নার্সিসিজম’ সম্পর্কে এখন অনেকেই বেশ অবগত। অন্তর্জালে এ বিষয়ক তত্ত্ব ও তথ্যের প্রাচুর্য আপনার আগ্রহকে উষ্কে দেবার জন্য যথেষ্ট। মনোবৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী এটি এক ধরনের অসুস্থতা, যার কিছু সুস্পষ্ট লক্ষণ ব্যক্তির আচরণের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। তবে আচরণগত এসব বৈশিষ্ট্যের বেশ কয়েকটি আমাদের প্রত্যেকের মাঝেই আছে। কিন্তু সেটা রোগ লক্ষণ কিনা তা নির্ভর করে এসবের মাত্রার উপর। তার আগে নার্সিসিজম আসলে কী সেটা জানা জরুরী।
নার্সিসিজম-এর মানে নিজের মধ্যে একান্ত অভিনিবিষ্টটা, নিজের সৌন্দর্য আর সক্ষমতার অতিশায়িত অনুভূতি যা নিজের প্রতি নিমগ্নতা তৈরি করে। এক কথায় একে অতিশয় আত্নপ্রেম বলা যেতে পারে।
বইয়ের ভাষায় নার্সিসিজম রোগের নাম নার্সিসিস্টিক পারসোনালিটি ডিজওর্ডার’ বা ‘এনপিডি’। বাংলায় বলা যেতে পারে ‘অতি আত্ম-প্রেম জনিত ব্যক্তিক আচরণ বিচ্যুতি’। এটিকে শুধু রোগ নয়, সামাজিক বা সাংস্কৃতিক সমস্যা হিসেবেও বিবেচনা করা হয়। মানুষের প্রধান তিন ধরণের নেতিবাচক ব্যক্তিত্বের অন্যতম হলো এই নার্সিসিজম। অন্য দুটি ধরণ হলো ম্যাকিয়াভিলিয়ানিজ্ম এবং সাইকোপ্যাথি। তবে নিজের প্রতি সম্মানবোধ বা নিজের পারদর্শিতার উপর আস্থা কিংবা নিজের অর্জনের প্রতি ভালোবাসাজনিত সাধারণ যে অহম, যা প্রত্যেকেরই থাকে এবং থাকা উচিৎ, তা কিন্তু নার্সিসিজম তথা এনপিডি নয়। এই অক্ষতিকর ব্যক্তিত্ববোধকে সিগমুন্ড ফ্রয়েড নাম দিয়েছেন প্রাইমারি নার্সিসিজম। অবশ্য বিংশ শতাব্দীর শেষদিকে এটি ‘হ্যাল্দি নার্সিসিজম’ অর্থাৎ ‘স্বাস্থ্যকর আত্ন-প্রেম’ নামে পরিচিত হতে শুরু করে।
নার্সিসিস্টিক পারসোনালিটি ডিজওর্ডার (এনপিডি)-এ আক্রান্তদের বৈশিষ্ট্য:
- আন্তঃব্যক্তিক যোগাযোগ/সম্পর্কের ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট আত্মকেন্দ্রিকতা
- টেকসই সাবলীল সম্পর্কের ক্ষেত্রে সমস্যা
- মনস্তাত্ত্বিক সচেতনতার অভাব
- অন্যের অনুভূতির বিষয়ে যৌক্তিক ধারণার অভাব
- নিজেকে অন্যের তুলনায় সর্বদা উচ্চতর অবস্থানে দেখা
- যেকোনো অবমাননা বা কল্পিত অবমাননার প্রতি অতি সংবেদনশীলতা
- অপরাধবোধে নয়, বরং লজ্জায় বেশি কাতরতা
- অসৌজন্যমূলক এবং অবন্ধুসুলভ দেহভঙ্গি
- নিজের প্রশংসাকারীদেরকে তোষামোদ করা
- নিজের সমালোচকদেরকে ঘৃণা করা
- পূর্বাপর না ভেবে অন্যদেরকে দিয়ে নিজের কাজ করিয়ে নেয়া
- আসলে যতোটা না, তার চেয়ে নিজেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভাবা
- আত্মম্ভরিতা করা (সুক্ষ্ণভাবে কিন্তু প্রতিনিয়ত) এবং নিজের অর্জনকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে উপস্থাপন করা
- নিজেকে বহু বিষয়ের পণ্ডিত মনে করা
- অন্যের দৃষ্টিকোণে বাস্তব পৃথিবী কেমন তা অনুধাবনে অসামর্থ্য
- অনুতাপ এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশে অস্বীকৃতি/অনীহা
এদিকে স্বনামধন্য মার্কিন মনোচিকিৎসক এবং মনোবিশ্লেষক ডক্টর স্যান্ডি হচ্কিস-এর মতে একজন নার্সিসিস্ট-এর সাত ধরণের আচরণগত বৈশিষ্ট্য থাকতে পারে, যেগুলোকে তিনি ‘ডেড্লি সিন্স’ বা ভয়াবহ পাপ নামে অভিহিত করেছেন। এগুলো হলো- লজ্জাশূণ্যতা, অধিভৌতিক ভাবনা, ঔদ্ধত্য, হিংসা, বশ্যতা প্রাপ্তির উচ্চাভিলাষ, ঠকবাজি, সীমাহীন অধিকারবোধ।
সূত্র: বিবিসি
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে চিকিৎসকের সরাসরি পরামর্শ পেতে দেখুন: মনের খবর ব্লগ
করোনায় মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক টেলিসেবা পেতে দেখুন: সার্বক্ষণিক যোগাযোগ
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
করোনায় সচেতনতা বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও বার্তা দেখুন: সুস্থ থাকুন সর্তক থাকুন