মহামারীর এই দুঃসময়ে মানসিক অশান্তি এবং দুশ্চিন্তা কমাতে সহায়তা করতে সক্ষম ঘরে থাকা পোষা প্রাণী। মনস্তত্ত্ব বিদ্যা এমনটাই বলছে।
মহামারীর এই দুঃসময়ে বাড়তে থাকা একাকীত্ব, দুশ্চিন্তা, বিষণ্ণতা এবং অবসাদ মোকাবেলায় আমাদের খুব করে সামাজিক সহায়তা প্রয়োজন। এ সময়ে সামাজিক সহায়তার সব থেকে বড় উৎস হল আমাদের পরিবার এবং বন্ধু বান্ধব। এছাড়াও এর সাথে মহামারীর এই দুঃসময়ে আমাদের সহায়ক হিসেবে মনস্তাত্ত্বিক বিভিন্ন গবেষণা যার কথা বিশেষ ভাবে উল্লেখ করছে সেটি হল আমাদের সার্বক্ষণিক সাথী, আমাদের ঘরের পোষা প্রাণী। অধিকাংশ মানুষ যারা বিভিন্ন রকমের প্রাণী লালন পালন করেন তারা এসব প্রানিকে নিজেদের পরিবারের একজন সদস্য বলেই মনে করেন। অন্যান্য সদস্যের মতোই তার দেখাশোনা করেন, যত্ন করেন। এসব পোষা প্রাণীর সাথে তাদের যেন আত্মিক সম্পর্ক থাকে। তাই মহামারীর এই দুঃসময়ে পোষা প্রাণী মানসিক সাপোর্ট প্রদান করায় খুব সহযোগী ভূমিকা রাখতে সক্ষম।
মহামারী সংক্রমণ রুখতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার পাশাপাশি আমাদেরকে ঘরে থাকতে বলা হয়েছে। এক টানা এতো দিন ধরে ঘরের মধ্যে থাকা এবং বন্ধু বান্ধব সহ অন্যান্য সামাজিক সম্বন্ধীয় কারও সাথে দেখা সাক্ষাৎ না হওয়ায় মানসিক ভাবে অনেকেই ভেঙ্গে পড়েছে। এ সময়ে করোনা আতঙ্কের সাথে সাথে সবার মানসিক অবস্থার উপর যে বিষয়টি সব থেকে বেশী প্রভাব ফেলছে সেটি হল একাকীত্ব। সব বয়সের মানুষের মাঝেই এই একাকীত্ব চরমভাবে বিস্তার লাভ করেছে যা করোনা আবহে মানুষের জীবন যাপনকে করে তুলেছে দুর্বিষহ। কিন্তু আপনি যদি একজন পশু প্রেমী এবং পোষা প্রাণীর মালিক হয়ে থাকেন তাহলে আপনার জন্য একাকীত্ব, দুশ্চিন্তা এই শব্দ গুলি হয়তো এতোটাও ভয়ঙ্কর কিছু নয়। কারণ করোনা আবহে আপনার পোষা প্রাণীটি সর্ব প্রকারে আপনার সেই একাকীত্বকে দূর করেছে। আর একাকীত্ব থেকে মুক্ত থাকায় করোনা নিয়ে মানসিক চাপ এবং দুশ্চিন্তাও আপনাকে ততোটা আক্রান্ত করতে পারেনি।
মনস্তত্ত্ববিদদের মতে, পোষা প্রাণী এবং তার মালিকের মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক বন্ধন খুব্ দৃঢ় হয় এবং সেই বন্ধন এক জন মানুষের মানসিক অবস্থার উপর অত্যন্ত ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। এর একটি বড় কারণ হল, পশু পাখি সমালোচক হয়না। আপনি যেমন ভাবে রাখবেন বা নিজে যেমন ভাবে থাকবেন সব রকম ভাবেই আপনার পোষা প্রাণীটি আপনাকে গ্রহণ করবে এবং ভালবাসবে। পোষা প্রাণী অত্যন্ত সহজ, সহায়ক, নির্ভরযোগ্য হয় এবং সব রকম সমালোচনা, আদেশ উপদেশ ও সংঘাত মুক্ত হয়। অন্যান্য মনুষ্য প্রজাতির সম্পর্কের ক্ষেত্রে যেটা কখনোই হয়না। তাছাড়া, তারা আমাদের নিঃশর্ত ভাবে ভালবাসে এবং তাদের জন্যই আমরা নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ, আবশ্যকীয় এবং প্রয়োজনীয় মনে করার ইতিবাচক মানসিক শক্তি পাই। তারা আমাদেরকে নিজেদের প্রতি ভালবাসা পূর্ণ মানসিকতা সৃষ্টিতে সহায়তা করে। তাই পোষা প্রাণীর সাথে তার মালিকের সম্পর্ক অত্যন্ত আস্থা ভাজন এবং আবেগময় হয়ে থাকে। তাই পোষা প্রাণীর সাথে তার মালিকের সম্পর্ক একজন মানুষের জীবনের সব থেকে সুন্দর সম্পর্ক গুলোর মধ্যে একটি। তাই, করোনা আবহে অন্য সবার থেকে বহু দিন দূরে থাকলেও যদি আপনি একজন পোষা প্রাণীর মালিক হন, তবে আপনাকে সেটি খুব বেশী প্রভাবিত করতে পারেনি এবং করোনা নিয়ে আপনার দুশ্চিন্তা করার মত ততোটা মানসিক সমস্যাও নেই বলেই ধরে নেওয়া যায়।
করোনা আবহে সারা দিন ঘরে থাকায় আমাদের কাজের পরিমাণ বেশ কমে গেছে। সারা দিন ঘরে থেকে খাওয়া, ঘুম এসব ছাড়া আর কিছু যেন করা হয়ে ওঠেনা। কিন্তু যদি ঘরে একটি পোষা প্রাণী থাকে তাহলে এই অবসাদের সময়টাও কিন্তু বেশ ভালোভাবে কাটতে পারে। খেলাধুলা, হাসি , মজায় আপনার সারা দিন বেশ ভালো ভাবেই কেটে যেতে পারে। ঘরে পোষ্য থাকলে আপনি করোনা মহামারী নিয়ে দুশ্চিন্তা করার সময়ই হয়তো পাবেন না। তাছাড়া মানসিক চাপ মুক্ত থাকায় রক্ত চাপ সহ অন্যান্য শারীরিক সমস্যা গুলো থেকেও আপনি দূরে থাকতে পারবেন।
করোনা আবহে ঘরের পোষা প্রাণীটি ঠিক সুহৃদ বন্ধুর মতোই আমাদের পাশে থাকতে সক্ষম। সহযোগী কিংবা সহভাগী, সর্ব প্রকারেই আমাদের মধ্য থেকে সব রকম মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা দূর করতে সক্ষম। করোনা মহামারীর এই প্রবল ঝড়ের মাঝে পোষা পর্ণীটিই হয়ে উঠতে পারে আমাদের মনে আশার রঙধনু।
সূত্র: https://www.psychologytoday.com/intl/blog/presence-mind/202009/is-your-pet-pandemic-stress-buster
অনুবাদ করেছেন: প্রত্যাশা বিশ্বাস প্রজ্ঞা
করোনায় স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে