কোভিড-১৯ সংক্রান্ত মানসিক স্বাস্থ্য জটিলতা এবং আমাদের ভালো থাকা

0
75
কোভিড-১৯

কোভিড-১৯ মহামারী যে শুধু শারীরিক ভাবেই আমাদের ক্ষতি করছে বা শারীরিক সংক্রমণের জন্য দায়ী সেটি নয় বরং ভালো করে লক্ষ করলে দেখা যাবে এই মহামারী আমাদের অনেক রকম মানসিক জটিলতাও সৃষ্টি করছে। আর ভালো থাকতে, সুস্থ থাকতে শুধু কোভিড-১৯ নয় বরং এগুলোকেও আমাদের মোকাবেলা করতে হবে।

পৃথিবীব্যাপী করোনা ভাইরাস তার ধ্বংসলীলা চালাচ্ছে। প্রতি দিন লক্ষ লক্ষ মানুষ কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হচ্ছে এবং অসংখ্য লোক মৃত্যুবরণ ও করছে। এর পাশাপাশি যদি আমরা মানসিক জটিলতায় ভোগা মানুষদের দিকে তাকাই তাহলে দেখবো মানুষের মাঝে করোনা সংক্রমণের সাথে সাথে বিভিন্ন মানসিক জটিলতায় আক্রান্ত হওয়ার হার ও প্রচুর পরিমাণে বাড়ছে। কোভিড-১৯এ আক্রান্ত হওয়ার ভয়, লকডাউনের ফলে উৎপন্ন হওয়া একাকীত্ব, অর্থনৈতিক সমস্যা ইত্যাদি একত্রে আমাদের বিভিন্ন মানসিক জটিলতা সৃষ্টি করছে।

বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে কিভাবে কোভিড-১৯ মানুষের মাঝে বিভিন্ন মানসিক স্বাস্থ্য ঝুঁকি সৃষ্টি করছে। যেমন, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীদের মাঝে এই মহামারী হতাশা এবং উদ্বিগ্নতা বৃদ্ধি করেছে যা তাদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান একাকীত্ব ও মানসিক চাপের সৃষ্টি করছে। আবার অন্যান্য অনেক গবেষণায় দেখা গেছে সাধারণ জনগণের মাঝেও উদ্বেগ এবং বিষণ্ণতার হার দিন দিন বাড়ছে। তাছাড়া যারা অন্যান্য বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন কোভিড-১৯ মহামারীর সময়ে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যও বিভিন্ন প্রতিকূলতার সম্মুখীন হচ্ছে।

আবার যারা আমাদের সামনের সারির স্বেচ্ছাসেবক, যেমন চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীগণ যারা সামনে থেকে আমাদের কোভিড-১৯ সংক্রান্ত চিকিৎসা সেবা প্রদান করে চলেছেন তাদের মাঝেও উল্লেখযোগ্যভাবে  ঊর্ধ্বমুখী মানসিক স্বাস্থ্য জটিলতা যেমন, উদ্বেগ, নিদ্রাহীনতা, বিষণ্ণতা এবং মর্মপীড়া ইত্যাদি তীব্র মাত্রায় দেখা দিচ্ছে।

আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত করোনা প্রতিরোধে তেমন কোন কার্যকরী প্রতিষেধক নেই তাই করোনা মোকাবেলায় এখনো আমরা অনেকটাই অসহায়। কিন্তু আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার সুযোগ আমাদের হাতেই রয়েছে। আমরা চেষ্টা করলেই রাতারাতি হয়তো করোনা মুক্ত হয়ে যেতে পারবোনা কিন্তু চেষ্টা করলে মানসিক জটিলতা মুক্ত থাকতে পারবো। আর মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকলে করোনা মোকাবেলা করাটাও অনেকটাই সহজ হবে। করোনার জন্য আমরা যারা ঘরে থেকে আমাদের সুরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা করছি মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতেও আমরা ঘরে থেকেই বিভিন্ন কাজ করতে পারি।

এসব কাজের মধ্যে রয়েছে আমাদের দৈনন্দিন কাজগুলো মনোযোগের সাথে করা, পরিবারের সদস্যদের খেয়াল রাখা, নিজেদের খেয়াল রাখা, পছন্দের কাজগুলো বেশী করে করা, করোনা নিয়ে অযথা সারাক্ষণ চিন্তা না করা ইত্যাদি। এগুলো করলে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হবে। আবার চিকিৎসকদের জন্য যদি কাউন্সেলিং-এর ব্যবস্থা করা যায় তাহলে তাদের মানসিক অবস্থা ভালো রাখতেও সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

কোভিড-১৯ মহামারী আমাদের ভালো থাকা এবং সুস্থ মানসিক বিকাশকে বাঁধাগ্রস্ত করছে। করোনা মোকাবেলায় আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ খুব জরুরী ভিত্তিতে গ্রহণ করছি। আর এই গুরুত্বের আধিক্যে আমরা নিজেদের উপকার করার বদলে বরং নিজেদের আরও ক্ষতি সাধন করছি। শারীরিক অবস্থাকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে আমরা মানসিক স্বাস্থ্যের কথা ভুলে যেতে বসেছি আর ধীরে ধীরে নিজেদের অজান্তেই জটিল সব সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে পড়ছি যা আত্মহত্যার মত ঘটনার জন্ম দিচ্ছে। আর এগুলো করোনার মতোই ভয়াবহ।

আমরা করোনাকে যতোটা গুরুত্ব দিচ্ছি, আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যকেও আমাদের ততোটাই গুরুত্ব দিতে হবে। আমাদের ভালো থাকা, সুরক্ষিত থাকা মানে শুধু করোনামুক্ত থাকা নয়। মানসিকভাবেও সুস্থ থাকা, জটিলতা মুক্ত থাকা। আর আমাদেরকে সেই প্রচেষ্টাও করতে হবে।

সূত্র: https://www.psychologytoday.com/intl/blog/evidence-based-living/202008/what-are-the-mental-health-effects-covid-19

অনুবাদ করেছেন: প্রত্যাশা বিশ্বাস প্রজ্ঞা

মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে চিকিৎসকের সরাসরি পরামর্শ পেতে দেখুন: মনের খবর ব্লগ
করোনায় মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক টেলিসেবা পেতে দেখুন: সার্বক্ষণিক যোগাযোগ
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
করোনায় সচেতনতা বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও বার্তা দেখুন: সুস্থ থাকুন সর্তক থাকুন

Previous articleকরোনায় স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম “কথা বলো কথা বলি”
Next articleক্ষমাশীল হওয়ার উপায়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here