মানসিক স্বাস্থ্য যেখানে এখনও ট্যাবু

আফ্রিকার শীর্ষ দশ বিষাদগ্রস্ত দেশের একটি কেনিয়া৷ সেখানে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আলোচনাকে এখনো ভালো চোখে দেখা হয় না৷ এই ট্যাবু ভাঙার চেষ্টা করছেন এক দম্পতি, যাঁদের ছেলে সম্প্রতি ডিপ্রেশনে ভুগে মারা গেছে৷
জোসিয়ার বাবা মেজর মাইক কারিউকি জানান, ‘‘গতবছর মে মাসের ৩ তারিখে আমরা ছেলেকে হারাই৷ তার বয়স ১৮ হয়েছিল৷ জোসিয়া ডিপ্রেশনের সঙ্গে লড়ছিল৷ সে একজন বিশেষজ্ঞ পরামর্শকের অধীনে ছিল এবং বিষাদ কাটিয়ে ওঠার সব লক্ষণ তার মধ্যে দেখা গিয়েছিল৷ একসময় আমরা যুক্তরাজ্যে গেলে সে তার জীবন নিয়ে নেয়৷ আমরা খুবই অবাক হয়েছিলাম৷”
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, কেনিয়ার প্রতি চারজনে অন্তত একজনের জীবনের কোনো এক পর্যায়ে মানসিক অসুস্থতায় ভোগার আশঙ্কা রয়েছে৷ দেশটিতে মানসিক স্বাস্থ্য এখনো ট্যাবু বিষয়৷ তাই কারিউকি দম্পতিকে তাঁদের সন্তান নিয়ে লড়তে হয়েছে একা৷ জোসিয়ার মা ক্যাথেরিন কারিউকি জানান, ‘‘মা-বাবা হিসেবে আমরা ছেলের মধ্যে কোন লক্ষণটা খেয়াল করিনি, কিংবা কী ভুল করেছি, তা বুঝতে অন্য মা-বাবাদের সঙ্গে আলোচনা করার উপায় নেই৷ কারণ এই বিষয়ে কেউ কথা বলে না৷”
মেজর মাইক কারিউকি বলেন, ‘‘মানসিক সমস্যাকে এখানে কেউ রোগ হিসেবে দেখে না.. মানুষ মনে করে, এটা একটা লজ্জার বিষয়৷”
ডা: ভিক্টোরিয়া মুখোমা বলেন, কলঙ্কের কথা ভেবে মানুষ প্রথমে চিকিৎসা করাতে চায় না৷ পরে সমস্যা বেড়ে গেলে ডাক্তারের কাছে যায়৷ কিন্তু তখন সঠিক চিকিৎসা দেয়া কঠিন হয়ে পড়ে৷ তিনি বলেন, ‘‘৪০ মিলিয়ন কেনীয় নাগরিকের জন্য মাত্র একশ’ জনেরও কম মনোচিকিৎসক আছেন৷ এদের অর্ধেকই আবার রাজধানী নাইরোবিতে থাকেন৷ অর্থাৎ, কেনিয়ার বেশিরভাগ এলাকায় কোনো মানসিক স্বাস্থ্যকর্মী নেই৷”
এ কারণে তরুণ রোগীদের পরামর্শ নেয়ার মূল ভরসা হয়ে উঠেছে ইন্টারনেট৷ ডিজাইনার ফ্রাংকলিন সাইয়ালেল একসময় ডিপ্রেশনের রোগী ছিলেন৷ এখন অনলাইন মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করছেন৷ সামাজিক মাধ্যমে তাঁর প্রভাব কাজে লাগিয়ে তিনি আলোচনায় উৎসাহ দেয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে রোগীদের সংযোগ ঘটান৷ সাইয়ালেল বলছেন, ‘‘গত কয়েক মাসে বেশ কয়েকজন ইনবক্সে আমার কাছে পরামর্শ চেয়েছেন, যা আমার ভালো লেগেছে৷ তবে একই সময়ে ভয়ও পেয়েছি, কারণ, আমি তো পেশাদার কেউ নই৷ আমি তো জানিনা কীভাবে সহায়তা করতে হবে৷ তখন আমি ‘কন্টাক্ট’ জোগাড় করা শুরু করি এবং ঐ রোগীদের সঙ্গে এই কন্টাক্টদের যোগাযোগ করিয়ে দেই৷ এভাবে অন্তত কয়েকজনের তো জীবন বাঁচবে৷”
ছেলের মৃত্যুর পর কারিউকি দম্পতি ছেলের নামে একটি ফাউন্ডেশন গড়ে তুলেছেন, যার লক্ষ্য, তরুণ কেনীয়দের বলা, ‘ঠিক না থাকাটাও ঠিক’৷
সূত্র: ডয়চে ভেলে

Previous articleপুরুষের আধিপত্যে কর্মক্ষেত্রে নারীর মানসিক চাপ
Next articleস্ট্রেস বা মানসিক চাপ কমানোর সেরা কিছু কৌশল

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here