মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক গোলটেবিল বৈঠক ‘বাংলাদেশের মানসিক স্বাস্থ্য: প্রত্যাশা ও বাস্তবতা’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলা ভাষায় মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রথম অনলাইন পোর্টাল ‘মনের খবর’ এর আয়োজনে শনিবার (৪ আগষ্ট) সকালে রাজধানীর বাংলামোটরের বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়।
এ গোলটেবিল বৈঠকে মানসিক স্বাস্থ্যের বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেছেন বিভিন্ন মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা। এখানে উপস্থিত থেকে কথা বলেছেন ডা. মো. তৈয়ব রহমান, ডা. সাখাওয়াত হোসেন সায়ান্ত, ডা. সাকালাইন, ডা. সালাউদ্দিন কাউসার বিপ্লব, ডা. ফাইসা, ডা. শারমিন আক্তার সুমি, অধ্যাপক ডা. সাইদুর রহমান, ডা. বায়োজিদ ও মিডিয়া সেলিব্রেটি আফসানা মিমিসহ বিভিন্ন টেলিভিশন এবং পত্রিকার স্বাস্থ্য বিষয়ক অনুষ্ঠানের উপস্থাপক/সমন্বয়কারীগণ।
এ ছাড়াও অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে ছিলেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. ঝুনু শামসুন্নাহার, অধ্যাপক ডা. মোহিত কামাল ও অধ্যাপক ডা. মোস্তাফিজুর রহমান।
এ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ক্লিনিকেল সাইকোলজিস্ট ডা. কামাল চৌধুরী, অধ্যাপক ডা. সালাউদ্দিন কাউসার বিপ্লব, ফিজিশিয়ান সাইদুর রহমানসহ অনেকে। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেছেন নাট্যব্যক্তিত্ব আজাদ আবুল কালাম।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ডা. মো. তৈইয়ব রহমান একটি প্রজেন্টেশনের মাধ্যমে মানসিক রোগের বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেন। সেখানে থেকেই বিভিন্ন বিষয় ধরে অন্যরা কথা বলতে শুরু করেন।
ডা. সাখাওয়াত হোসেন সায়ান্ত বলেন, মানসিক রোগীর ডাক্তারদের আমাদের দেশে এখনো পাগলের ডাক্তার বলা হয়। এই রোগটি আমাদের দেশে গুপ্ত অবস্থায় আছে। কারণ, আমাদের কাছে একজন রোগীরা তখনই আসে যখন তাকে সমাজ পাগল বলে অভিহিত করে। আমরা এমন রোগী কমই পাই, যারা অসুস্থতার শুরুতে আসে। প্রচুর সীমাবদ্ধতার পরেও বর্তমানে মিডিয়া এই রোগের কথা প্রচার করছে। যার ফলে যারা ধারণা করছেন যে মানসিক সমস্যায় ভুগছেন, তারা বিভিন্ন ডাক্তারের কাছ থেকে কাউন্সিলিং করাচ্ছেন। এটা খুবই ভালো।
অধ্যাপক ডা. ঝুনু শামসুন্নাহার বলেন, সুইসাইডের একটি প্রধান কারণ হচ্ছে ডিপ্রেশন। এই ডিপ্রেশন থেকে আমরা কিভাবে বেরিয়ে আসবো সেটা শুধু মনোরোগ বিশেষজ্ঞ নন, এটা সকল চিকিৎসকের জানা প্রয়োজন। আমাদের রুরাল এরিয়া পর্যায়ে মেন্টাল হেল্থ বিষয়ে কোনো সার্ভিস নাই। তাই আমরা যদি একজন করে ধরে এ বিষয়ে পরিপূর্ণ তথ্য দেই, সে যদি আরো দশজনকে জানায়, তবে এভাবে সবাই জানতে পারবে। আমার কাছে মনে হয়, এভাবে যদি সকলকে ডিপ্রেশন বিষয় সবাইকে জানানো যায় তবে ডিপ্রেশনের রোগীকে সহজেই ভালো করে তোলা সম্ভব হবে।
সাইকোলজিস্ট ডা. কামাল চৌধুরী বলেন, যতিদন আমাদের আশা থাকবে আমরা ততদিন সামনে আগাতে থাকবো। আশা না থাকলে আমরা ডিপ্রেশ হয়ে যাবো। ডায়বেটিস হলে আমরা বলতে আপত্তি করি না। কিন্তু ডিপ্রেশন আমরা লুকিয়ে রাখি। যদি কেউ ডিপ্রেশনে ভোগে, তবে তাকে মেন্টালি সাপোর্ট দিতে হবে সবাইকে। তাহলেই সবাই আগাতে পারবো। পাশাপাশি তাকে সম্মান করতে হবে।
আফসানা মিমি বলেন, মানসিক স্বাস্থ্য ব্যাপারটা আমাদের জন্য একটি ভাববার বিষয়। আমি নিজেও শিশুদের নিয়ে কাজ করছি। তাদের মানসিক অবস্থা বোঝার চেষ্টা করি। আমাদের এখানে যারা আসে তাদেরকে কখনো বলি না যে, তুমি এটা বলবে, তুমি এটা শিখবে। এবং এই কথাটি তাদের বাবা-মা কেউ বলি। ওদের সিদ্ধান্ত ওদের নিতে দেন। ওদের যেটা খুশি সেটাই করে। দিন শেষে বুঝতে পারি, ওরা বাবা-মায়ের সঙ্গ চায় স্বাধীনভাবে।
বাংলা ভাষায় মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রথম অনলাইন পোর্টাল ‘মনের খবর’ মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা তৈরিতে এবং সঠিক মানসিক স্বাস্থ্যসেবা সর্বস্তরে পৌঁছে দিতে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে।
অনলাইনের পাশাপাশি মাসিক ম্যাগাজিন প্রকাশসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সভা সেমিনারের মাধ্যমে মনের খবর চেষ্টা করে যাচ্ছে সর্বস্তরের মানুষকে মানসিক স্বাস্থ্যসেবায় সম্পৃক্ত করতে। একই সাথে মনের খবর ইংরেজি ভার্সনের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানসিক স্বাস্থ্যসেবার বিষয়াবলী আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের প্রচার করে যাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় আজকের এই গোলটেবিল বৈঠক। অনুষ্ঠানটি আয়োজনে সহযোগীতা করেছে ইনসেপ্টা ফার্মাসিটিক্যাল লিমিটেড।
আপ-এইচএন