রোগীর মানসিক রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে বাংলায় রেটিং স্কেল নির্ধারণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগবিদ্যা বিভাগ।
কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিভাগটির আয়োজনে বিএসএমএমইউ এর শহীদ ডা. মিলন হলে আজ (২৫ এপ্রিল) বৃহ:বার “Diissemination Program On Research Instruments” শীর্ষক বৈজ্ঞানিক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
কর্মশালায় দেশের বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি হাসপাতাল ও মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজের সাইকিয়াট্রিস্টরা অংশগ্রহণ করেন।
কর্মশালায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের বর্তমান পরিচালক অধ্যাপক ডা. মোহিত কামাল এবং সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. ফারুক আলম। চেয়ারপার্সন হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএসএমএমইউ এর মনোরোগবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সালাহ্উদ্দিন কাউসার বিপ্লব।
ডা. ফাতেমা তুজ জোহরা জ্যোতির এর সঞ্চালনায় সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন মনোরোগবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও খ্যাতনামা মনোচিকিৎসক ডা. ঝুনু শামসুন্নাহার। তিনি বলেন, আমরা মনোরেগাবিদ্যা বিভাগের পক্ষ থেকে একটি গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করেছি, সেটি সবাইকে জানানোর জন্যই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আমন্ত্রণে সাড়া দেওয়ার জন্য তিনি সকল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ধন্যবাদ জানান।
কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীদের ধন্যবাদ জানিয়ে আরো বক্তব্য রাখেন মনোরোগবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ডা. নাহিদ মাহজাবিন মোর্শেদ।
এরকম উদ্যোগের জন্য অধ্যাপক ডা. মোহিত কামাল মনোরোগবিদ্যা বিভাগকে ধন্যবাদ জানান এবং জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পক্ষ থেকে এ ধরনের সকল উদ্যোগের সাথে থাকার আশ্বাস দেন।
মনোরোগবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সালাহ্উদ্দিন কাউসার বিপ্লব বলেন, বিভাগের পক্ষ থেকে মোট ছয়টি বিষয়ে বাংলায় রেটিং স্কেল নির্ধারণের গবেষণা করা হয়েছে। এই কর্মশালায় তার মধ্যে থেকে দুটি বিষয় উপস্থাপন করা হয়েছে। এর আগে গত ১৩ মার্চ দুটি বিষয় উপস্থাপন করা হয় এবং আগামীতে বাকি দুটি বিষয়ে কর্মশালার আয়োজন করা হবে। তিনি জানান, সহায়ক ইন্স্ট্রুমেন্ট ব্যবহার সর্ম্পকে চিকিৎসকদেরকে জানানোর জন্য এই আয়োজন। এইসব ইন্স্ট্রুমেন্ট ব্যবহারের জন্য একটি তথ্যকেন্দ্র থাকলে সকলের জন্য সুবিধা হবে বলে প্রস্তাব দেন তিনি।
অনুষ্ঠানে “জারিট বারডেন ইন্টারভিউ” বিষয়ে বাংলা অনুবাদ গবেষণা উপস্থাপন করা হয়। জারিট বার্ডেন ভেলিডেট করেন ডা. ফারজানা রাবিন শর্মী। এই বিষয়ে একটি কর্মশালা পরিচালনা করেন মনোরোগবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ডা. ঝুনু শামসুন্নাহার।
এরপর বিপিআরএস ভেলিডেট করেন ডা. সুরজিত রায়, যেটির সুপারভাইজার হিসেবে ছিলেন অধ্যাপক ডা. এম এ সালাম। বিপিআরএস বিষয়ে কর্মাশালা পরিচালনা করেন অধ্যাপক ডা. এম এস আই মল্লিক । এই রেটিং স্কেলটি রোগ র্নিণয় এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থাপত্র গ্রহণে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে জানান তিনি।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. ফারুক আলম বলেন, আমাদের দেশে যে পরিমান মানসিক রোগী রয়েছে তার প্রায় ৯০ ভাগই চিকিৎসার আওতার বাইরে রয়েছে। তাদেরকে চিকিৎসার আওতায় আনার জন্য সংযোগ বাড়াতে হবে। এজন্য অন্য বিভাগের সাথে যোগাযোগ বাড়ানোর পাশাপাশি মানসিক রোগ বিষয়ে লেখালেখি করার জন্য চিকিৎসকদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
এছাড়া সহায়ক ইনস্ট্রুমেন্ট ব্যবহারের জন্য গাইডবুক প্রণয়ন এবং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতি জোর দেন অধ্যাপক ডা. ফারুক আলম।
কর্মশালা শেষে প্রশ্নোত্তর পর্ব এবং উন্মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। রোগীকে যত সহজে প্রশ্ন করা যায় তার সমস্যা বুঝতে তত সুবিধা হয়। তাই এই ধরণের কার্যক্রমের মাধ্যমে রোগীদের সাথে চিকিৎসকদের সংযোগ আরো সহজতর হবে এবং এই ধরনের আয়োজনে আরো বেশি প্রতিষ্ঠান এবং সাইকিয়াট্রিস্টদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা উচিত বলে মত দেন প্রায় সকল অংশগ্রহণকারী।
কর্মশালায় অন্যান্যদের সাথে বিএসএমএমইউ এর মনোরোগবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হাফিজুর রহমান, সহযোগী অধ্যাপক ডা. সুলতানা আলগিন, সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শামসুল আহসান, সহযোগী অধ্যাপক ডা.সালেহ আহমেদ, সহকারী অধ্যাপক ডা. সিফাত-ঈ-সাঈদ। কেন্দ্রীয় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র এর ডা. রাহানুল ইসলাম, আদ দ্বীন মেডিকেল কলেজ এর সহকারী অধ্যাপক ডা. হোসনে আরা, গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজে এর সহযোগী অধ্যাপক নুরুন্নাহার চৌধুরী লিলি, রেড ক্রিসেন্ট হলি ফ্যামিলি মেডিকেল কলেজ এর সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফারজানা রবীন শর্মী, ডা. রাইসুল ইসলাম পরাগ, ডা. ফাতেমা জোহরা মারিয়া, ডা. মেজর কামরুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলন।
কর্মশালাটি আয়োজনে বৈজ্ঞানিক পার্টনার হিসেবে ছিল জেনারেল ফার্মাসিটিক্যালস লিমিটেড।