যৌন মিলনের মাত্রা এবং মানসিক সন্তুষ্টি

0
461
যৌন মিলনের মাত্রা এবং মানসিক সন্তুষ্টি
যৌন মিলনের হার কি আমাদের মানসিক সন্তুষ্টির উপর নির্ভরশীল নাকি আমাদের দৈনন্দিন জীবন আচরণ এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থার উপর নির্ভরশীল? যৌন মিলনে অংশ নেবার হারের সাথে যেসব সত্য জড়িয়ে আছে সেগুলো নিয়ে আজ আমরা জানতে চেষ্টা করবো।

যৌন জীবন এবং সম্পর্কের সাথে যে প্রশ্নটি খুব সাধারণভাবে জড়িয়ে থাকে সেটি হল দম্পতিদের ঠিক কতবার যৌন মিলন করা স্বাভাবিক এবং এই মাত্রা কিসের কিসের উপর নির্ভরশীল। কোন কোন দম্পতি আছেন যারা মাসে কয়েকবার যৌন মিলন করেন; এটা কি স্বাভাবিক? আবার অনেকে সপ্তাহে একবার যৌন মিলন করেন; তাহলে তাদের কি এই মাত্রা বাড়ানো উচিত? আবার কেউ যদি দুই তিন মাসে এক বারও যৌন মিলনের সুযোগ না পায় তাহলে কি তারা কোন মানসিক বা শারীরিক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়তে পারে? অন্য দিকে অনেকে প্রতি দিন এক বা একাধিক বার যৌন মিলনের সুযোগ পান, তাদের জীবন কি স্বাভাবিক?

যার যার যৌন জীবন নিয়ে এসব প্রশ্নের উত্তর যৌন জীবন এবং মানব সম্পর্কবিদদের কাছে রয়েছে এবং তারা খুব সহজভাবে এসব প্রশ্নের উত্তর বিভিন্ন গবেষণার মাধ্যমে খুঁজে বের করেছেন। তাদের মতে মানুষের যৌন আচরণ এবং যৌন মিলনের হার প্রকৃতপক্ষে তাদের সামাজিক ও পারিপার্শ্বিক অবস্থার উপর যেমন নির্ভর করে তেমনি মানসিক সন্তুষ্টির উপরেও নির্ভর করে। এক্ষেত্রে একের সাথে অপরের যৌন মিলন এবং যৌন জীবনের তুলনার কোন সুযোগ নেই। মানুষ হিসেবে এই তুলনা করার মানসিকতা থাকা স্বাভাবিক হলেও, এর প্রকৃতপক্ষে কোন বাস্তব ভিত্তি নেই। মানুষের সাথে মানুষের ব্যক্তিত্ব, মানসিকতা এবং জীবন ব্যবস্থার যে ভিন্নতা সেটি যৌন জীবনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

যৌন মিলনের হার প্রতিটা মানুষের জীবনে ভিন্ন ভিন্ন এবং স্বাভাবিকভাবেই মানসিক সন্তুষ্টির সাথে যৌন মিলনের হার এবং সম্পর্ক ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে। এমনই কিছু কিছু সাধারণ কারণ নিচে উল্লেখ করা হল যেগুলো যৌন সম্পর্কের বিভিন্ন দিককে নিয়ন্ত্রণ করে।

১) কোনটি আপনার জন্য স্বাভাবিক?
সময়ের সাথে সাথে প্রতিটা সম্পর্কেই পরিবর্তন আসে কিন্তু অধিকাংশ দম্পতীই এই পরিবর্তনকে একটি নিয়মের মাঝে রেখে সামনে এগিয়ে যান। যদি এই নিয়ম বা অভ্যাসে পরিবর্তন আসে তাহলে বুঝতে হবে হয়তো কোথাও কোন কিছু পরিবর্তনের প্রয়োজন রয়েছে। একটু সময় নিয়ে শান্ত মনে ভেবে দেখুন যৌন মিলনের হার কেন কমেছে বা কেন বেড়েছে। এর কারণ গুলি ঠিক কি কি সেগুলো খুঁজে বের করার প্রয়াস করুন। একই সাথে এটি আপনার এবং আপনার সঙ্গীর মানসিক ও শারীরিক কোন সমস্যার কারণ হয়ে উঠছে কি না সেটি নিয়ে পর্যালোচনা করুন। যদি সমস্যা সৃষ্টি করে তবে আগের অভ্যাসে ফিরে যেতে কি কি পরিবর্তন বা পরিমার্জনের প্রয়োজন রয়েছে সেগুলো করুন। আর সমস্যা না হলে স্বাভাবিক ভাবেই নিত্য জীবনের অংশ করে নিন। এই কাজগুলোই আপনার যৌন জীবনের জন্য স্বাভাবিক হিসেবে গণ্য হবে।

২) যৌন মিলনের হার কম বা বেশির আর কি কি কারণ হতে পারে?
বেশ কিছু কারণেই যৌন মিলনের হারে ভিন্নতা আসতে পারে। সামাজিক জীবন ব্যবস্থার পরিবর্তন অনেক ক্ষেত্রেই এতে বড় ভূমিকা রাখে। যেমন, দম্পতি থেকে অভিভাবক হয়ে ওঠা, চাকরী বা ব্যবসার কারণে বাসস্থান পরিবর্তন ইত্যাদি। গবেষণায় দেখা গেছে দম্পতিরা যখন সন্তান লাভ করেন এবং পিতা মাতার দায়িত্ব পালন শুরু করেন তখন তাদের আগের যৌন জীবন ধরে রাখা সম্ভব হয়না এবং যৌন মিলনের হার কমে যায়। এক্ষেত্রে দম্পতী থেকে পিতামাতা হওয়ার এই যাত্রায় যে মানসিক পরিবর্তন, শারীরিক পরিবর্তন আসে সেগুলি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে প্রথম সন্তানের জন্ম যৌন মিলনে মানসিক প্রশান্তিতে কোন প্রকার প্রভাব না ফেললেও যৌন মিলনের হারে প্রভাব রাখে কারণ দম্পতীদের যৌন জীবনের সংজ্ঞাই এ সময় পরিবর্তিত হয়ে যায়। এভাবেই মানসিক সন্তুষ্টি এবং জীবনের বিভিন্ন দিকের পরিবর্তন স্বাভাবিকভাবেই যৌন জীবনে পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে।

৩) আপনি কি সন্তুষ্ট?
গবেষণা বলে যে, দম্পতিদের জন্য যৌন মিলনের হারের তুলনায় যৌন মিলনে মানসিক সন্তুষ্টির হার বেশী গুরুত্বপূর্ণ। তাই দিন, সপ্তাহ বা মাসে যৌন মিলনের হার হিসেব না করে বরং মানসিকভাবে আপনি আপনার যৌন জীবনে যৌন মিলন নিয়ে সন্তুষ্ট কি না সেটি নিয়ে ভাবুন। অন্যদের সাথে তুলনা করে নিজের যৌন জীবনে পরিবর্তন নিয়ে আসার মানসিকতা না রেখে নিজের ও সঙ্গীর মানসিক সন্তুষ্টিকে বেশী গুরুত্ব প্রদান করুন।
তাই বলা যায়, দম্পতীদের যৌন মিলনের হার অন্য কারও জীবন যাপনের সাথে তুলনা করে নয় বরং যৌন জীবনে তাদের মানসিক সন্তুষ্টির উপর নির্ভরশীল হওয়া উচিত। এটাই যৌন জীবনে সুখী হবার মূল কেন্দ্রবিন্দু হওয়া উচিত।

করোনায় স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে

 

Previous articleকঠিন কথা সহজে বলার কৌশল
Next articleনৈতিক শিক্ষা এবং মানসিক সুস্থতা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here