে অপরের খেয়াল রাখা সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ এবং সব থেকে প্রয়োজনীয় কাজও বটে। দুঃসময়ে ব্যক্তিগত সম্পর্কগুলোই আমাদের সব থেকে বেশী সহায়তা প্রদান করে যা আমাদের সব বিপদ মোকাবেলার শক্তি প্রদান করে। শিশুদের মনস্তাত্ত্বিক, ব্যবহারিক এবং সামাজিক সহনশীলতা অভিভাবক ও পরিবারের অন্যান্যদের সাথে তাদের সম্পর্কের মান, এবং পারস্পরিক বোঝাপড়ার উপর নির্ভর করে। তাছাড়া স্বামী-স্ত্রী, ভাইবোন সব সম্পর্কই বিপদে নিজেদের ধৈর্য এবং সহনশীলতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অর্থাৎ, মহামারিকালে যাদের পারিবারিক বন্ধন যত দৃঢ়, তাদের মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখা ততোটাই সহজ।
একজন মানুষ যখন কোন কারণে বিষণ্ণ হয়, হতাশা গ্রস্ত হয়, তার সব থেকে বেশী প্রয়োজন মানসিক শক্তির জাগরণ। যদি তার মাঝে পুনরায় আত্মবিশ্বাস এবং মনে সাহস ফিরে আসে তাহলে বিষণ্ণতা, দুশ্চিন্তা, হতাশা সহ সব ধরণের বিপদ মোকাবেলা করা তার পক্ষে সহজ হয়ে যায়। আর মানসিক শক্তির এই জাগরণ করতে পারে কাছের মানুষেরা যাদের সাথে আমাদের আত্মার সম্পর্ক রয়েছে। তারা তাদের কথা এবং ভরসার মাধ্যমে আমাদের মাঝে হারিয়ে যাওয়া বিশ্বাস পুনরুদ্ধারে সহায়তা করে। আমাদের মনোবল বৃদ্ধি করে। তবে করোনা মহামারী আমাদের সম্পর্কের মাঝেও বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে কারণ এ সময় সহনশীল থাকা সব অন্যতম বড় একটি চ্যালেঞ্জ। কিন্তু একে অপরকে আমরা যদি দেখে না রাখি, একে অপরের মনের কথা না বুঝি তাহলে আমরা নিজেরাই সব থেকে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হবো। তাই করোনাকে হারাতে হলে আমাদের নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক আরও দৃঢ় করতে হবে যাতে করোনা আমাদের কাছেই পরাজিত হয়।
করোনা মহামারীর এই দুঃসময়ে মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পারিবারিক বন্ধনের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। করোনা কালে সংক্রমণ রুখতে শুধু ঘরে থাকাই যথেষ্ট নয়। বরং ঘরে থেকে মানসিক ভাবে ও শারীরিক ভাবে সুস্থ থাকাও প্রয়োজন। আর করোনায় প্রতিনিয়ত বেড়ে চলা মানসিক চাপ এবং উদ্বিগ্নতা আমাদের সেই আকাঙ্ক্ষিত শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা বজায় রাখার পথে মূল বাধা। এই সমস্যাকে দূর করতে আমাদের একে অপরকে সহায়তা করতে হবে, একে অপরের প্রতি সহনশীল থাকতে হবে এবং এই লক্ষ্যে নিজেদের মনস্তাত্ত্বিক বন্ধন আরও দৃঢ় করতে হবে।
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে