২০১৪ সালে ৭৪ কোটি ১১ লাখ টাকা ব্যয়ে অটিজম ও স্নায়ুবিকাশজনিত সমস্যায় আক্রান্তদের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ জাতীয় একাডেমি প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। নানা জটিলতায় তা আর হয়নি। বিশেষ করে একাডেমির স্থায়ী ভবন নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় জমি পাওয়া যায়নি। অবশেষে রাজধানীতেই হচ্ছে ন্যাশনাল অটিস্টিক একাডেমি। সেই প্রকল্প সংশোধন করে আবারও নেওয়া হয়েছে একটি প্রকল্প। ‘ন্যাশনাল একাডেমি ফর অটিজম অ্যান্ড নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅ্যাবিলিটিজ (২য় সংশোধিনী)’ নামের এ প্রকল্প গত ৩০ অক্টোবর অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির বৈঠকে অনুমোদনও পেয়েছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশের অটিজম ও এনডিডি (নিউরো ডেভেলপমেন্ট ডিজঅর্ডার) আক্রান্তরা সমাজে এখনও সুবিধাবঞ্চিত হিসেবে বিবেচিত। সমাজে যেসব মানুষ সুবিধাবঞ্চিত, তাদের সম-অধিকার দেওয়া রাষ্ট্রের সাংবিধানিক দায়িত্ব। সুতরাং অটিজম ও এনডিডি আক্রান্তদের সমাজের মূল স্রোতধারায় অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্যে উপযুক্ত ও কার্যকর সেবা ও সমর্থন নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। অটিজম এবং নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅ্যাবিলিটিজ বর্তমান সমাজে শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের মানসিক বিকাশে অন্তরায় হলেও এ বিষয়ে দেশে বিদ্যমান স্বাস্থ্যসেবার ব্যাপ্তি খুবই সীমিত। এ সমস্যা নিরসনে সরকার দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ বলেই প্রকল্পটি গ্রহণ করেছে।’
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) সূত্রে জানা গেছে, অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার (এএসডি) এবং নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅ্যাবিলিটিজ শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মূলধারায় অন্তর্ভুক্ত করতেই নির্মাণ করা হবে জাতীয় অটিস্টিক একাডেমি। এই একাডেমির মাধ্যমে এএসডি ও এনডিডি আক্রান্তদের বৃত্তিমূলক ও অন্যান্য প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সক্ষম করে গড়ে তোলা হবে। এএসডি ও এনডিডি আক্রান্তদের আবাসিক সুবিধা দেওয়া হবে। একাডেমির আওতায় এএসডি ও এনডিডি আক্রান্তদের জন্য উপযুক্ত আইসিটি প্রশিক্ষণও নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। শিক্ষক, অভিভাবক ও অন্যান্য অংশীদারদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতেও নির্মিতব্য জাতীয় একাডেমি কার্যকর উদ্যোগ নেবে। বাংলাদেশে তৃণমূলপর্যায়ে সহায়তা প্রদানের জন্য একটি বিশেষ শিক্ষক ও অভিভাবক প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠা করা এবং খেলাধুলা, সংগীত, শিল্প এবং পেশাগত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এএসডি ও এনডিডি আক্রান্তদের বিকল্প দক্ষতা প্রদান করা হবে জাতীয় অটিস্টিক একাডেমির কাজ। জাতীয় অটিস্টিক একাডেমির জন্য স্থায়ী ভবন নির্মিত না হওয়া পর্যন্ত প্রয়োজনে একাডেমির কাজ ঢাকায় ভাড়া বাসায় পরিচালিত করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ‘ন্যাশনাল একাডেমি ফর অটিজম অ্যান্ড নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅ্যাবিলিটিজ (২য় সংশোধিনী)’ প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৪২২ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকেই বরাদ্দের এই অর্থ যোগান দেওয়া হবে। প্রকল্পটি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের আওতায় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর বাস্তবায়ন করবে।
প্রকল্পের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, প্রকল্পটি ২০২৩ সালের ৩০ জুন নাগাদ মেয়াদকালের মধ্যে বাস্তবায়িত হবে। প্রকল্পের আওতায় একাডেমিক কাম প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ করা হবে ১টি (এটি হবে ১৫তলা ভিত বিশিষ্ট ১৫তলা)। একাডেমি ভবনে অডিটোরিয়াম নির্মাণ করা হবে ১টি (২৫তলা ভিত বিশিষ্ট আপাতত দুইতলা)। থাকবে জিমন্যাশিয়াম ও সুইমিং পুল। জাতীয় একাডেমির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য স্টাফ কোয়ার্টার নির্মাণ করা হবে ১টি (১০ তলা ভিত বিশিষ্ট ১০ তলা)। ১০০ আসন বিশিষ্ট দু’টি পৃথক বয়েজ ও গার্লস হোস্টেল নির্মাণ করা হবে দু’টি (প্রতিটি হবে পাঁচতলা ভিত বিশিষ্ট পাঁচতলা)। জাতীয় অটিস্টিক একাডেমির মহাপরিচালকের জন্য দুইতলা ভিত বিশিষ্ট দুইতলা বাসভবন নির্মাণ করা হবে। একাডেমির নিজস্ব সাব-স্টেশন এবং পাম্প হাউস নির্মাণ করা হবে একতলা ভিত বিশিষ্ট একটি একতলা ভবন। এ ছাড়া, একাডেমির সীমানা প্রাচীর, অভ্যন্তরীণ সড়ক নির্মাণ করা হবে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০১৪ সালে দেশের অটিস্টিক শিশুদের উন্নয়নের জন্য ৭৪ কোটি ১১ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয় ধরে ‘অটিস্টিক একাডেমি স্থাপন’ শিরোনামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে সরকার, যা বাস্তবায়নের লক্ষ্য ঠিক করা হয় ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর। প্রকল্পটি ২০১৪ সালের ৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (একনেক) নির্বাহী কমিটিও অনুমোদন দেয়। পরবর্তী সময়ে প্রকল্পের কর্মপরিধি বৃদ্ধি পাওয়ায় এর আওতায় অবকাঠামো সম্প্রসারণ, জনবল বৃদ্ধিসহ ‘ন্যাশনাল একাডেমি ফর অটিজম অ্যান্ড নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল ডিজ-অ্যাবিলিটিজ (১ম সংশোধিত)’ শিরোনামে অপর একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ৩৫০ কোটি ৬ লাখ টাকা। প্রকল্পটি ২০১৬ সালের ২৪ মে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় অনুমোদন পায়, যা বাস্তবায়নে লক্ষ্য ঠিক করা হয় ২০১৯ সালের ৩১ জানুয়ারি। কিন্তু ওই প্রকল্পের আওতায় জমি বরাদ্দ প্রক্রিয়ায় দেরি হওয়ায় নির্ধারিত মেয়াদের মধ্যে অবকাঠামো তৈরি করে অস্টিস্টিক শিক্ষার্থীদের সরাসরি সেবা প্রদান করা সম্ভব হয়নি। এ প্রেক্ষিতে ‘ন্যাশনাল একাডেমি ফর অটিজম অ্যান্ড নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল ডিজ-অ্যাবিলিটিজ (২য় সংশোধিনী)’ নামের প্রকল্পের ডিপিপিতে উল্লেখিত মূল একাডেমির সেবা কার্যক্রম অস্থায়ীভাবে পরিচালনার জন্য ভাড়া করা বাসার মাধ্যমে সেবা প্রদানের বিষয়টি অন্তভুক্ত করা হয় এবং এর ব্যয় ধরা হয় ৪২২ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য সময় নির্ধারণ করা হয় ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। এটি প্রকল্পের ২য় সংশোধনীর প্রস্তাব।