সমস্যা:
আমার বয়স ২৪। পেশাঃ ছাত্র (মার্কেটিং সাব্জেক্টে বিবিএ)। মানুষ হিসাবে আমি খুব যুক্তিবাদী হিসাবে নিজেকে ভাবি। আমি যে কোনো কাজ সলিডভাবে করতে চাই। আমার বন্ধুত্ব বিষয়েও আমি সলিড থাকতে চাই। আমি আজ পর্যন্ত কোনো মেয়ের সাথে সম্পর্কে জড়িত হই নি। কিন্তু আমার অনেক অনেক বন্ধু আছে। আমি যেকোনো নতুন মানুষের সাথে সহযেই আপন হতে পারি এর কারণ হিসাবে আমি ভাবি আমার রসিকতাই মানুষকে কাছে আনে। কিন্তু আমি কখনো অযৌক্তিক রসিকতা করি না। কিন্তু এতকিছুর পরও আমার কিছু কমতি আছে। কিন্তু কেন যেন আমার সাথে কারও দীর্ঘ সম্পর্ক হয় না। যেমন আমার বন্ধুরা যেকোনো সমস্যা আমার সাথে আলোচনা করে। সাজেশন নেয়। এভাবে সমস্যার সমাধান করতে করতে কেউ আমাকে গুরু নিকনাম দিয়েছে আবার কেউ কবিরাজ বলে। কিন্তু একটা সময় আমি দেখছি যে মানুষ শুধু আমার কাছে সমস্যায় পড়লেই আসে। নরমাল আড্ডা সময় কাটাতে কেউ আমার প্রতি আগ্রহী হচ্ছে না। আমি যে কারো সমস্যা সহজেই সনাক্ত করি এবং তা তাদের ধরিয়ে দেই। যেমন- যদি কারো ভিতর কোনো স্বার্থপরতা পাই আমি তাদের সেইটা সিঙ্গেল ভাবে বলি, সাথে এটাও বলি যে তুমি যদি এই সার্থপরতা পরিবর্তন না কর তাহলে মানুষ তোমাকে ঘৃণা করতে পারে। এত সূক্ষ্মভাবে সবাইকে ভাল উপদেশ দেয়ার পরও মানুষ কেন যেন আমাকে আস্তে আস্তে এভোয়েড করা শুরু করে। এখন আপনি বলতে পারেন এভোয়েড করে সেটা তুমি কিভাবে বুঝতে পারো। যেমন ফোন দিলে ফোন ব্যাক করে না বা আমার কাছের কোনো বন্ধুকে অন্য বন্ধুর সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার পর সেই অন্য বন্ধু আর যাকে
পরিচয় করিয়ে দেই তারা একসাথে আড্ডা দেয় কিন্তু আমাকে ফোনও দেয় না। এগুলো আমাকে হিনমন্যতায় ভোগাচ্ছে। হিনমন্যতার কারণ আমার স্বাস্থ্য তেমন
ভালো না। এলাকায় আমার রাজনৈতিক পাওয়ার নেই। এসব কারণে আমার মাঝে মাঝে মনে হয় আমি বোধহয় ভাল বন্ধু পাইনি অথবা আমার কোনো দোষ আছে যা আমি জানিনা। বন্ধুদের সাথে নিজে যেচে যেচে যদি তোষামোদ করে চলতে পারি তাহলে এগুলো ঠিক হতে পারে বলেও আমি দেখেছি কিন্তু তাতে আমার সময় ও পড়ালেখা দুটোই নষ্ট হওয়ার ভয় হয়। সবার সাথে চলা বাদ দেয়ার চিন্তা করলে একা হয়ে যাওয়ার ভয় হয়। সবার সাথে চলতে গেলে অপমানিতো ও ঠকে যাওয়ার ভয় হয়। এখন এমন অবস্থায় আমার কনসাস মাইন্ডের কোন যুক্তি দ্বারা সাবকনসাস মাইনডকে শান্ত রাখতে পারি? এতখানি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
পরামর্শ:
আমার কাছে আপনার সমস্যার সমাধান জানতে চাওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
সাবকনসাস মাইন্ডের চাওয়া পাওয়া বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বাস্তবতা বিবর্জিত। সে তার নিজের ঝধঃরংভধপঃরড়হ চায় যা সর্বক্ষেত্রে সবসময়ই পূরণ করা সম্ভব হয়ে উঠে না। তাই কনসাস মাইন্ডে আমাদেরকে বাস্তবতার সাথে মিল রেখে সামাজিক পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলতে হয়। সেটা না হলে চাওয়া পাওয়ার মধ্যে গ্যাপ বাড়ে এবং মানসিকভাবে কষ্ট পাওয়ার পরিমাণও বেড়ে যায়। যেটা আপনার ক্ষেত্রে ঘটেছে। তাই বাস্তবতার নিরিখে কনসাস মাইন্ডকে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নিজের কর্মকান্ড পরিচালনা করতে হবে। সেই বিবেচনায় ডাঃ লুৎফর রহমানের অনুধাবন-“দুনিয়াটা কতগুলো স্বার্থপরের আড্ডাখানা” উক্তিটি যথার্থই মনে হয়।
এছাড়া!!!!!!
সকলের তরে সকলে আমরা,
প্রত্যেকে আমরা পরের তরে।
অথবা!!!!!!!
নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান,
ক্ষয় নাই তার ওরে ক্ষয় নাই।
অথবা!!!!!!!
প্রথম যেদিন এসেছিলে ভবে,
তুমিই শুধু কেদেছিলে, হেসেছিল সবে।
গঠন করো এমন জীবন,
মরনে হাসিবে তুমি, কাঁদিবে ভুবন।
এসব নীতিবাক্যকে স্মরণ রেখে, নিজের স্বার্থের কথা, চাওয়া পাওয়ার কথা ভুলে গিয়ে, অন্যের মুখে হাসি ফুটানো এবং অন্যের মঙ্গল করার চেষ্টা করাই মনে হয় সাবকনসাস মাইন্ডকে শান্ত রাখার উত্তম পন্থা। ধন্যবাদ
পরামর্শ দিচ্ছেন,
ডা. মো. নিজাম উদ্দিন
দৃষ্টি আকর্ষণ- মনেরখবর.কম এর প্রশ্ন-উত্তর বিভাগে, মানসিক স্বাস্থ্য, যৌন স্বাস্থ্য, মাদকাসক্তি সহ মন সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে আপনার কোনো জানার থাকলে বা প্রশ্ন থাকলে বা বিশেষজ্ঞ পরামর্শ দরকার হলে question@www.monerkhabor.com এই ইমেলের মাধ্যমে প্রশ্ন পাঠাতে পারেন।
এই অসুখের জন্য কোথায় মানসিক চিকিৎসা নিতে পারি?