বর্তমান প্রজন্মের মানুষের মাঝে হতাশার পরিমাণ অনেক বেশি দেখা যাচ্ছে। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বড় বড় আইকনিক বা তারকাখ্যাতি সম্পন্ন মানুষও কিন্তু এই হতাশা থেকে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন।
উধারণস্বরূপ বলা যায়, কিছুদিন আগেই লিংকিন পার্কের মতো বিখ্যাত ব্যান্ড গায়ক চেস্টার বেনিংটন আত্মহত্যা করেছেন। তার দুইদিন পরেই বাংলাদেশের বিখ্যাত আন্ডারগ্রাউন্ড ব্যান্ড মেকানিক্স এর গিটারিস্ট জেহীন আত্মহত্যা করেন।
গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক মেধাবী শিক্ষার্থীও আত্মহত্যা করেন। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, সব সময় এই মানুষগুলোকে হাসিখুশি দেখালেও ভেতরে যে কতটা হতাশা ও দুঃখ পুষে রেখেছিলেন তারা সেটা তাদের আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত দেখলে বোঝা যায়।
গবেষণায় দেখা গেছে বাংলাদেশে প্রতিবছর গড়ে ১০ হাজার লোক আত্মহত্যা করেন। যাঁদের মধ্যে নারীর সংখ্যাই বেশি। বয়সের তুলনায় এ প্রজন্মের তরুণ তরুণীদের সংখ্যাও কম নয়।
আত্মহত্যার পেছনে অনেকগুলো কারণ দেখিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এর মধ্যে অন্যতম হলো ডিপ্রেশন বা মানসিক অশান্তিতে ভোগা। দীর্ঘদিন ডিপ্রেশনে ভোগা ব্যক্তিরা এক সময় আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।
শুধু আত্মহত্যা নয়, তাদের সিংহভাগ জড়িয়ে পড়ে মাদকাসক্তের মতো ঘৃণ্য কর্মকাণ্ডেও। যথাযথ মানসিক চিকিৎসা ও মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে উদাসীনতার কারণে দেশে আত্মহত্যার সংখ্যাও ক্রমাগতভাবে বাড়ছে।
একটু ইচ্ছে থাকলেই কিন্তু আত্মহত্যা প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব। যখনই আত্মহত্যা প্রবণতা আপনার মাঝে বিস্তার করবে তখন সবার আগে নিজেকে যেটা বলা জরুরী সেটা হচ্ছে, মেঘের পরেই কিন্তু সূর্যের আলো হাসে। সুতরাং প্রতিটি খারাপ সময়ের শেষ আছে এবং এক পর্যায়ে ভালো সময় শুরু হবে।
সাধারণত অল্প বয়সীরাই আত্মহত্যা প্রবণতায় বেশি ভোগে। সুতরাং এবটু ভাবুন ভবিষ্যতে কী কী করা বাকি আছে আপনার। কী কী আপনি করতে পারেননি। আত্মহত্যা করলে কখনোই আর সেগুলো করার সুযোগ পাবেন না। সুতরাং ভবিষ্যতের বাকি কাজগুলোর দিকে মনোযোগ দিন।
সবশেষে নিজের ছোট ছোট ইচ্ছেগুলো পূরণ করার চেষ্টা করুন। কোথাও খেতে ইচ্ছে করলে সেখানে চলে যান, মুভি দেখুন সিনেমা হলে গিয়ে, পছন্দের বইটি পড়ুন। দেখবেন সবকিছু আস্তে আস্তে সহজ হয়ে আসছে।
সবকিছু আস্তে আস্তে মিশে যাবে সময়ের সাথে। আপনিও নিজের বিশ্বাস ফিরে পাবেন, আবার সবকিছু শুরু করার মোটিভেশন পাবেন। আত্মহত্যা কখনোই সমাধান নয়, নিজেকে রক্ষা করুন এবং অন্যদের জন্য উদাহরণ হয়ে উঠুন। সবকিছু এভাবেই সুন্দর হয়ে উঠবে।
আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধি দেশের জন্য একটি অশনিসংকেত। যে তরুণরা একদিন দেশের হাল ধরবে, দেশের কর্ণধার হবে, আজ তাদের একটি অংশ আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। কাজেই আত্মহত্যার প্রবণতা রোধে মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে সবাইকে সচেতন করতে হবে।
স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পর্যাপ্ত মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। সব শিক্ষার্থীর মানসিক অবস্থা মনিটরিংয়ের মাধ্যমে আত্মহত্যার পরিমাণ কমিয়ে আনা সম্ভব। সর্বোপরি মানসিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তির প্রতি বিদ্যমান নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে।
লিখেছেন:
মো. ইসরাফিল হোসাইন
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে