গত কয়েক বছর ধরে মধ্যপ্রাচ্যে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটছে। নানাভাবে এর লক্ষণ দেখা গেলেও কার্যত প্রবাসীদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এখন প্রবাসীদের জন্য সুস্থ বিনোদনসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেওয়া গেলে ভয়ংকর পরিণতি ভোগ করতে হবে বলে অভিমত অনেকের।
প্রবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, করোনায় চাকরি হারানো, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়া, বেতন বকেয়া, সুস্থ বিনোদনের অভাব, দেশে যেতে না পারা, দেশে আটকে থাকা এবং পারিবারিক কলহ মানসিক অবসাদের অন্যতম কারণ। গত কয়েক বছরে এসব কারণে প্রবাসীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ঝুঁকি বাড়ছে। উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে হৃদরোগ ও মৃত্যুর সংখ্যা। এমনকি আত্মহত্যার পথও বেছে নিয়েছেন কোনো কোনো প্রবাসী।
তারা আরও জানান, দীর্ঘ মানসিক অবসাদ থেকে উত্তরণের জন্য প্রেষণা ও সুস্থ বিনোদনসহ সরকারিভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
প্রবাসীরা বলছেন, গত কয়েক বছর ধরে প্রবাসীদের মানসিক স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। করোনায় স্বাভাবিক জীবনযাপন বাধাগ্রস্থ হওয়ায় আর্থিক সংকট ও দেশে ফিরতে না পেরে অনেকে মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছেন। আবার দেশে আটকে পড়া প্রবাসীদের কর্মস্থলে না ফেরা পর্যন্ত মানসিক চাপে থাকতে হচ্ছে। ভিসা জটিলতা, কোম্পানি বন্ধ হয়ে যাওয়া ও নতুন কর্মস্থল ঠিক করতে না পেরেও হতাশ হচ্ছেন অনেকে। এ ধরনের মানসিক অবসাদ বা স্বাস্থ্য ঝুঁকি কেবল একজন প্রবাসীকে আক্রান্ত করছে না বরং ক্রমেই এটি সামগ্রিক অর্থনীতিকে প্রভাবিত করতে পারে। প্রবাসীদের মানসিক অবসাদ মুক্ত রাখতে দূতাবাস ও বাংলাদেশ কমিউনিটিকে এগিয়ে আসা প্রয়োজন। প্রেষণা ও সুস্থ বিনোদনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণও জরুরি হয়ে পড়ছে।
ইউএই প্রবাসী এক প্রকৌশলী বলেন, সরকার প্রবাসীদের রেমিট্যান্সের ওপর প্রণোদনা দিচ্ছে। এটি অবশ্যই ভালো উদ্যোগ। তবে এই প্রণোদনার টাকা সীমিত আয়ের প্রবাসীদের স্বাস্থ্য বীমা ও করোনায় অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত প্রবাসীদের সুরক্ষায় ব্যয় হলে সবচেয়ে ভালো হতো।
তিনি আরও বলেন, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমেও সাধারণ প্রবাসীরা তেমন উপকৃত হচ্ছেন না। বর্তমানেও প্রবাসীদের দেশে যাতায়াত বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিশেষ করে চড়া মূল্যের টিকিটের কারণে অনেকে দেশে ফিরতে পারছেন না। সরকার এই বিষয়টি বিশেষ বিবেচনায় এনে প্রয়োজনে ভর্তুকির ব্যবস্থা করতে পারে। এতে তাদের মানসিক দুশ্চিন্তা কমবে।
তিনি জানান, সাধারণ শ্রমিকদের জন্য যথাযথ বিনোদনের ব্যবস্থা নেই। মানসিক সুস্থতার জন্য বিনোদন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক সংগঠন ও কমিউনিটি বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। যারা সাংস্কৃতিক আচার-অনুষ্ঠান আয়োজন করেন তারা ভেন্যু হিসেবে শ্রমিক ক্যাম্পগুলো বেছে নিলে সাধারণ প্রবাসীদের সুস্থ বিনোদনের চাহিদা মিটবে।
করোনায় স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে