প্যানিক অ্যাটাক বলতে আমরা হঠাত তীব্র ভয় এবং উদ্বেগের একটি অধ্যায়কে বুঝি। অপ্রত্যাশিত ভাবে বারবার প্যানিক অ্যাটাক হলে বা এক মাসের বেশি সময় ধরে এ ধরনের সমস্যার পুনরাবৃত্তি হওয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন হলে তা প্যানিক ডিজঅর্ডার হিসেবে বিবেচিত হবে। ১ থেকে ৩ শতাংশ শিশু কিশোরের প্যানিক ডিজঅর্ডার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
প্যানিক অ্যাটাক অত্যন্ত ভয়ানক অভিজ্ঞতা, বিশেষ করে যদি ভুক্তভোগী শিশু বা কিশোর হয়। নিজের সন্তানকে প্যানিক অ্যাটাক নিয়ে সংগ্রাম করতে দেখা খুবই কষ্টকর। তবে এই বিষয়ে ধারণা থাকলে প্যানিক ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত শিশুকে বাবা-মা’র পক্ষে সাহায্য করা সহজ হয়।
প্যানিক অ্যাটাকের উপসর্গ
প্যানিক অ্যাটাকের কারণে শিশু বিভিন্ন মনস্তাত্ত্বিক উপসর্গ অনুভব করতে পারে। যেমন শিশুটির মনে হতে পারে সে নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছে বা সে আটকা পড়েছে, তার বের হওয়ার কোন রাস্তা নেই ইত্যাদি। এছাড়া কিছু শারীরিক উপসর্গ দেখা যায়। যেমনঃ
- ঝিমুনি ভাব
- দ্রুত হৃদস্পন্দন
- বুকে ব্যাথা
- শ্বাস কষ্ট
- দুর্বলতা
- অতিরিক্ত ঘাম হওয়া
- পেটে ব্যাথা ইত্যাদি ।
সাধারণত, প্যানিক অ্যাটাকের উপসর্গ কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী হয় এবং কিছুক্ষণ পর পর আবার শিশু শান্ত হয়ে যায়।
শিশুর প্যানিক ডিজঅর্ডারের কারণ
১. বংশগত কারণঃ নিকট আত্মীয় (বাবা/মা/ভাইবোনের) প্যানিক ডিজঅর্ডার থাকলে, শিশুর এই অসুখ হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
২. ফোবিয়াঃ ভয় পায় এমন কোন বস্তুর সংস্পর্শে আসলে, শিশুর প্যানিক অ্যাটাক হতে পারে।
৩. অন্যান্য মানসিক রোগ যেমন বিষণ্ণতা, উদ্বেগজনিত ব্যাধি, শুচিবায়ু ইত্যাদি যদি শিশুর থাকে, তবে প্যানিক ডিজঅর্ডার হতে পারে।
৪. আত্মসম্মানবোধের অভাবে অনেক সময় প্যানিক অ্যাটাক হওয়ার সভাবনা বেশি থাকে।
৫. ক্যাফেইন জাতীয় পানীয় প্যানিক অ্যাটাকের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।
চিকিৎসা
শিশুদের প্যানিক ডিজঅর্ডার চিকিৎসায় এস.এস.আর.আই জাতীয় ঔষধের পাশাপাশী সাইকোথেরাপী কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
মূল চিকিৎসায় পাশাপাশী অভিভাবকের করণীয়
১. শিশুর প্যানিক অ্যাটাকের সময় শান্ত থাকুন এবং নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখুন। শিশুর সাথে শান্তভাবে মৃদু স্বরে কথা বলুন। তাকে আশ্বাস দিন তার অনুভূতিগুলো বোধগম্য এবং পরিচিত।
২. শিশুকে প্যানিক অ্যাটাক সম্পর্কে বুঝান। এর কারণ সম্পর্কে তাকে ধারণা দিন। এতে করে প্যানিক অ্যাটাক সম্পর্কে তার ভুল ধারণা বা দুশ্চিন্তা কমবে।
৩. শিশুকে শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম সম্পর্কে ধারণা দিন এবং পরের বার যখন প্যানিক অ্যাটাক হবে তখন তাকে শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করতে উৎসাহ দিন।
৪. শিশুকে তার মনের ভয় মোকাবিলা করতে উৎসাহ দিন। তার প্রশংসা করুন। তাকে ভরসা দিন যে তাকে প্যানিক ডিজঅর্ডার নিয়ে একা সংগ্রাম করতে হবে না। আপনারা তার পাশে সব সময় আছেন।
৫. প্যানিক অ্যাটাকের সময় বাচ্চার মনোযোগ অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিন। তার পছন্দের কোন জিনিস নিয়ে চিন্তা করতে তাকে উৎসাহিত করুন।
৬. প্যানিক অ্যাটাক ঘিরে শিশুর চিন্তাগুলোকে চ্যালেঞ্জ করুন। এগুলো যে সত্য নয়, তা তাকে বুঝান।
৭. শিশুকে আশ্বাস দিন যে সে একা নয়। সব সময় আপনারা তার পাশে থাকবেন তার প্যানিক অ্যাটাকের সময় তাকে সাহায্য করার জন্য। তাই প্যানিক অ্যাটাক হলে সে যাতে বিচলিত না হয়।
শিশুদের প্যানিক ডিজঅর্ডার একটি চিকিৎসাযোগ্য মানসিক রোগ। আতঙ্কিত বা উদ্বিগ্ন না হয়ে পরিবারের সাহায্যে এ রোগ সারিয়ে উঠা সম্ভব।
ডা. সোমাইয়া নাওশীন আহমেদ
সহকারী অধ্যাপক, মনোরোগবিদ্যা বিভাগ
ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।
সূত্রঃ মনের খবর মাসিক ম্যাগাজিন, ৪র্থ বর্ষ, ১০ম সংখ্যায় প্রকাশিত।
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে