একাকী জীবন যাপন অনেকের ক্ষেত্রেই আত্মহননের অন্যতম প্রধান কারণ। আর করোনা মহামারীর এই দুঃসময়ে যেখানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, অন্যান্যদের থেকে দূরে, গৃহবন্দী থাকাই একমাত্র কার্যকরী সমাধান এবং করণীয়, সেখানে এই অবস্থায় মানুষের মাঝে আত্মহত্যা প্রবণতা অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে। এই অবস্থায় একমাত্র মানসিক সহায়তাই তাদের মধ্য থেকে এই প্রবণতা হ্রাস করতে সক্ষম।
একজন আত্মহত্যা প্রবণ মানুষের মনের ভার দূর করতে পারলে, তার মানসিক স্থিতি বুঝে তার সেই মনঃকষ্টের নিবারণ করতে পারলে এবং আত্মহত্যার বিষয়ে তার মানসিকতা বদলাতে পারলে তার মন থেকে আত্মহত্যার ভাবনা দূর করা সম্ভব। তাই বলা যায় আত্মহত্যা প্রবণতা রুখতে যা কিছু করণীয় তার অধিকাংশই মনস্তাত্ত্বিক। আর এই কোভিড-১৯ মহামারীর সময় মানসিক সমস্যা এখন প্রতি ঘরে ঘরে অত্যন্ত পরিচিত এক সমস্যা হয়ে উঠেছে। তাই অন্যান্য মানসিক সমস্যার সাথে আত্মহত্যা প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
আত্মহত্যা প্রবণতা রুখতে করণীয় সম্পর্কে বিভিন্ন গবেষণা এবং সমীক্ষা থেকে জানা যায় একজন আত্মহত্যা প্রবণ ব্যক্তি চরম মানসিক অসন্তোষ, পীড়া এবং বিষণ্ণতার মধ্যে জীবন যাপন করেন। ব্যক্তিগত, সামাজিক বা অর্থনৈতিক, এই উদ্বেগ এবং মানসিক চাপ বিভিন্ন কারণে হতে পারে। অনেকের ক্ষেত্রেই নিজের মনের কথা বা বিষণ্ণতার কারণ কাউকে বলতে না পারা এবং মানসিক দিক থেকে চরমভাবে ভেঙ্গে পড়ার কারণেই তারা আত্মঘাতী হন। কিন্তু যদি মানসিকভাবে তাদের একটু ভরসা, একটু সহমর্মিতা প্রদান করা যায় তাহলে অনেকাংশেই তাদের মাঝে এই প্রবণতা হ্রাস পাবে।
সামাজিক ভাবে আমাদেরকে আত্মহত্যা প্রবণ ব্যক্তিদের পাশে দাঁড়ানো প্রয়োজন। এক্ষেত্রে অযথা কারও সাথে খারাপ ব্যবহার না করা, বিপদে অন্যের পাশে দাঁড়ানো, ভাল পরামর্শ প্রদান ইত্যাদি কাজ গুলো আমাদের করতে হবে। অনেকেই নিজের মনের কথা বা সমস্যার কথা সহজে প্রকাশ করতে চায়না বা বলতে পারেনা। তাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা অত্যধিক মাত্রায় দেখা যায়। তাই আমাদের সবারই একে অন্যের প্রতি সহমর্মী হওয়া দরকার। এতে অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হবে।
আত্মহত্যা প্রতি দিন বিশ্বব্যাপী হাজার হাজার মৃত্যুর অন্যতম প্রধান একটি কারণ। এই প্রবণতা বা এই মানসিকতা প্রায় সব বয়সী মানুষের মাঝেই দেখতে পাওয়া যায়। অধিকাংশ আত্মহত্যা করা ব্যক্তিদের জীবন বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় তারা অত্যন্ত তীব্র মানসিক পীড়ার মধ্য দিয়ে জীবন অতিবাহিত করছিলেন। আর এই কষ্ট নিবারণের একমাত্র সমাধান হিসেবে তারা আত্মহননের পথকেই বেছে নিতে বাধ্য হয়েছেন।
কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু, কর্মহীনতা, অসহায়ত্ব, দুশ্চিন্তা, হতাশা, দীর্ঘ দিন ধরে সামাজিক ও স্বাভাবিক জীবন থেকে বিচ্ছন্ন থাকা ইত্যাদি মানুষের মাঝে মানসিক চাপ বৃদ্ধি করেছে। এই বাড়তে থাকা মানসিক চাপ থেকে বিষণ্ণতা এবং হতাশা এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যেখানে এর সমাধান হিসেবে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন অনেকে। এতে ঐ ব্যক্তির পরিবার, কাছের মানুষের অপূরণীয় ক্ষতির সাথে সাথে সমাজ ও রাষ্ট্রের ও অপূরণীয় ক্ষতি সাধিত হচ্ছে।
এই সময়ে আত্মহত্যা রুখতে তাই প্রথম করনীয় হল এটি নিয়ে খোলামেলা কথা বলা। মানসিক সমস্যায় থাকা ব্যক্তিদের সাথে কথা বলা, তাদের প্রশ্ন করা, তাদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়া এবং সার্বিক মনস্তাত্ত্বিক মনিটরিং এর মাধ্যমে তাদের মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। সেই সব ব্যক্তিদের যারা আত্মহত্যা প্রবণ তাদের চিহ্নিত করে অত্যধিক গুরুত্ব দিতে হবে। তাদের একাকীত্ব দূর করার চেষ্টা করতে হবে। আমাদের বন্ধু, আমাদের প্রতিবেশী কিংবা আমাদের পরিচিত, সবার সাথেই সদ্ভাব বজায় রাখতে হবে। তাদের বিশ্বাস অর্জন করে মানসিকভাবে উৎফুল্ল করতে হবে এবং বাঁচার ইচ্ছা এবং নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করতে হবে।
সুস্থভাবে বাঁচার ইচ্ছা সবারই থাকে। কিন্তু অনেকের মানসিক শক্তি এতোটা থাকেনা যে জীবনের সব সমস্যার সমাধান করে ফেলতে পারে বা ধৈর্যের সাথে মোকাবেলা করতে পারে। কোভিড-১৯ আমাদের মাঝে এক চরম একাকীত্বের সৃষ্টি করেছে। এ সময়ে আমাদের একে অপরের পাশে থাকতে হবে। সবার মানসিক অবস্থার খোঁজ খবর নিয়ে একে অপরের পাশে দাঁড়াতে হবে। তাহলেই আত্মহত্যার মত চরম পদক্ষেপ থেকে আমরা অনেক প্রতিভাবান প্রাণ অকালে ঝরে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে পারব।
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে চিকিৎসকের সরাসরি পরামর্শ পেতে দেখুন: মনের খবর ব্লগ
করোনায় মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক টেলিসেবা পেতে দেখুন: সার্বক্ষণিক যোগাযোগ
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
করোনায় সচেতনতা বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও বার্তা দেখুন: সুস্থ থাকুন সর্তক থাকুন