করোনা সংকটের ফলে অন্যান্য অনেক পেশার মতো শিল্পীরাও কার্যত একঘরে হয়ে পড়েছেন৷ জার্মানিতে এক অভিনব প্রকল্পের মাধ্যমে তাঁদের একাকিত্ব ও সার্বিক পরিস্থিতির পরিণতি তুলে ধরা হচ্ছে৷
জার্মানির দক্ষিণে ফ্রাইবুর্গ শহরের থিয়েটারের অভিনেতারা পিভিসি পলিমারের তৈরি বিশাল বুদবুদের মধ্যে পারফর্মেন্স দেখাচ্ছেন৷ জার্মান শিল্পী ফ্লোরিয়ান মেনার্টের মাথায় এই আইডিয়া এসেছিল৷ এমন অভিনব মঞ্চায়নের উদ্দেশ্য সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘যেমন সংগীতশিল্পী নিজের বুদবুদের মধ্যে বাজনা বাজালে শুধু নিজেই শুনতে পান৷ অন্যান্য সংগীতশিল্পীর সঙ্গে আদানপ্রদানের কোনো উপায় থাকে না৷ অভিনেতাও শুধু নিজের কণ্ঠ শুনতে পান৷ আমি এভাবে সংস্কৃতি জগতের বিভিন্ন শাখা এবং বয়স্ক মানুষের একাকিত্ববোধ তুলে ধরার চেষ্টা করছি৷’’
করোনা মহামারির কারণে প্রয়োজনীয় দূরত্ব মানুষের উপর কতটা প্রভাব ফেলতে পারে, ‘সোশাল ডিস্টেন্স স্ট্যাক্স’ নামের ছবির প্রকল্পের মাধ্যমে ফ্লোরিয়ান মেনার্ট তা ফুটিয়ে তুলতে চান৷ সামাজিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নৈকট্যের গুরুত্বের প্রতিও তিনি দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন৷ গাছের ডালের মঞ্চসজ্জার মাঝে বুদবুদের মধ্যে ফ্রাইবুর্গের থিয়েটারের অভিনেতাদের তিনি স্থান দিচ্ছেন৷ ভিক্টর কালেরো তাদেরই একজন৷ নিজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘এমন এক বুদবুদে ঢুকে গড়াতে গড়াতে শিঙা তুলে ধরছি৷ তারপর কয়েক বার লাফ মেরে উপরে উঠে বেশ নান্দনিকভাবে দর্শকদের কাছাকাছি উড়ে যাচ্ছি৷ ফলে হাসি পেয়ে গেল৷’’
বাস্তবে অবশ্য সবকিছু এমন এলোমেলো হবে না৷ তবে অভিনেতা-বোঝাই বুদবুদ ঠিকমতো সাজানো মোটেই সহজ কাজ নয়৷ এ ক্ষেত্রে টাইমিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে ফ্লোরিয়ান মেনার্ট বলেন, ‘‘আমাদের এবার ভাবতে হবে, আর একজন কোনদিকে যাবে? তোমাদের খালি বুদবুদে ঢুকতে হবে, তার জন্য আট মিনিট সময় লাগবে৷ আমরা সব বুদবুদ একসঙ্গে ফোলাবো৷’’
অভিনেতারা বিভিন্ন নাটকের কস্টিউম পরে একে একে নিজেদের বুদবুদে প্রবেশ করেন৷ বুদবুদের ভেতরটা ধীরে ধীরে ঝাপসা হয়ে যায় বলে ছবি তোলার জন্য ফ্লোরিয়ানের হাতে মাত্র ১৫ মিনিট সময় থাকে৷ পুরোটাই টিম-ওয়ার্কের ফসল৷
কয়েক সপ্তাহ আগে ফ্লোরিয়ান স্টুটগার্ট শহরের ফিলহার্মোনি অর্কেস্ট্রার সংগীতশিল্পীদের কনসার্টের পোশাক পরে ও বাজনা সঙ্গে নিয়ে বুদবুদে প্রবেশের অনুরোধ করেছিলেন৷ সবাই মিলে সংগীত পরিবেশন করার সময় অভিনব ছবি তোলা হয়েছিল৷ ফ্লোরিয়ান মেনার্ট বলেন, ‘‘আমার কাজের তাড়নার মূলে থাকে এমন এক সমস্যা, যা নিয়ে আমার মাথাব্যথা রয়েছে অথচ কোনো সমাধানসূত্র নেই৷’’
‘সোশাল ডিস্টেন্স স্ট্যাক্স’ প্রকল্পের আওতায় তিনি যে তথ্য সংরক্ষণ কর্মীদেরও ছবি তুলেছেন, সেটা কাকতালীয় ঘটনা নয়৷ কারণ করোনা মহামারির সময় যোগাযোগ আরও বেশি ডিজিটাল হয়ে ওঠার অর্থ কী, সেই প্রশ্নও তাঁকে ভাবাচ্ছে৷
ফ্লোরিয়ান মেনার্ট একজন কনসেপ্ট আর্টিস্ট৷ ২০১৪ সালে তিনি ‘হিউম্যান ট্র্যাক্স’ নামের এক ভিডিও এক্সপেরিমেন্ট প্রকাশ করেন৷ বিশাল আকারে নজরদারির প্রভাবই ছিল সেই শিল্পকর্মের বিষয়বস্তু৷ ২০১৫ সালে তিনি ভিড়ে ঠাসা শরণার্থী আশ্রয় কেন্দ্রগুলির প্রতি নজর আকর্ষণ করতে শরণার্থীদের এক স্তূপ সৃষ্টি করেছিলেন৷ ২০১৯ সালে ‘তথ্যের উপকরণ হিসেবে মানুষ’ শিরোনামে তিনি স্মার্টফোন হাতে কিশোরকিশোরীদের বিষয়বস্তু করেছিলেন৷ এবার স্বচ্ছ বুদবুদ নিয়ে কাজ করছেন তিনি৷ ফ্লোরিয়ান প্রত্যেকটি দৃশ্য ভেবেচিন্তে পরিকল্পনা করেন৷ এক ফটো সিরিজের অংশ হিসেবে খেলোয়াড়রা নিজেদের ছোট গল্প শুনিয়েছেন৷ শুটিংয়ের সময়ে তাঁরা নাটকের ছোট দৃশ্য পরিবেশনা করেছেন৷
কিন্তু কৃত্রিম পিভিসি-বুদবুদের মধ্যে ঠিক কেমন অনুভূতি হয়? সংগীতশিল্পী হিসেবে ফ্রিডেরিকে হেস-গানিয়ঁ বলেন, ‘‘ধ্বনির জন্য একেবারেই ভালো নয়৷ প্রথমেই আমার কান যেন বুজে যাচ্ছিল৷ কিন্তু বেশ ইন্টারেস্টিং অভিজ্ঞতা বটে৷ শেষ পর্যন্ত কী হয়, তা জানতে আমি খুবই আগ্রহী৷ সংগীত পরিবেশনের যে কোনো সুযোগ পেলেই আমরা খুশি৷’’
অত্যন্ত কাকতালীয়ভাবে এই আইডিয়া ফ্লোরিয়ান মেনার্টের মাথায় এসেছিল৷ তিনি বলেন, ‘‘করোনা সংকটের কারণে অন্য একটি প্রকল্প আমি করতে পারি নি৷ সেখানেও ফোলানো বস্তু নিয়ে কাজ করার কথা ছিল৷ সে বিষয়ে গবেষণা করতে গিয়ে বাতাসভরা বুদবুদের সন্ধান পেয়েছিলাম৷’’
করোনা মহামারির কারণে ফ্লোরিয়ান মেনার্ট নিজের ছবিগুলি আপাতত শুধু ডিজিটাল পদ্ধতিতে নিজের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করছেন৷ পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে তিনি স্টুটগার্ট শহরের ব্যালের নর্তকীদের ছবি তুলবেন৷ ২০২১ সালে সম্ভব হলে তিনি এক প্রদর্শনী আয়োজন করে ছবিগুলি দেখাতে চান৷
সূত্র: ডয়চে ভেলে।
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে