হতাশা এবং বিষণ্ণতা কি কোভিড-১৯ থেকেও ভয়ানক ফলাফল নিয়ে আসতে পারে?

0
76
হতাশা এবং বিষণ্ণতা কি কোভিড-১৯ থেকেও ভয়ানক ফলাফল নিয়ে আসতে পারে?
কোভিড-১৯ থেকে রক্ষা পাবার জন্য কার্যকরী কোন প্রতিষেধক এখনো আবিষ্কৃত না হওয়ায় সবার মাঝেই নিজের ও পরিবারের সদস্যদের সুরক্ষা নিয়ে চরম দুশ্চিন্তা এবং হতাশা কাজ করছে। তাই ঘরে বসেও অনেকে নানা ধরণের মানসিক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। কোভিড-১৯ থেকেও এই সমস্যা গুলি অনেকাংশেই বেশী ক্ষতি সাধন করছে।

কোভিড-১৯ থেকে সুরক্ষিত থাকতে আমাদের ঘরে থাকতে বলা হয়েছে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে বলা হয়েছে। এটাই এখন পর্যন্ত কোভিড-১৯ থেকে সুরক্ষিত থাকার অন্যতম প্রধান উপায়। দীর্ঘ দিন ধরে ঘরে আবদ্ধ থাকার ফলে কোভিড-১৯ থেকে তো সুরক্ষিত থাকা সম্ভব হচ্ছে কিন্তু এর ফলে সাধারণ মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য ভীষণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সামাজিক ভাবে বিচ্ছিন্ন থাকার ফলে  সবার মাঝেই কাজ করছে অবসাদ এবং বিরক্তি। স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যহত হচ্ছে, কর্মহীন হয়ে মানুষ চরম অর্থনৈতিক সমস্যার মধ্যে রয়েছে। এগুলোও হতাশা, দুশ্চিন্তা এবং বিষণ্ণতার অন্যতম প্রধান কারণ। এসব সমস্যায় জর্জরিত হয়ে অনেকে আত্মহননের পথও বেছে নিচ্ছে।

কর্মহীন মানুষের সাথে সাথে যারা এসময় বভিন্ন ধরণের কাজের সাথে যুক্ত যেমন, ডাক্তার, নার্স, ব্যাংকার, সরকারী চাকুরীজীবী, পুলিশ ইত্যাদি শ্রেণী পেশার লোকজন প্রতি দিনই বাইরে বের হচ্ছেন সেবামূলক বিভিন্ন কাজের জন্য। তাদের মানসিক স্থিতিও অত্যন্ত সংকটজনক অবস্থায় রয়েছে। যেহেতু কোভিড-১৯ মহামারীর জন্য বাইরে না যাওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবং বাইরে গেলে সংক্রমণের সম্ভাবনা অত্যন্ত প্রবল তাই মহামারীর কবলে পড়ার আশঙ্কায় সবার মাঝেই চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। নিজের ও পরিবারের সংক্রমণের ভয়ে প্রতিটা দিন কাটছে অত্যন্ত দুশ্চিন্তায়।

তাছাড়া যারা বয়স্ক তাদের জন্য এ সময়ে সব থেকে বেশী যে বিষয়টি মানসিক সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সেটি হল একাকীত্ব। বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই এবং একই সাথে ঘরের মাঝে আবদ্ধ থাকার কারণে তাদের উপর এর অত্যন্ত বিরূপ প্রভাব পড়ছে। করোনা ঝুঁকি তাদের মাঝে বেশী থাকায় দুশ্চিন্তা এবং উৎকণ্ঠায় শারীরিক বিভিন্ন সমস্যাও উদ্ভূত হচ্ছে। একই সাথে শিশুদের মাঝেও নানান রকম মানসিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে। শিশুরা খেলাধুলা সহ অন্যান্য কাজে বাইরে না যেতে পেরে এবং সারাক্ষণ ঘরে থেকে ফোন ও টিভি দেখার ফলে নানা রকম শারীরিক ও মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছে।

বিশ্বে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু এই হার মানসিক সমস্যায় ভোগা মানুষের তুলনায় অনেক কম। তাছাড়া করোনায় সুস্থতার হারও নেহাত কম নয় কিন্তু এসব মানসিক সমস্যা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই থেকে যাচ্ছে চিকিৎসার বাইরে। তাই ব্যক্তির শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর ফেলছে এক সুদীর্ঘ প্রভাব। যা ভালোভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে করোনা থেকেও অধিক ক্ষতির কারণ হয়ে দেখা দিচ্ছে।

প্রায় সব শ্রেণী, পেশা এবং বয়সের মানুষ মানসিক সমস্যায় ভুগছেন যার নিরাময় অত্যন্ত জরুরী। আমরা শারীরিক সমস্যাকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছি কিন্তু মানসিক স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দিচ্ছিনা। এটা মোটেও সমীচীন নয়। মানসিক সমস্যা বিভিন্ন ধরণের শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে এবং মানসিক স্বাথ্য ভাল থাকলেই একমাত্র শারীরিক ভাবে সুস্থ থাকা যায়।

এসব দিক বিবেচনা করলে বলাই যায় বিশ্ব এখন করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা থেকে মানসিক সমস্যায় ভোগা রোগীর সংখ্যা বহুগুণ এবং এই সমস্যা অধিকতর ক্ষেত্রেই থাকছে সবার আড়ালে যা এক সুদূরপ্রসারী সমস্যা তৈরি করতে যাচ্ছে। তাই আমাদের অবশ্যই করোনা মোকাবেলার পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের দিকেও মনযোগী হতে হবে এবং হতাশা, আশঙ্কা, ভয় এবং বিষণ্ণতা সহ এসব মানসিক সমস্যার অত্যন্ত দ্রুত নিরাময়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

করোনায় স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে

Previous articleশিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নের সহায়ক কৌশল
Next articleমানসিক চাপ (স্ট্রেস) কি মাদকাসক্তির কারণ?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here