অধ্যাপক ডা. ঝুনু শামসুন নাহারের প্রথম গ্রন্থ “সাইকিয়াট্রিস্টের খেরোখাতা থেকে” বইটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা সভা হয়েছে। গতকাল রাতে জুম অ্যাপসের মাধ্যেমে এই আলোচনা সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।
বইটি এবারের একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে। বইটিতে সাইকোথেরাপি এর মাধ্যমে রোগীকে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরিয়ে আনা নিয়ে সরল বর্ণনা করা হয়েছে।
আলোচনা সভায় অংশ নিয়েছেন অধ্যাপক ডা. ওয়াজিউল আলম চৌধুরী, অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আহসান হাবীব ও অধ্যাপক ডা. ঝুনু শামসুন নাহার। আলোচনা সভাটি সঞ্চালনা করেন ডা. মোঃ রাহেনুল ইসলাম।
আলোচনা সভায় বইটি সম্পর্কে অধ্যাপক ডা. ওয়াজিউল আলম চৌধুরী বলেন, প্রথম বইয়েই লেখক দেখিয়ে দিয়েছেন তার লেখনীর মুন্সিয়ানা। বইটির প্রচ্ছদ খুবই সুন্দর। প্রচ্ছদটিতে নান্দনিক আবহাওয়া আছে। বইটির সূচিপত্র দেখলে রীতিমত চমকাতে হবে। একেবারে নতুন ধরণের বিন্যাস। যেটা দেখলে পাঠকদের কৌতুহল আরো বাড়িয়ে দেয়।
ডা. ওয়াজিউল আলম বলেন, পাঠকরা বইটি পড়লে নিজেই কবিতা লিখতে আগ্রহ প্রকাশ করবে। অর্থাৎ যারা মনরোগ বিষয়ক চিকিৎসা করে তারা বইটি পড়লে অনেক কিছু জানতে পারবে। বইটিতে চারটি অধ্যায়ে চল্লিশটি বিষয়ের অবতারণা রয়েছে।
বইটি সম্পর্কে তিনি বলেন, সুদীর্ঘ কাল বইটি চিন্তার খোরাক যোগাবে । দৈনন্দিন জীবনের মানসিক সমস্যা থেকে শুরু করে তার আধুনিক চিকিৎসা, বিভিন্ন স্কিল ব্যবহার করে রোগ নির্ণয় করে এর চিকিৎসা প্রদান সম্পর্কে বইটিতে সুন্দর ভাবে আলোচনা করা হয়েছে।
আলোচনা সভায় অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আহসান হাবীব বলেন, সাইকিয়াট্রিস্ট বিষয়ে যারা বই লেখা শুরু করেন তারা অধিকাংশই টেক্সট বই ধরণের লেখা শুরু করেন। তাতে সমস্যা হলো সে বইটি পড়ে শুধু সাইকিয়াট্রিস্টরাই বুঝতে পারে। অন্যরা সহজে বুঝতে পারে না। সেই বেড়াজাল থেকে বইটি একেবারে বেড়িয়ে এসেছে।
ডা. মোহাম্মদ আহসান হাবীব বলেন, পুরো বইটাকে দুটো ভাগে ভাগ করা হয়েছে। একটা শুধু সাইকিয়াট্রিস্ট সম্পর্কে সত্যিকার্স্থে ধারণা দেয়। এই ধারণাটা যারা রোগী, রোগীর আত্মীয়স্বজন ও যারা কিছু সমস্যায় ভুগছে। দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে খেরোখাতা। লেখক তার মনের আনন্দে নিজের অভিজ্ঞতার কথা আলোচনা করেছে। সব চেয়ে বড় কথা হলো অভিজ্ঞতার আলোটা তৈরি হয়েছে সাইকিয়াট্রি ও সাইকোলজি নিয়ে।
আহসান হাবীব বলেন, বইটির মাধ্যমে লেখক জনগণের কাছে আসতে পেড়েছে। কারণ বইটি পড়ে মানুষ প্রতিটি বিষয় সম্পর্কে লেখক বা সাইকিয়াট্রিস্টদের জিজ্ঞেসা করবে এবং বইটি পড়তে অন্য মানুষদের সাজেশন করবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগবিদ্যা বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান এবং বর্তমানে সাইকোথেরাপি বিভাগে প্রধান, অধ্যাপক ডা. ঝুনু শামসুন নাহারের প্রথম গ্রন্থ “সাইকিয়াট্রিস্টের খেরোখাতা থেকে”।
বইটি সম্পর্কে পাঠক-বোদ্ধারা পাঠ প্রতিক্রিয়ায় জানান, বাংলাদেশের চলতি গতানুগতিক ধারার কথিত সস্তা উপন্যাস, গল্প, ধর্মীয় কুসংস্কার, রান্নার বই এটি নয়। জীবন বোধ-এর বোধনের প্রকাশনা এটি।
ভারতবর্ষের জরাসন্ধ নামক বাঙালি লেখক যেমন লিখেছিলেন ” লৌহকপাট ” কারান্তরালের কাহিনি।“সাইকিয়াট্রিস্টের খেরোখাতা থেকে” সেই মহান ধারার জীবন থেকে নেয়া অমূল্য সব জীবন-রসায়নের রসনা।
বইটি সম্পর্কে অধ্যাপক ডা. ঝুনু শামসুন নাহার বলেন, অনেকের অনুরোধের কারণেই বইটি লেখা। বইটি লেখার আগে আমি চেয়েছি সরল বাংলায় যেন একটা বই প্রকাশ করতে পারি। যে বইটির দ্বারা সাধারণ মানুষসহ মানসিক রোগী, আমার ছাত্র, জুনিয়র সাইকিয়াট্রিস্টরাও যেন বইটি পড়ে উপকৃত হতে পারে। আমার সেই ভাবনা থেকেই বইটি লেখা।
ডা. ঝুনু শামসুন নাহার বলেন, বইটির নাম “সাইকিয়াট্রিস্টের খেরোখাতা থেকে” দেয়ার কারণ আমি এখানে কে সৃষ্টি সেটা লিখছি, তার মনস্তাত্তিক বিশ্লেষণ করছি, তাকে ঔষধ দিয়ে সেবা করার চেষ্টা করছি। আমি এখানে মনস্তাত্তিক চিকিৎসা সেবার কথা বলতে পারছি।
বইটির লেখক আরো বলেন, আমি আমার স্কিলগুলো বলতে পারছি, আমি আমার অনুভূতির কথাও বলতে পারছি। এজন্যই আমি বইটির নাম সাইকিয়াট্রিস্টের খেরোখাতা থেকে দিয়েছি। আমি একটা জিনিসের উপর সীমাদ্ধ করতে চাইনি। বইটির মধ্যে মানসিক রোগীদের কথার পাশাপাশি, চলচ্চিত্র, আবেগ-অনুভূতির আলোচনাও এসেছে।