করোনা মহামারীর এই দুঃসময়ে শিশুদের কাছে ঘরে থেকে সময় কাটানোর একটি জনপ্রিয় মাধ্যম হয়ে উঠেছে বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস। আর শিশুদের ভালোলাগা ধীরে ধীরে পরিণত হচ্ছে আসক্তিতে যা তাদের মানসিক বিকাশের পথে এক বড় রকমের বাঁধার সৃষ্টি করছে। তাই এর ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আসা অত্যন্ত জরুরী।
বর্তমান সময়ে করোনা মহামারীর জন্য আমরা সবাইই সারাক্ষণ ঘরের মধ্যেই সময় কাটাচ্ছি। আর ঘরে বসে সময় কাটাতে বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসের ব্যবহার শিশু থেকে প্রাপ্ত বয়স্ক সবার মধ্যেই বেড়েছে। আর বিশেষ করে অনলাইন ক্লাশ শুরু হওয়ায় শিশুদের বেশ খানিকটা সময় এটা নিয়ে থাকতেই হয়। পিতামাতা বিভিন্ন ভাবে তাদের শিশুদের এসব ডিভাইস থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করছে কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে তাদের বেগ পেতে হচ্ছে। শিশুদের মানসিক বিকাশ যেন সুষ্ঠু হয় সেজন্য ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসের নিয়ন্ত্রণ যে কতোটা প্রয়োজন সেটি নিয়েই আজ আলোচনা করবো।
দেখা যায়, সব ধরণের বাধ্যবাধকতাই শিশুদের মানসিক অবস্থার উপর এক ধরণের নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে। সরাসরি কোন কাজে বাঁধা দিলে অভিভাবকদের সাথে সন্তানদের সম্পর্কের অবনতি হওয়ার সম্ভাবনা সর্বাধিক। এতে তাদের মধ্যে জেদ আরও বেড়ে যায়। কিন্তু এই মহামারীর সময়ে যখন ছোট থেকে বড় সবারই মানসিক অবস্থা ঠিক স্বাভাবিক পর্যায়ে নেই সেরকম অবস্থায় ধৈর্য সহকারে তাদের বোঝানো এবং তাদের দিক থেকেও ইতিবাচক সাড়া পাওয়া বেশ কঠিন কাজ হবে। কিন্তু সবার স্বার্থে কিছু কৌশল অবলম্বন করে তাদেরকে বিষয়টি বোঝাতে হবে এবং তাদের স্বার্থেই ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করে এর নেতিবাচক প্রভাব থেকে তাদের দূরে রেখে ইতিবাচক সুবিধা গুলো কাজে লাগাতে হবে।
শিশুদের ইলেকট্রনিক ডিভাইসের ব্যবহার, যেমন মোবাইল ফোন ব্যবহার, ভিডিও গেমস, টিভি দেখা ইত্যাদি ব্যবহারে বিরত বা ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে রাখতে গেলে সর্ব প্রথম যেটি প্রয়োজন সেটি হল এসব জিনিসের উপর থেকে তাদের মনোযোগ সরানো। শিশুরা তখনই এসব জিনিসের উপর আসক্ত হয় যখন তারা একাকী অনুভব করে এবং নিজের মত, সবার থেকে দূরে, একাকী সময় কাটানোর উপায় হিসেবে এসব ব্যবহার করে। এখন এই মহামারীর সময়ে তারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে পারছেনা, বাইরে খেলতে যেতে পারছেনা, বন্ধুদের সাথে দেখা করা বা অন্য স্বাভাবিক কাজকর্ম গুলো করতে পারছেনা। এতে তাদের মাঝে মানসিক চাপ, বিষণ্ণতা, একাকীত্ব এসব সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। আর এই সমস্যার সমাধান হিসেবে তারা এসব ডিভাইস ব্যবহার করে সময় কাটানোর প্রচেষ্টা করছে।
মহামারী যেমন তাদের মানসিক অবস্থার উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে তেমনি ইলেকট্রনিক ডিভাইসের এই মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারে তাদের মাঝে সেসব সমস্যা আরও ঘনীভূত হচ্ছে এবং তাদের মাঝে বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা দেখা দিচ্ছে। তারা অনেক অল্পতে রেগে যাচ্ছে। কথা শুনতে চাইছেনা। খাওয়া দাওয়া করতে চাইছেনা। এমনকি নিদ্রাহীনতার মত সমস্যাও দেখা দিচ্ছে। তাই অভিভাবকদেরকে যদি এই সমস্যার সমাধান করতে হয় তাহলে জোর জবরদস্তি নয় বরং তাদের মানসিক অবস্থা বিবেচনা করে, তাদেরকে বুঝিয়ে এবং তাদের সমস্যার সমাধান করে এই সমস্যার হাল বের করতে হবে। তবেই তারা সঠিকভাবে শিশুদের নির্দেশনা প্রদান করতে পারবে।
শিশুরা যাতে একাকী বোধ না করে সেজন্য তাদের অধিক সময় প্রদান করা উচিৎ। পরিবারের সবাই একসাথে বসে খাবার খাওয়া, আড্ডা দেওয়া, শরীর চর্চা করা ইত্যাদি কাজের মাধ্যমে অভিভাবক এবং সন্তানদের মধ্যাকার মানসিক বন্ধন আরও দৃঢ় করতে হবে এবং শিশুদের মানসিক অবস্থা বুঝে তাদের সাথে সেইভাবে মেশার প্রচেষ্টা করতে হবে। এতে তারা ইলেকট্রনিক ডিভাইস থেকে পরিবারের অন্যান্যদের সাথে সময় কাটাতে আগ্রহী হবে এবং তাদের মানসিক বিকাশ ত্বরান্বিত করাও সহজ হবে। তাদের উপযুক্ত পারিবারিক শিক্ষা প্রদান সম্ভব হবে।
বর্তমানে আমাদের অধিকাংশ কাজই প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে এই মহামারীর সময় বাসায় বসে বাইরের সব কাজ সারার উপায় হিসেবে এই ইলেকট্রনিক ডিভাইস হয়ে উঠেছে এক অন্যতম মাধম। শিশুদের পড়াশুনা সহ বিভিন্ন কাজই এখন অনালাইন নির্ভর। তাই এই দুঃসময়ে এটি আমাদের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে উঠেছে। যে কোন জিনিসের ই অতিরিক্ত ব্যবহার কখনোই ভালো ফল বয়ে আনেনা। আর এটির ক্ষেত্রেও একই কথাই প্রযোজ্য। তাই এর ব্যবহারে আমাদের নিয়ন্ত্রণ আনতে হবে। বিশেষ করে শিশুদের সুস্থ স্বাভাবিক মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে এর নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে