করোনা আমাদের জীবনের অন্যান্য দিকগুলোর মতো কর্মজীবনকেও অস্বাভাবিকভাবে বদলে দিয়েছে। কর্মজীবন নিয়ে মানসিক চাপ এখন প্রতিটি কর্মজীবী মানুষের জীবনের সাধারণ গল্প। এই মানসিক চাপ শুধু অতিরিক্ত কাজের চাপের কারণেই নয়, বরং বিবিধ কারণে সৃষ্টি হচ্ছে যা জীবনকে আরও দুর্বিষহ করে তুলেছে।
করোনা মহামারী থেকে সুরক্ষিত থাকার কারণে ঘরে থাকা এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ছাড়া তেমন কোন কার্যকরী উপায় এখনো আমাদের জানা নেই। ঘরের বাইরে স্বাভাবিকভাবে বের না হতে পারায় আমাদের দৈনন্দিন জীবনে নেমে এসেছে চরম বিশৃঙ্খলা। কর্মজীবী মানুষেরা বাইরে গিয়ে কাজ করতে পারছে না। অনেকে কর্মহীন হয়ে চরম অর্থনৈতিক কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। আবার অনেকে ঘরে থেকে কাজ করে যাওয়ার প্রয়াস করছে। কিন্তু ঘরে থেকে কাজ করতে গিয়ে তাকেও সম্মুখীন হতে হচ্ছে নানাবিধ সমস্যার। সাধারণভাবে আমরা ভেবে নেই যে শুধু মাত্র কাজ বেশী থাকলে বা অধিক সময় ধরে কাজ করলে সেটি আমাদের মানসিক চাপ বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সেটি সঠিক নয়। কর্মক্ষেত্রে যথাযথ সম্মান না পাওয়া, সঠিক পরিবেশের অভাব, অত্যধিক কাজের চাপ, অনৈতিকভাবে কাজ চাপিয়ে দেওয়া, সবার সাথে ভালো বোঝাপড়ার অভাব এবং অন্যান্যদের সাথে সদ্ভাবের অভাব কর্মক্ষেত্রে একজন মানুষকে ভীষণ সমস্যায় ফেলে দেয়। আর এসব সমস্যা তার মাঝে মানসিক চাপ সৃষ্টি করে। করোনা কালে এসব সমস্যা আরও ব্যপক মাত্রায় দেখা দিয়েছে এবং সব কিছুর মাঝে এতোটাই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে যে এর ফলে সৃষ্ট মানসিক চাপ বিষণ্ণতা এবং হতাশার জন্ম দিচ্ছে।
বর্তমান অবস্থায় অস্বাভাবিক পরিবেশকেই আমাদের স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিতে হচ্ছে। প্রতি দিনের সেই কর্ম ব্যস্ত জীবন আমরা ফিরে পেতে চাইছি। স্বাভাবিক কর্ম পরিবেশ চাইছি। কিন্তু তা সম্ভব হচ্ছেনা। আর এই অস্বাভাবিক অবস্থাই মূলত মহামারীর এই দুঃসময়ে কর্মজীবনে মানসিক চাপকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। এই মানসিক চাপ আমাদের কর্মক্ষমতাকে কমিয়ে দিচ্ছে এবং আমরা আমাদের কর্ম দক্ষতা প্রমানে ব্যর্থ হচ্ছি। তাই এই মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা অত্যন্ত জরুরী। কিছু কৌশল অবলম্বন করলে আমরা মহামারীর এই দুঃসময়েও কর্মজীবনে বাড়তে থাকা মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারব।
১) মানসিক চাপের কারণগুলো চিহ্নিত করাঃ
মহামারী কালে যেহেতু ঘরে থেকেই বা পরিবর্তিত পরিবেশেই আমাদের কাজ চালিয়ে যেতে হচ্ছে তাই এই পরিবেশ নিয়ে উৎকণ্ঠিত না হয়ে ঠাণ্ডা মাথায় ভাবতে হবে আমাদের প্রকৃতপক্ষে এই পরিবেশে কি কি সমস্যা হচ্ছে। আমাদের মন দিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে কি কি কারণ বাধা প্রদান করছে। সেসব কারণ চিহ্নিত করা গেলে সমস্যার সমাধান সহজ এবং দ্রুততর হবে।
২) অন্য কারও সহায়তা নেওয়াঃ
মহামারীর এই দুঃসময়ে কর্মজীবী একজন মানুষ সব থেকে বেশী যেটির অভাব বোধ করছে সেটি হল একটি সহায়ক ব্যবস্থার অনুপস্থিতি। স্বাভাবিক সময়ে কর্মক্ষেত্রে উৎপন্ন হওয়া সমস্যা গুলো নিয়ে সহকর্মীদের সাথে আলোচনার সুযোগ ছিল, যথাযথ কর্ম পরিবেশ ছিল। কিন্তু এই সময়ে ঘরে থেকে সেই কর্ম পরিবেশ পাওয়া যাচ্ছেনা এবং পরিবারের অন্যান্য দায়িত্ব পালন করে কাজের দিকে যথাযথ মনোযোগ দেওয়াও কঠিন হচ্ছে। কর্মজীবী নারীরা এই সমস্যা সব থেকে বেশী ভোগ করছে। এই সমস্যার সমাধান করতে বন্ধু বান্ধব ও সহকর্মীদের সাথে ভার্চুয়ালি যোগাযোগ রাখুন, সমস্যায় তাদের সাথে কথা বলুন। নিজের সমস্যা নিয়ে তাদের সাথে আলোচনা করলে মানসিকভাবে আপনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারবেন।
৩) কাজের সময়কে ঢেলে সাজানঃ
স্বাভাবিক সময়ে আমরা মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকি যে দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় আমাদের কর্মক্ষেত্রে থাকতে হবে। কিন্তু এই সময়ে আমরা অন্যান্য সময়ের মত স্বাভাবিকভাবে সেই কাজের সময়টি ঠিক রাখতে পারছিনা। পরিবার ও অন্যান্য কাজের মাঝে পেশাগত কাজকে ঠিক রাখতে গিয়ে মানসিকভাবে ধৈর্যহীন হয়ে পড়ছি। তাই এই সমস্যা দূর করতে আমাদের একটি এমন সময় নির্বাচন করতে যে সময়ে আমরা মনোযোগ দিয়ে কাজটি করতে পারবো। ধীর স্থির ভাবে চিন্তাভাবনা করে আমাদের সেই সময়টি নির্বাচন করতে হবে। এতে মানসিক চাপ অবশ্যই কমবে।
উপর্যুক্ত বিষয়গুলি খেয়াল রাখলে মহামারীকালীন এই অস্বাভাবিক পরিবেশেও মানসিক অশান্তি এড়িয়ে পেশাগত কাজে দক্ষতার পরিচয় দেওয়া সহজ হবে। মানসিক চাপ কমবে এবং কর্মক্ষেত্রে সফলতা বজায় থাকবে।
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে