শৈশব থেকে আবেগের ক্রমবিকাশ

0
46

ডা. রেজওয়ানা হাবীবা
সহকারী অধ্যাপক
ডিপার্টমেন্ট অব সাইকিয়াট্রি,
শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজ, হবিগঞ্জ।

কোনো ভুল ভ্রান্তি হলে কেউ কেউ বলে ওঠেন “আমি আবেগ দিয়ে কাজ করেছি,বিবেক দিয়ে নয়”। অর্থাৎ বিবেক দিয়ে কাজ করাটাই যৌক্তিক, অথবা আবেগের সাথে বিবেকও মিলিয়ে কাজ করা উচিৎ না কি বলেন?

আসুন, আগে জেনে নেই আবেগ কি?

আবেগ-কে সংজ্ঞায়িত করা কঠিন। আবেগকে অনেকে অনুভূতির সমার্থক ধরে নেয়। যদিও অনুভূতি শারীরিক/মানসিক দুই-ই হতে পারে, আবেগ মূলত মানসিক। এটা এমন একটি মানসিক অবস্থা যা স্বতঃস্ফুভাবেই উদ্ভূত হয়; সচেতন উদ্যম থেকে নয়। এর সাথে মাঝে মাঝে শারিরীক পরিবর্তনও প্রকাশ পায়। সেক্ষেত্রে আবেগকে বলা যায় অনুভূতির উৎস। আবার শারীরিক ভাবে বলতে গেলে মসৃণ পেশী এবং বিভিন্ন গ্রন্থির কারণে শরীরের অন্তর্নিহিত পরিবর্তনই হল আবেগ ৷

আবেগ (Emotion) শব্দটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ Emovere থেকে। আবেগকে সাধারণত দুটি প্রধান ভাগে ভাগ করা হয়, ইতিবাচক আবেগ (যেমন: ভালোবাসা, মায়া, মমতা, সুখ, আনন্দ, আদর ইত্যাদি) এবং নেতিবাচক আবেগ (যেমন:কষ্ট, রাগ, ক্ষোভ, ঘৃণা  ইত্যাদি)।এই আবেগগুলো স্থান-কাল-পাত্র ভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে, কেননা যেকোনো মানুষ তার চিন্তার বহিঃপ্রকাশ করে আবেগের মাধ্যমে।

আবেগ-বিবেকের আবেগ তাড়িতায় অনেকেই আমরা বুঝে উঠতে পারি না,কি করবো।আবেগে কাজ করবো,নাকি বিবেক দিয়ে? আবেগ (Emotion) কি, সেটা তো জানলাম,কিন্তু আবেগ ব্যাপারটা কেন হয়,কবে থেকে বা জীবনের কোন বয়স থেকে আবেগের শুরু, কেনই বা ব্যাক্তিবিশেষে আবেগের প্রকাশ ভিন্ন হয় সেটা জানতে বা বুঝতে চান অনেকে।অনেকে ধরেই নেন আবেগ বড়দের বিষয়,বাচ্চাদের আবার আবেগ/ইমোশন কি!! আসলেই কি তাই??

আসুন, কবে থেকে আবেগের বেগ শুরু হয়,অর্থাৎ ইমোশনাল ডেভেলপমেন্ট বা আবেগের ক্রমবিকাশ নিয়েই আজ কথা বলি।মনে রাখতে হবে আবেগের বিকাশের সাথে সাথে মনোসামাজিক বিকাশ ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

মনোবিজ্ঞানীরা আবেগের বিকাশের পর্যায় সম্পর্কে বিভিন্ন মত দিয়েছেন। ব্লেয়ার (Blair)-এর মতে শিশুর জন্ম সময় থেকেই আবেগিক বিকাশের উপাদান তার মধ্যে থাকে এবং জন্ম মুহূর্তে থেকে এমনকি জন্ম পূর্ব থেকেই শিশু বিভিন্ন বিক্ষিপ্ত আবেগিক আচরণ শুরু করে।

মনোবিজ্ঞানী ক্যথারিন ব্রিজেস সদ্যেজাত থেকে দুবৎসর বয়সের শিশুদের পর্যবেক্ষন করেন। তার মতানুযায়ী প্রথম মাস পর্যন্ত শিশুর আবেগের কোনো নির্দিষ্ট রূপ থাকে না শুধু অনির্দিষ্ট একটা উত্তেজনা থাকে। দুমাস থেকে তিন মাসের মধ্যে আবেগের পৃথকীকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়। প্রথমে দুধরনের প্রাথমিক আবেগিক প্রকাশ স্পষ্ট লক্ষ্য করা যায়। আনন্দ (delight) আর অস্বাচ্ছদ্য (distress) প্রকাশ ঘটে পৃথকীকরণের মাধ্যমে। প্রায় ছয় মাস বয়সে আনন্দ থেকে হর্ষ আবেগের সৃষ্টি, নয় দশ মাসে বড়দের প্রতি ভালোবাসা এবং পনের মাস বয়স থেকে সমবয়সীদের প্রতি ভালোবাসা দেখা যায়। অন্যদিকে অস্বাচ্ছন্দ্য আবেগ পরিণতি লাভ করে রাগে, তিন চার মাস বয়সে। পাঁচ মাসে বিরক্তির এবং ছয় মাসের ভয়ের বিকাশ ঘটে। পনের মাস বয়সের পর শিশুর মধ্যে হিংসা দেখা দেয়। এমনি ভাবে পৃথকীকরণের মাধ্যমে আবেগের বিকাশ ঘটতে থাকে শিশুর মধ্যে।

শিশুর প্রাথমিক আবেগিক আচরণ তার মা, যিনি তাকে সারাক্ষন দেখা শোনা করে তাকে কেন্দ্র করেই বিকাশ লাভ করে থাকে। কারো মতে শিশুর প্রথম নির্দিষ্ট আবেগিক আচরণ হল পরিচিত মানুষের মুখ দেখে হাসা (social smile)। পরে এই নীরব হাসি উচ্চ হাসির রূপ গ্রহন করে।

ক্যাথরিন ব্রিজেসের মতের সাথে সবচেয়ে ভালো মিল পাওয়া যায় মনোবিজ্ঞানী এরিক এরিকসনের মনোসামাজিক তত্ত্বের। তিনি দেখিয়েছেন, আমাদের মানসিক ও আবেগীয় বিকাশ কিন্তু রাতারাতি ঘটছে না। ছোট্ট শিশু থেকে আমাদের বয়স যত বাড়তে থাকে, আমরা ধীরে ধীরে মানসিক ও আবেগীয়ভাবে  তত বেশি পরিপক্বতা লাভ করি। মনোবিজ্ঞানী এরিক এরিকসন মানবজাতির এই মানসিক ক্রমবিকাশের ধারাকে আটটি ধাপে ভাগ করেছেন। একেবারে ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকে আমরা বয়স বাড়ার সাথে সাথে কীভাবে নিজেদের গড়ে তুলি, তার এক চমৎকার ব্যাখ্যা পাওয়া যায় এরিকসনের এই মানসিক ক্রমবিকাশ তত্ত্বের মাধ্যমে। এ তত্ত্বের আটটি ধাপ  নিয়েই আজ আমরা আলোচনা করব।

এখানে মনে করিয়ে দেই যে, এরিকসনের প্রত্যেকটি পর্যায় সাথে উনার বর্নিত পরবর্তী ধাপ অনেকাংশে নির্ভরশীল।একেকটি ধাপের সফল পরিসমাপ্তির সাথেই পরবর্তী ধাপে সফল সূচনার সম্ভাবণা,এবং এভাবেই সফল জীবনের ধারা বিদ্যমান থাকে।

. বিশ্বাস বনাম অবিশ্বাস পর্যায়:

শিশুর ব্যক্তিত্ব বিকাশের প্রাথমিক পর্যায় হিসেবে এ স্তরটিকে জন্ম থেকে প্রায় ১৮ মাস বয়স পর্যন্ত ধরে নেয়া হয়। এ স্তরে শিশুরা স্বাভাবিকভাবেই অসহায় ও মাতাপিতার উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল থাকে। শিশু যদি আদর ভালোবাসা ও প্রয়োজনীয় যত্ন পায় তবে তার মধ্যে বিশ্বাস নামক বৈশিষ্ট্যটি সুস্পষ্ট হয় এবং সে পৃথিবীতে নিজেকে নিরাপদ মনে করে। যদি আদর ভালোবাসা ও যত্ন না পায় তবে সে নিজেকে অনিরাপদ মনে করে এবং সবার প্রতি তার অবিশ্বাস জন্মে বা জন্মানোর সম্ভাবনা থাকে।

তাই তো দেখবেন,বাচ্চারা মা-বাবা বা খুব ক্লোজ কেয়ার গিভার (care giver) ছাড়া অপরিচিত কারো কোলে যেতে চায় না,কান্নাকাটি করে বা ভয় পায়,কারন সেখানে বিশ্বাসের ঘাটতি থাকে।

. ব্যাক্তিস্বাধীনতা, লজ্জা সন্দেহ পর্যায় :

এ স্তর সাধারনত ১৮ মাস থেকে ৩ বছর বয়স অর্থাৎ প্রাক শৈশবকাল পর্যন্ত। যে বয়সটাকে টডলার বলে,অনেকে টেরিবল টডলার নামেও আখ্যায়িত করে এই বয়সের বাচ্চাদের। বাবা মায়ের ভালোবাসা,যত্ন শিশুদের এই সময় ব্যক্তিগত নিয়ন্ত্রণে দক্ষ করে তোলে। অর্থাৎ পরবর্তী পর্যায়ে শিশুর আত্মনিয়ন্ত্রণের প্রবণতা তথা স্বনির্ভরশীলতা এ পর্যায় থেকেই গড়ে ওঠে। শিশু নিজেকে চিনতে পারে, নিজেকে নিয়ে গর্ব বোধ করে,নিজের পছন্দ অপছন্দ নিয়ে মত প্রকাশ করতে চায়।

পক্ষান্তরে অভিভাবকের যত্ন না পেলে, কিংবা বাচ্চাদের বেশি শাসন করা হলে,তাদের স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষেত্রে মা-বাবা বা অন্য কেউ বাধা দিলে শিশু নিজের উপর সন্দিহান হয়ে পড়ে এবং লজ্জা ও হীণমন্যতা বোধ করে। শিশুদের জেদপূর্ণ  আচরণের সবচেয়ে বেশী প্রকাশ ঘটে এ বয়সে টেম্পার টেনট্রামের মাধ্যমে।

তাই কঠোর নিয়ন্ত্রণ ও শাসন অপেক্ষা শিশুদের পছন্দ ও স্বাধীনতার দিকে গুরুত্ব দেয়া উচিত। বাচ্চারা ভুল করলে বা জেদ করলে মারধোর বা বকা না দিয়ে কিভাবে ব্যাপারটি তাকে বুঝানো যায়,সে ব্যাপারটা বাবা-মা’কে জানতে হবে।

. উৎসাহ বনাম অপরাধবোধ পর্যায়:

এ স্তরের ব্যাপ্তি ৩ বছর বয়স থেকে শুরু করে বিদ্যালয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত অর্থাৎ ৫ বছর বয়স হওয়া পর্যন্ত। এ স্তরে অভিভাবকদের সঠিক পরিচর্যা প্রাপ্ত শিশুরা সক্রিয় খেলার মাধ্যমে তাদের চিন্তা ও কল্পনার বিস্তৃতি ঘটায়, অন্যদের সহায়তা করতে শেখে এবং নেতৃত্ব দিতে ও নেতৃত্ব মেনে চলতে শেখে। তাদের মধ্যে চারপাশের জগৎ নিয়ে কৌতুহল সৃষ্টি হয়,তাই তারা প্রশ্ন করে,জানতে চায়, দেখতে ও বুঝতে চায়।

তাই এ বয়সে বাচ্চাদের তাদের সমবয়সীদের সাথে খেলতে,মিশতে দিতে উৎসাহিত করা উচিৎ। ধৈর্য সহকারে তাদের প্রশ্নের জবাব দেয়া উচিৎ।এই ধাপ সঠিক না হলে  শিশু হতে পারে ভীতু,তার মধ্যে দেখা দিতে পারে বড়দের প্রতি অতি নির্ভরশীলতা এবং নিজের প্রতি অবিশ্বাস।

৪। অধ্যবসায় বনাম হীনমন্যতা পর্যায়:

এ স্তরের ব্যাপ্তি ৬ থেকে ১২ বৎসর পর্যন্ত। এ স্তরে শিশুরা পরিবেশের বিভিন্ন বিষয়ের সাথে সঙ্গতিবিধান ও বন্ধুবান্ধব এবং সহপাঠীদের সাথে সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে নিত্যনতুন আচরণ ও অভিজ্ঞতা আয়ত্ব করে।যেহেতু এ বয়সটা সম্পূর্ণটাই স্কুল এইজ, শিশুরা আগে যেখানে বাবা-মায়ের সাথে থেকে তাদের মানসিক ও আবেগের বহি:প্রকাশ ঘটিয়েছে।এ বয়সে তাকে নিজেই তার বাইরের পরিবেশে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে হয়।

স্কুলে পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন সমস্যা মোকাবেলা করতে ,যেমন: স্কুলে পড়ার প্রতিযোগীতার পাশাপাশি বন্ধুত্ব,বুলিং, নিজেকে শ্রেষ্ট প্রমান করা এসব ব্যাপার কিভাবে সে সামাল দেয়,এটা দেখার বিষয়। এভাবে নতুন কার্য সম্পাদন ও অভিজ্ঞতা আয়ত্ব করার ফলে শিশুর মধ্যে পরিশ্রমী হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায় এবং তার মধ্যে সন্তুষ্টিবোধ ও  সাফল্য উপভোগ করার ইচ্ছা দৃঢ় হয়।

এ সময়টা খুব সেনসিটিভ।যে সব শিশু তাদের পিতামাতা এবং শিক্ষক কর্তৃক উৎসাহিত ও পরিচালিত হয় তারা তাদের দক্ষতার উপর বিশ্বাস স্থাপন করে ও যোগ্যতার উন্নয়ন ঘটায়। যারা তাদের পিতামাতা, শিক্ষক অথবা সতীর্থদের কাছ থেকে উৎসাহ পায় না,বুলিং এর শিকার হয়,তাদের সামর্থ্য নিয়ে কটাক্ষ করা হয়,সেই সব শিশুরা সন্দেহ প্রবণ হয়ে ওঠে,তাদের আত্মবিশ্বাস কমে যায়। তাই এ পর্যায়ে শিশুর কার্য সম্পাদনের সামর্থ্যকে যথাযথভাবে উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করতে হবে।

.আত্মপরিচয়বোধ বনাম ভূমিকার দ্বন্দ্ব পর্যায়:

এ স্তরের ব্যাপ্তি হল বয়ঃসন্ধিকাল অর্থাৎ ১৩ বছর থেকে ১৯ বছর বয়স হওয়া পর্যন্ত। এ ধাপে শিক্ষার্থীরা তাদের স্বকীয়তা ও নিজস্বতার উপলদ্ধি করে। “আমি কে” এই প্রশ্নটির সন্তোষজনক উত্তর দিতে জানে। যারা ব্যক্তিগতভাবে অনুসন্ধানের মাধ্যমে যথাযথ উৎসাহ ও বলবৃদ্ধিকরণ পায় তারা এ ধাপ থেকে বিকাশ লাভ করে, শক্তিশালী ব্যক্তিকরণ এবং স্বাধীনতা ও নিয়ন্ত্রণ অনুভব করে। যারা এভাবে পরিচালিত হয় না তারা নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে ব্যর্থ হয়। নিজের সম্পর্কেও স্পষ্ট ধারণা পোষণ করতে পারে না। তারা ভবিষ্যত সম্পর্কে কোন পরিকল্পণা গ্রহণে, এমনকি সমাজের কাছ থেকে যথাযথ পরিচিতি লাভে ব্যর্থ হয়।

. অন্তরঙ্গতা বনাম একাকীত্ব পর্যায়:

প্রায় বিশ বছর থেকে নিয়ে চল্লিশ বছর বয়স পর্যন্ত একটি লম্বা সময় নিয়ে এই ধাপটি। পূর্ববতী ধাপগুলো সঠিকভাবে অতিক্রান্ত হলে এই বয়সের মানুষগুলো হয় আত্মবিশ্বাসের বলে বলীয়ান।এসময় তারা পেশাগত জীবন ও ব্যাক্তিজীবনে পরিবার ও প্রতিশ্রুতিশীল  সম্পর্ক তৈরী করে।

পরিবার,সামাজিক ও ব্যাক্তিজীবনের এই পর্যায়ে সাফল্য অর্জন শক্তিশালী, অর্থপূর্ণ সংযোগের দিকে পরিচালিত করে। এবং এই সময়ে পারিবারিক ও সামাজিক বোঝাপড়ায় অভাব বা ব্যার্থতা একজন ব্যক্তিকে একাকী এবং পরিত্যক্ত বোধ করাতে পারে।

৭। উৎপাদনশীলতা বনাম স্থবিরতা পর্যায়:

ব্যক্তিত্বের এ মনোসামাজিক বিকাশের এ মধ্য  বয়স্ককাল ৪০-৬৪ বছর পর্যন্ত বিস্তৃত। এ পর্যায়কে উৎপাদনশীলতার সর্বোৎকৃষ্ট সময়কাল হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

এ উৎপাদনশীলতা হতে পারে বিয়ের মাধ্যমে সন্তান উৎপাদন অথবা ভালো কাজের মাধ্যমে সমাজকে কিছু দেয়া বা কল্যানকর কিছু করা। উৎপাদনশীলতার এ প্রক্রিয়া স্বাভাবিক হলে ব্যক্তি দেশ ও সমাজের প্রতি যথার্থ আবদান রাখতে সমর্থ হয়। এই যে অন্যের কল্যাণের জন্য আত্মনিয়োগ করা, একেই মনোবিদ্যার ভাষায় জেনারেটিভিটি বলা হয়। অন্যদিকে এ পর্যায়ে ব্যক্তির স্বাভাবিক কার্যের ব্যতিক্রম ঘটলে উৎপাদনশীলতার পরিবর্তে হতাশা ও স্থবিরতা জন্ম নেয়।

. পূর্ণতা বনাম হতাশা পর্যায়:

৬৫ বৎসর থেকে এর পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত হল এ স্তরের ব্যাপ্তিকাল। মানসিক বিকাশের একেবারে শেষ ধাপে এসে একজন মানুষ পেছনের দিকে তাকাতে শুরু করেন। ৬৫ বছর বয়স থেকে মৃত্যুর আগপর্যন্ত এই সময়টাতে তারা অতীতের হিসাব-নিকাশ করতে থাকেন। শেষ বয়সে এসে তারা চিন্তা করেন, জীবনে তারা তাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পেরেছেন কি না। আর আসলে এর পুরোটাই নির্ভর করে গ্রহণযোগ্যতার উপর। যারা নিজেদের জীবন নিয়ে সন্তুষ্ট, তারা একধরনের পরিপূর্ণতা অনুভব করেন। আর যারা মনে করেন, তাদের কোনো ইচ্ছা অপূর্ণ থেকে গেছে, তারা এ সময় হতাশাগ্রস্ত হন। অতীতের কিছু ভুল তারা এখন চাইলেই শুধরাতে পারবেন না, এ চিন্তা তাদেরকে কষ্ট দিতে থাকে বা অনেকে হতাশায় ভুগতে থাকেন।

বিশেষ করে পূর্ববর্তী ৭ টি ধাপের এক বা একাধিক সঙ্কট সমাধানে ব্যর্থ হলে অনেক মানুষ নিজেকে একজন ব্যর্থ মানুষ হিসেবে আবিষ্কার করে এবং হতাশায় নিমজ্জিত হয়।আবার অনেকে যেটুকু পেয়েছেন তাতেই সন্তুষ্টিবোধ করেন।এই শেষ পর্যায়টাও কিন্তু তার পূর্ববর্তী ধাপগুলো কিভাবে অতিক্রম করেছেন,তার উপর নির্ভর করে।

একজন পূর্ণবয়সী মানুষের জীবন বিশ্লেষন করে কি পেলাম আমরা।আমরা পেলাম,একজন মানুষের জীবনে আবেগ এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই আবেগ এবং মনোসামাজিক ধাপগুলো মানুষের জীবনকে বআ জীবনবোধকে পরিপূর্ণতার দিকে নিয়ে যায়।পরিপূর্ণতা মানেই আত্মতৃপ্তি। জীবনের ধাপগুলো ঘেটে আমরা এটাই দেখি শিশু থেকে পূর্ণবয়স পর্যন্ত আমাদের আবেগ প্রকাশের ম্যাচিউরিটির সাথে কর্মক্ষমতা ও কর্মোদ্যম নির্ভর করে।মধ্যবয়সে সমাজে কিছু দেয়ার মাধ্যমে,মানুষ ও সমাজের সেবার মাধ্যমে যে আনন্দ, আত্মতৃপ্তি আর পরিপূর্নতার সম্মিলন ঘটে,তার শুরুটা হয় কিন্তু জন্মের কিছুদিনের মধ্যেই।

তাই বলবো,আপনার শিশুকে সেবা দিন,শরীর ও মনের। তাকে উৎসাহ দিন,আপনি তার সাথে আছেন সেই নির্ভরতা দিন তার শৈশবে।দেখবেন বড় হয়ে সঠিক কর্মক্ষমতায় ও আনন্দের সাথে সে-ও  সমাজকে -পৃথিবীকে হাজারগুণ সেবা ফিরিয়ে দেবে।

কবি  Kahlil Gibran’এর ভাষায় সে বলতে পারে,
I slept and I dreamed that life is all joy.
I woke and I saw that life is all service.
I served and I saw that service is joy.

Previous articleপ্রায় প্যানিক অ্যাটাক হয়, তাই বিদেশে পড়তে যেতেও ভয় করছে
Next articleমনোরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মো. রেজাউল করিমকে আজীবন সম্মাননা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here