সন্তান পরিচর্যায় বাবা-মায়ের যে ভুল

0
53
কিছু শিশু তাদের পিতা মাতার কাজকে কঠিন  করে তোলে

মানুষ হিসেবে আপনি কখনো হাসিখুশি আবার কখনো বা মনমরা হয়ে থাকেন। আবেগীয় এই উত্থান-পতন গুলো কিন্তু আপনার ব্যবহারের উপরও প্রভাব বিস্তার করে। তাই হয়তো আপনি এই সময় গুলোতে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে সন্তানের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন। আবার অনেক সময় ব্যস্ততার কারণেও হয়তো সন্তানকে সময় দিতে পারেন না। সন্তানের সঙ্গে রেগে কথা বলা বা তাকে দূরে সরিয়ে রাখার মতো ভুল গুলোও অধিকাংশ বাবা-মা করে থাকেন। মনে রাখবেন ভুল করাটা মানুষের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক। কিন্তু ভুল সংশোধন করে নেওয়ার মতো কাজ সবাই পারে না। আর পারলেও করতে চান না সন্তানের কাছে। কিন্তু এই কাজটিই পারে সন্তানের সঙ্গে একটি সুস্থ্য-স্বাভাবিক সম্পর্ক বজায় রাখতে।
আসুন দেখে নিই কোন ভুল গুলো বাবা-মা প্রায়ই সন্তানের সঙ্গে করে থাকেন:
০১. মাইক্রোম্যানেজিং: বাবা মা সন্তানের জন্য সব কিছুই করেন। তারা চান তাদের সন্তান যেন সব সময় সফল হয়। ফলে সন্তান তাদের উপর নির্ভরশীল হয়ে পরে এবং নিজে কোন কিছু করতে ভয় পায়। তারা আবেগীয়ভাবে অপরিপক্ব থাকে ও নিজেদের নিজস্বতা হারিয়ে ফেলে। তাই, সন্তানকে মাইক্রোম্যানেজিং এর বদলে নিজের মতো করে চলতে দিন। সন্তান যত আপনার আদেশ দ্বারা পরিচালিত হবে, সে তত আত্মনির্ভরশীলতা হারাবে।
০২. সক্রিয় করা: সন্তানের জন্য অভিভাবকের করা সব কাজই নিঃসন্দেহে ভাল। কিন্তু সামর্থ এমন একটা জিনিস, যেখানে বাবা-মা সন্তানকে না চায়তেই সব কিছু দেয়। ফলে সন্তান নিজে কর্মক্ষম হতে চায় না। তারা নিজেদের দায়িত্বটুকুও পালনে আলসেমি করে। তারা ভাবে, এভাবেই জীবনটা কেটে যাবে। তাই, সন্তানকে নিজের কাজ নিজে করতে উৎসাহিত করুন।
০৩. খারাপ মডেলিং: আপনি যদি সন্তানের সামনে অন্যকে দোষ দেন, মিথ্যা কথা বলেন, রাগান্বিত ভাবে কথা বলেন, তবে আপনার সন্তানও তাই শিখবে। আপনি সন্তানের সঙ্গে তেমন ব্যবহারটাই করুন, যেমনটা আপনি আপনার সন্তানকে শিখাতে চান।
০৪. চিৎকার করা: যেসব বাবা-মা সন্তানকে না বুঝে তাদের সঙ্গে চিৎকার চেঁচামেচি করে, সেসব সন্তানরা দুশ্চিন্তায় ভোগে। কাউকে বিশ্বাস করতে পারে না, ভালোবাসতেও পারে না, সবাইকে ভয় পায়।
০৫. অসামঞ্জস্যতা: যেসব বাবা-মা দ্রুত সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন বা কোন একটা বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হাজার বার মত বদলান, সেসব বাবা-মায়ের সন্তানরা অনেক আবেগীয় উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে যায়। এতে করে তাদের ভিত্তিটা নড়বড়ে ও দুর্বল হয়ে যায়।
০৬. সমালোচনা ও তুলনা করা: অনেকে সন্তানকে অন্যের সঙ্গে সমালোচনা ও তুলনা করে থাকে। এটা করা একদমই ঠিক না। এতে সন্তান আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে। এটা তাদের জীবনের সফলতাকে বাধাগ্রস্থ করে। আর এত করে তারা নিজেদের ভালো গুণকেও মূল্যায়ন করতে পারে না, কারণ এটা তারা কখনও শেখেনি।
০৭. সীমাবদ্ধতা: সন্তানকে সঠিক সীমাবদ্ধতা শেখানো পিতামাতার কর্তব্য। যেমন, একটা সঠিক রুটিন মেনে চলা, মানুষকে সম্মান করতে শেখা এবং মানুষের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করা শেখানো।
০৮. অবহেলা করা: যেসব সন্তানরা আবেগীয় অবহেলার শিকার, তারা মেজাজ ও বাহ্যিক ব্যবহার সমস্যায় ভোগে। তাই বাচ্চাকে অবহেলা না করে তাকে সময় দিন।
০৯. অসম্মান করা: কিছু বাবা-মা সহজেই সন্তানকে বলে দেন তুমি অলস, তুমি পড়াশুনা কর না। এসব কথা খুব মেধাবী সন্তানকেও তার পড়াশুনায় অমনোযোগী করে তোলে। এবং তাকে মনমরা করে দেয়। এসব কথা সন্তানকে না বলে, সে সম্মানীত হয় এমন কিছু বলুন।
১০. অনুভূতিকে অবজ্ঞা করা: সন্তানরা যখন তাদের ভালো মন্দের কথা বা অসুবিধার কথা আপনাকে বলে, তখন আপনার উচিৎ তার কথা মন দিয়ে শোনা বা সমাধান করা। যদি তার কথা মন দিয়ে না শোনে তাকে অবজ্ঞা করেন, তাহলে সন্তানটির অস্বাভাবিক আচরণ ও মেজাজ খিটখিটে হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
 
তথ্যসূত্র: সাইকোলজি টুডে।
অনুবাদটি করেছেন সুস্মিতা বিশ্বাস।

Previous articleবিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস ১০ সেপ্টেম্বর
Next articleকৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি আত্মহত্যা প্রতিরোধ করতে পারবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here