সিনেমা কিংবা নাটক দেখতে পছন্দ করেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। একাকীত্ব কাটানো কিংবা বিনোদনের জন্য মানুষ দেখে থাকেন সিনেমা বা নাটক। অনেক সময় সিনেমা বা নাটকের কোনো চরিত্র কিংবা গল্পের মাঝে মানুষ খুঁজে নেয় নিজেকে। অনেকসময় কোনো দৃশ্যের সাথে বদলে যায় দর্শকের তখনকার অনুভূতি। কখনো হাসি, কখনো কান্না কিংবা কখনো দেখে থাকেন ভবিষৎ এর স্বপ্ন। সিনেমার গল্পে থাকা নানা সত্য মিথ্যার দৃশ্যে বদলে যায় দর্শকদের প্রতিক্রিয়া। যা অনেকসময় সৃষ্টি করে মানসিক চাপ। আর তা থেকে বাড়তে পারে হৃদরোগ।
সিনেমা কিংবা নাটক দেখার পর অনুভূতি কিংবা প্রতিক্রিয়ার পরিবর্তন নিয়ে ‘মনের খবর’ ম্যাগাজিনের কথা হয় একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ইফফাত আরা ইমুর সঙ্গে। তিনি জানিয়েছেন তার মতামত-
মনের খবর – কখনও কি সিনেমার দৃশ্য দেখে পরিবর্তন হয়েছে আপনার অনুভূতি বা প্রতিক্রিয়া?
ইফফাত আরা ইমু – সিনেমার দৃশ্য দেখে প্রতিক্রিয়ার পরিবর্তন হওয়া স্বাভাবিক একটি বিষয়। কখনো কখনো সিনেমা দেখে যেন হারিয়ে যাই এক স্বপ্নের রাজ্যে। সেখানকার সময় যেন বাস্তব সময় থেকে আলাদা। তারই গল্প নিয়ে আমার দেখা একটি অসাধারণ সিনেমা ক্রিস্টোফার নোলান পরিচালিত ‘ইনসেপশন’। সিনেমাটির মূল ভিত্তি ছিল স্বপ্ন তৈরি করা বা স্বপ্ন শেয়ার করা। সাইন্স ফিকশন থ্রিলার এই সিনেমাটি দেখে অনেকগুলো প্রশ্ন মাথায় আসে। যেমন ইনসেপশন সিনেমাতে যে ঘটনাগুলো দেখায় তা কি বাস্তবে সম্ভব? যখন কেউ ঘুমিয়ে থাকে তাদের মনে কি কোন কিছু তৈরি করার ধরণা প্রবেশ করানো সম্ভব? আমারা প্রায়ই দেখি ঘুমন্ত ব্যক্তিকে কিছু জিজ্ঞেস করলে তার উত্তর দিতে। আমি মনে করি যদি ঘুমন্ত কোন ব্যক্তি আপনার প্রশ্নের উওর দিতে পারে, তাহলে তার স্বপ্নে আপনার ধারনাগুলো পৌঁছানো সম্ভব । যখন ঘুমন্ত ব্যক্তি যেগে উঠবে সে ভাববে সে স্বপ্নে দারুণ আইডিয়া পেয়েছে। এই ভাবে ভাবলে মনে হবে এটা সম্ভব। কিন্তু সিনেমার দিক বিবেচনায় তা অসম্ভব বলে মনে হয়।
মনের খবর – দর্শকমনে হৃদরোগ সম্পর্কে কী প্রতিক্রিয়া বা প্রভাব ফেলে এরকম দৃশ্য?
ইফফাত আরা ইমু – আপনি যদি সিনেমা দেখে আপনার মনকে উত্তেজিত করতে চান তাহলে উপভোগ করার মত একটি সিনেমা ইনসেপশন। সিনেমটি আপনাকে আনন্দ দিবে তেমনি দিবে অত্যাচারিত, যন্ত্রণাদায়ক মানসিক চাপ। এ সিনেমাটি গভীর মনোযোগে দেখলে নিজের মধ্যে উত্তেজনা এবং ঘোরে থাকার জন্য মানসিক চাপ তৈরি হয়। যার ফলে এটি যে কোন হৃদরোগীদের জন্য ঝুকিপূর্ণও হতে পারে।
মনের খবর – এই দৃশ্যগুলো কতটা বিজ্ঞানসম্মত বলে মনে করেন আপনি? –
ইফফাত আরা ইমু – জার্মানির ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর হিউম্যান কগনিটিভ অ্যান্ড ব্রেন সায়েন্সেসের একজন সিনিয়র গবেষক এর একটি রিসার্চে দেখা যায়, মস্তিষ্কের সক্রিয়করণ নিদর্শন এবং বাস্তব জীবনের তার প্রভাবে সম্পর্ক বুঝতে তারা FMRI স্ক্যান ব্যবহার করে মস্তিষ্কে। তারা দেখেন যে, কোন ঘুমন্ত ব্যক্তি যদি স্বপ্নে কোন বোতাম বাম বা ডান হাত দিয়ে টেপে তা ব্রেইন স্কেনার সাত সেকেন্ড আগেই বুঝতে পারে। তাছাড়া অনেকেই ধারণা করেন লুসিড ড্রিমাররা স্বপ্ন দেখছে তা বুঝতে পারে এবং এমনকি স্বপ্নের উপর কিছু নিয়ন্ত্রণ প্রয়োগ করতে পারে। বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে সিনেমাটির বাস্তব রূপান্তর করা সম্ভব বলে ধরণা করি।
মনের খবর – মানসিক চাপের সঙ্গে হৃদরোগের সম্পর্ক নিয়ে আপনার মতামত কী?
ইফফাত আরা ইমু – গবেষণায় দেখা যায় কর্মজীবী মানুষেদের হৃদরোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কর্মজীবী মানুষরা স্বাভাবিক ভবেই অধিক চাপের মধ্যে থাকে। চাকুরির অনিশ্চয়তা কিংবা চাকুরি হারানোর ভয়ের চেয়ে যেসব কাজে বেশি মানসিক চাপ পড়ে, সেই ধরনের কাজের সাথে যুক্ত ব্যক্তিদের হার্ট অ্যাটাক বেশি হয়৷ মানসিক চাপ হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। মানসিক চাপের পরিণতি হতে পারে হৃদরোগ
মনের খবর – এমন পরিস্থিতিতে দর্শকদের করণীয় কী বলে মনে করেন আপনি?
ইফফাত আরা ইমু – সিনেমা বা নাটকের কোনো দৃশ্যে যখন আমার প্রতিক্রিয়া পরিবর্তন হয় তখন আমি ওই দৃশ্যতেই সিনেমাটি থামিয়ে রাখি। এরপর অন্য কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখি। বিশেষত এমন পরিস্থিতিতে আমি পরিবার বা প্রিয়জনকে সময় দেই। অথবা সে সময় আমি বন্ধুদের সময় দেই। এতে করে ওই প্রতিক্রিয়াটা আমার মাঝ থেকে দূরীভুত হয়। আমি মনে করি এমন পরিস্থিতিতে সবারই নিজেকে অন্যকাজে ব্যস্ত রাখা উচিত। এছাড়া যারা হরর কিংবা থ্রিলার দৃশ্যগুলো দেখতে অবস্ত নয় তারা যেনো তা এড়িয়ে যায়।
করোনায় স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে