জার্মানির স্বাস্থ্যবীমা প্রতিষ্ঠান টেকনিকার ক্রাংকেনকাসের এক সমীক্ষা থেকে জানা গেছে, জার্মানির ৬০ শতাংশ মানুষ চাপ বা স্ট্রেসের সম্মুখীন। তবে এই চাপটা ভুক্তভোগীরা অনেক সময় নিজেরাই সৃষ্টি করেন বলে ধারণা করা হয়েছে।
সমীক্ষায় সারা জার্মানির ১০০০ নারী পুরুষকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়৷ ফলাফলে দেখা গেছে বিশেষ করে নারীরাই স্ট্রেসের শিকার৷ আনুমানিক ৬৩ শতাংশ মেয়ে ও ৫৩ শতাংশ পুরুষ এই সমস্যায় ভুগছেন৷
পেশাগত দায়িত্ব, নিজের দক্ষতা প্রমাণ করার চেষ্টা ইত্যাদি কারণে কর্মক্ষেত্রে চাপের সৃষ্টি হয়৷ তবে অঞ্চলভেদে জার্মানিতে চাপের অনুভূতিও একেক রকমের৷ উত্তরাঞ্চলের তুলনায় দক্ষিণের রাজ্যগুলিতে মানুষ এক্ষেত্রে সংবেদনশীল৷
ডর্টমুন্ডের একটি ক্লিনিকের মনোরোগ চিকিৎসক হান্স ইওয়াখিম টিম বলেন, স্ট্রেস, বার্ন আউট, ডিপ্রেশন ইত্যাদি আজ কর্মপ্রতিষ্ঠানগুলিতে বিশেষ সমস্যা সৃষ্টি করে৷
কর্মীরা এই ধরনের মানসিক অসুস্থতার কবলে পড়েন বলে খরচও কম পড়ে না৷ তাই বীমা কোম্পানিগুলিকে এখন নড়েচড়ে বসতে হচ্ছে৷ মনোচিকিত্সক ড. টিম জানান, ‘‘স্ট্রেস সেই অর্থে কোনো অসুখ নয়৷ কিন্তু স্ট্রেস থেকে শারীরিক ও মানসিক রোগ দেখা দিতে পারে৷” যেমন দেখা দিতে পারে কার্ডিওভাসকুলার সমস্যা, আলসার, ডিপ্রেশন ইত্যাদি৷ ‘‘আমাদের রোগীদের ৩০ শতাংশই ডিপ্রেশনের শিকার৷” লোকে বার্ন আউটের কথা বললে মন দিয়ে শুনতে হয় কথাটা৷ কেননা ডিপ্রেশনকে অনেকে বার্নআউট বলতে পছন্দ করেন৷ এতে নিজেকে নিবেদিতপ্রাণ এক কর্মী বলে উপস্থাপন করা হয়৷ যদিও ডিপ্রেশন ও বার্ন আউট দুটো দুই ধরনের রোগ৷ রোগগুলির জন্য ভিন্ন ভিন্ন ধরনের থেরাপিও প্রয়োজন৷
পুরুষদের তুলনায় মেয়েরা স্ট্রেসে ভোগেন বেশি৷ এর কারণ মেয়েদের পরিবার ও পেশা এই দুইয়েরই ভার বহন করতে হয়৷ কর্মক্ষেত্রে বেতনও পুরুষদের তুলনায় কম পান তারা, পদোন্নতিও কম হয়৷
এছাড়া, মেয়েরা কোনো সমস্যা হলে ভুলটা নিজের মধ্যেই খোঁজার চেষ্টা করেন৷ আর পুরুষরা ত্রুটি খোঁজেন অন্যের মধ্যে৷
পারিবারিক ও কর্মজগতে স্ট্রেস বেড়ে চলেছে
আজকাল পারিবারিক ও কর্মজগতে যে স্ট্রেস বেড়ে চলেছে, তার কারণও রয়েছে অনেক৷ নতুন নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার, দ্রুত গতিতে সব কিছু করার প্রবণতা, কোনো কাজেই ‘না’ বলতে না পারা ইত্যাদি৷ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই চাপ নিজেই সৃষ্টি করে মানুষ৷ মনোরোগ বিশেষজ্ঞ টিম পরামর্শ দেন, ‘‘মনে রাখতে হবে ৮০ শতাংশ কাজ করাই যথেষ্ট৷ এছাড়া সব কাজ নিজে করার চেষ্টা না করা, অন্যান্যদের মধ্যেও কাজ ভাগ করে দেওয়া শিখতে হবে৷ সফল হলে পুরস্কৃত করতে হবে নিজেকেই৷”
জার্মান সাইকোলজিক্যাল অ্যাকাডেমির ব্যবস্থাপনা পরিচালক গ্যুন্টার কখ ডয়চে ভেলের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘মানুষের পারিবারিক জীবনেও অনেক পরিবর্তন হয়েছে৷ ২০ বছর আগেও সন্তানরা মা-বাবার জীবনযাত্রার সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা করত৷ আজ একেবারে উল্টো৷ মা বাবারাই ছেলে-মেয়েদের জীবনযাত্রার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে চেষ্টা করেন৷ মা বাবা হিসাবে দায়িত্ব পালনের সাথে সাথে বাচ্চাদের অবসর বিনোদনের জন্য বিভিন্ন জায়গায় গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যাওয়া এসবও করতে হয় তাদের৷”
এছাড়া আজকাল মোবাইল টেলিফোন, এসএমএস, ইন্টারনেট, চ্যাট ইত্যাদিতে ব্যতিব্যস্ত মানুষ৷ ছুটিছাটায় বা নিরিবিলিতে থাকার একটুও অবকাশ যেন নেই৷
জার্মানদের স্ট্রেসের ফাঁদ থেকে রক্ষা করার জন্য স্বাস্থ্যবীমা প্রতিষ্ঠানগুলি এখন সচেষ্ট হচ্ছে৷ টেকনিকার ক্রাংকেনকাস-এর মুখপাত্র ডরোথি ময়েশ এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘আমাদের স্কুল কলেজ ও অফিস আদালত থেকে শুরু করতে হবে৷
সূত্র: ডয়েচ ভেলে