কাজের বৈচিত্র্যের জন্যই লেখালেখি: অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার

কাজের

ছেলেবেলা থেকেই ভীষণ মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলেন অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার। সুনামগঞ্জ সরকারি জুবিলি হাইস্কুল থেকে ১৯৭৯ সালে এসএসসি ও ১৯৮১ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। পরে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ থেকে ১৯৮৮ সালে এমবিবিএস সম্পন্ন করেন।

পেশাগত জীবনেও প্রচন্ড সফল একজন মানুষ অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার। বর্তমানে তিনি জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন । এর আগে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মনোরোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এই গুণী মানুষের আছে অসাধারণ লেখালেখির অভ্যাস । কর্মব্যস্ততার মাঝেও ইতিমধ্যে তার চারটি বই প্রকাশ হয়েছে। মনের খবর প্রতিবেদক ইসরাফিল হোসাইনের সাথে সাক্ষাৎকালে তার কর্মব্যস্ততা নিয়ে আলাপচারিতা হয়। পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল সেই আলাপচারিতা:

মনের খবর: কেমন আছেন?

অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার: ভালো আছি।

মনের খবর: দীর্ঘদিন যাবত মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করছেন, এই কাজ করে কেমন অনুভব করছেন?

অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার: মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করতে আমার ভালোই লাগে। সব সময় আমি চেষ্টা করি মনযোগ ও আনন্দের সাথে কাজ করতে। তারপরও অনেক সময় খারাপ লাগে, যখন দেখি যারা আমার সেবা চান তাদের সবাইকে সেবা দান আমার সাধ্যে কুলায় না।

মনের খবর: বর্তমানে মানুষের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করার সুযোগ কেমন?

অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার: বর্তমানে বাংলাদেশে প্রচুর মানসিক রোগী রয়েছে। আবার তাদের নিয়ে কাজ করার সুযোগও রয়েছে। তবে দু:খের বিষয় হলো মানসিক রোগীরা সবাই সম্পূর্ণ চিকিৎসা করতে পারে না। অনেক রোগী অর্থনৈতিক কারণে তাদের রোগ ভালো হওয়ার মাঝ পথেই চিকিৎসা বন্ধ করে দেয়। আবার কেউ কেউ আর যোগাযোগই করে না।

অন্যদিকে, রোগীর তুলনায় সরকারি-বেসরকারি সকল হাসপাতালে এখনো পর্যাপ্ত পরিমানে মানসিক রোগের ডাক্তার নেই। যদিও সরকার ইতিমধ্যে সরকারি হাসপাতালগুলোতে মানসিক রোগের ডাক্তারদের নতুন পদ সৃষ্টি করেছে। কিন্তু তা এখনও কার্যকর সম্ভব হয়নি। আশা করা যাচ্ছে খুব দ্রুতই তা বাস্তবায়ন হবে।

মনের খবর: মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করার পাশাপাশি লেখালেখিও করছেন। দুই দিকে কাজ করতে গিয়ে ব্যক্তিগত বা পারিবারিক জীবনে কীভাবে সময় দিচ্ছেন বা কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা?

অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার: আসলে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করার পাশাপাশি লেখালেখি করতে গেলে স্বাভাবিকভাবে পারিবারিক দায়িত্ব পালনে একটু বিঘ্ন ঘটবে। এতে পারিবারিক সাপোর্ট থাকতে হয় বা পরিবারকে এটা মেনে নিতে হবে। আমার পরিবার থেকে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। তারা আমাকে সব সময় সাপোর্ট দিয়ে আসছে।

মনের খবর: আপনার সন্তান দেশের বাহিরে থাকেন। তার সাথে কীভাবে যোগাযোগ করেন বা তাকে কীভাবে সময় দিচ্ছেন?

অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার: আমার মাত্র একটি মেয়ে। তার বিয়ে হয়ে গেছে। সে আমার উপর নির্ভরশীল নয়। আর তার সাথে ফোনের মাধ্যমেই আমার যোগাযোগ হয়।

মনের খবর: লেখালেখি করতে আপনার কেমন লাগছে?

অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার: কাজের বৈচিত্র্য প্রয়োজন। সব সময় একই কাজ (রোগী দেখা) করতে ভালো লাগে না। যাতে কাজের মধ্যে মনযোগ দিতে পারি, বিরক্তবোধ না হয়, সে জন্যই অন্য ধরনের কাজে যুক্ত হই। বিভিন্ন বিষয় পড়তে এবং লিখতে আমার খুবই ভালো লাগে।

মনের খবর: লেখালেখি করাটা কি নিজের জন্য? নাকি জুনিয়র বা রোগীদের জন্য? নাকি পাঠকের জন্য?

অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার: লেখালেখি তো শুধু নিজের জন্য নয়। এটা পাঠকের জন্য। আমার কিছু বলার আছে বলেই লিখি। আমার বক্তব্যটি পাঠকের কাছে পৌঁছে দিতে পারলেই আমার কাজ সার্থক। আমার বিষয় শুধু মানসিক স্বাস্থ্য নয়। আমার এযাবত প্রকাশিত বইগুলোর মূল বিষয় মনস্তত্ত্ব ও দর্শন। ইতিমধ্যে আমার চারটি বই প্রকাশিত হয়েছে।

মনের খবর: আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি?

অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার: যতদিন আমার শক্তি বা সামর্থ থাকবে ততদিন মানসিক রোগীদের সেবা করে যাব। আর যখন রোগীদের সেবা করতে পারবো না তখন লেখাজোকা নিয়েই থাকব।

মনের খবর: মনের খবরকে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার: আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।

অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার:  https://www.bapbd.org/about/life-members/ 

Previous article“সাইকিয়াট্রিস্টের খেরোখাতা থেকে” বইটি নিয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
Next articleপরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটি যখন মাদকাসক্ত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here