ব্যক্তিত্ব উন্নয়ন এর জন্য সহায়ক চর্চা

0
136
ব্যক্তিত্ব উন্নয়ন

আমরা সবাই কম বেশি খুব ব্যস্ত জীবন কাটাই, হয় পড়াশোনা, কর্মক্ষেত্রে অথবা ব্যক্তিগত জীবনে। প্রতিদিন আমাদেরকে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয় যেখানে আমরা কখনও জয়ী হই আবার কখনও পরাজিত হই। ব্যস্ত এ জীবনে আমরা প্রায়ই ভুলে যাই নিজের প্রতি খেয়াল রাখার প্রয়োজনীয়তা। আমরা ভুলে যাই, ব্যস্ত জীবনকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে আমাদেরকে মানসিক ও শারীরিক উভয় ক্ষেত্রেই সুস্থ থাকতে হবে।
হঠাৎ করে ভাবলে, নিজের খেয়াল রাখার জন্য কোন কিছু করা অনেক কঠিন কাজ মনে হতে পারে কিন্তু বাস্তবে, এ কাজ খুবই সহজ। তবে তা সম্পন্ন করার জন্য দরকার, ধৈর্য, প্রতিশ্রুতি, নিজের প্রতি ভালোবাসা, মনোবল এবং অনুপ্রেরণা।

বর্তমান জীবনে যখন সবাই একই দৌড়ে ব্যস্ত সফলতা অর্জনের জন্য তখন, নিজের সার্বিক উন্নয়নের মাধ্যমেই আত্মবিশ্বাস, সচেতনতা, সন্তুষ্টি এবং স্বমূল্য অর্জন করা সম্ভব। আসুন জেনে নেওয়া যাক ব্যক্তিত্ব উন্নয়ন এর কিছু উপায়:

নিজের বিছানা নিজে গোছানোঃ 
সকালবেলা সাধারনত একটি ব্যস্ত এবং গুরুত্বপূর্ণ সময় সবার জন্য কারণ সকালবেলাই সবাই নিজেকে তৈরি করে নেয় সারাদিনের সব কাজ সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য। যদি আমরা প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে নিজের বিছানা নিজে গুছিয়ে নেই তাহলে এই ছোট কাজটি আমাদের মানসিক উন্নয়নে বিশাল ভুমিকা পালন করে। প্রথমত, বিছানা গুছিয়ে ফেলার কারনে বাসার একটি কাজ কমে যায় এবং আমাদের ব্রেইন এই কাজটিকে গ্রহণ করে সকালবেলার সর্বপ্রথম সফল কাজ হিসেবে যা দিনের পরবর্তী কাজগুলোর জন্য আমাদের ব্রেইন এবং মন দুটিকে অত্যন্ত সক্রিয় রাখে। এছাড়া, বিছানা গুছিয়ে নিলে মনের মধ্যে নিজ ঘর গোছানো এবং পরিষ্কার রাখার প্রতি এক প্রকার দায়িত্ববোধ গড়ে উঠে। প্রতিদিন সকালে বিছানা গুছিয়ে নেয়া অনেক ছোট একটা কাজ হলেও এর পজিটিভ প্রভাব অনেক।

মুখে সবসময় হাসি ধরে রাখাঃ
হাসি-খুশি মুখ এবং কারও প্রতি বিনয় সহকারে হাসি দেয়া পজিটিভিজম ছড়িয়ে দেয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পথ। আমরা যখন হাসি তখন আমাদের ফেশিয়াল মাসেলে যতগুলো নার্ভ আছে তা একবার করে মুভ করে। এই মুভমেন্ট এর কারনে আমাদের নিউরোট্রান্সমিটার আরও সক্রিয় হয়ে পড়ে যা আমাদের ব্রেইনে সেরোটোনিন এবং ডোপামিনের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় এবং আমাদের ব্রেইন কে হাসি খুশি, পজিটিভ থাকার জন্য তাড়না দেয়। প্রতিদিনের ব্যস্ততাময় জীবন এবং বাঁধা বিপদে পজিটিভ থাকার জন্য এমন সক্রিয় নিউরোট্রান্সমিটারের প্রয়োজনীয়তা অনেক।

পড়াপড়া এবং অনেক অনেক বই পড়াঃ
পৃথিবী যতই টেকনোলজি এবং সোশ্যাল মিডিয়া দিয়ে উন্নত হয়ে যাক না কেন, বই পড়ার কোন বিকল্প নেই। বই মানুষের যে কোন ধরনের ভাবনা, ইচ্ছা এবং অনিচ্ছা বোঝার সেরা উপায়। বই পড়ার মাধ্যমে একজন মানুষ তার গভীর থেকে গভীরতর ভাবনা, কল্পনা সম্পর্কে জানতে পারে, নিজেকে ভাল করে বুঝতে পারে। যে কোন গল্পের বই, আর্টিকেল, প্রবন্ধ, লেখা স্পিচ, ইন্সপিরেশনাল লেখা মানুষের মানসিক বিকাশের জন্য অতি আবশ্যক। এগুলো মানুষকে সাহায্য করে নিজের মধ্যে পজিটিভিজম গড়ে তুলতে এবং নিজেকে যে কোন হার-জিতের জন্য প্রস্তুত রাখতে। এমনকি, এগুলো একজন মানুষকে সফলতার শিখরে পৌঁছে যেয়েও বিনয়ী থাকা শেখায়।

সবসচেতনতা অনুশীলনঃ
সব-সচেতনতা বলতে নিজেকে চেনা বোঝায়। অনেক সময় একজন মানুষের সারাজীবন লেগে যায় নিজেকে চিনতে যেয়ে আবার অনেক সময় অনেক সহজেই একজন মানুষ নিজেকে চিনে ফেলে এবং সে অনুযায়ী নিজের জীবন সাজিয়ে নেয়। সময় যেমন থেমে থাকে না, তেমনি, সময়ের সাথে সাথে মানুষ ও থেমে থাকে না, বরং এগিয়ে যায়, পরিবর্তিত হয়, বড় হয়ে উঠে। এর মাঝে খুব প্রয়োজন হয়ে পড়ে একজন মানুষের নিজেকে চেনা। নিজেকে চেনার মাধ্যমেই একজন মানুষ হাজার পরিবর্তনের মাঝেও নিজের অস্তিত্বে অটল থাকে।

শারীরিক এবং মানসিক পরিশ্রমে নিয়োজিত হওয়াঃ
সাধারনত আমরা তখনি শারীরিক পরিশ্রমের কথা ভাবি যখন আমরা অনেক মোটা হয়ে যাই অথবা আমাদের শারীরিক কোন ব্যধি দেখা দেয়। কিন্তু, শারীরিক পরিশ্রমের গুরুত্ব শুধু এই দুই জায়গাতেই সীমিত নয়। নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম একজন মানুষের শারীরিক কর্মক্ষমতা বাঢ়ীয়ে তোলে। শুধু জিম নয়, হাল্কা হাঁটা, দৌড়ানো, ফ্রি-হ্যান্ড এক্সারসাইজ- এসবের মাধ্যমে শারীরিক কর্মক্ষমতা বাড়ানো যায়। এতে করে অনেক শারীরিক ব্যধি থেকে শরীরকে যেমন সুস্থ রাখা যায় তেমনি, প্রতিদিনের সব কাজ করার উদ্দীপনাও বেড়ে যায়।
মানসিক পরিশ্রমের কথা আমরা সাধারনত একেবারেই ভাবি না, হয়ত অনেকে জানিও না কিভাবে মানসিক পরিশ্রমের মাধ্যমে মানসিক সুস্থতা এবং স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি করা যায়। বিভিন্ন ধরনের বোর্ড গেম- মনোপলি, কোয়েস্ট, পাজেল গেম, আই-কিউ গেম  ইত্যাদি এর মাধ্যমে মানসিক কর্মক্ষমতা প্রবলভাবে বৃদ্ধি সম্ভব।

দৈনিক নিজের জন্য কিছু সময় বরাদ্দ রাখা এবং সে সময়ে শুধু নিজের ব্যক্তিত্ব উন্নয়ন এর জন্য মনোনিবেশ করতে পারলেই এই ব্যস্ত এবং মডার্ন যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলা সম্ভব।

মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে চিকিৎসকের সরাসরি পরামর্শ পেতে দেখুন: মনের খবর ব্লগ
করোনায় মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক টেলিসেবা পেতে দেখুন: সার্বক্ষণিক যোগাযোগ
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
করোনায় সচেতনতা বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও বার্তা দেখুন: সুস্থ থাকুন সর্তক থাকুন

Previous articleকাউন্সেলিং কী? কখন কাউন্সেলিং লাগে?
Next articleকরোনা মহামারীর এই দুঃসময়ে শিশুদের মনকে ভয়মুক্ত রাখার কিছু কৌশল

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here