বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে প্রাপ্ত বয়স্ক জনগোষ্ঠীর মধ্যে ১৬ শতাংশ এবং শিশু-কিশোরদের মধ্যে ১৮ শতাংশ মানসিক সমস্যায় ভুগছে। এছাড়া, শিশু-কিশোরদের মধ্যে প্রতি হাজারে আটজন অটিজমে আক্রান্ত।
১৬ কোটি জনসংখ্যার এই দেশে মনোরোগ চিকিৎসকের অভাব প্রকট। তার ওপর দেশের অনেক মানুষের মধ্যে আছে কুসংস্কার। দেশের বিভিন্ন এলাকায় এখনও জার-ফোকের ওপর রয়েছে অগাধ বিশ্বাস। মনোরোগ নিয়ে যেমন জানাশোনার অভাব, সেই সাথে মনোরোগের চিকিৎসা কোথায় করা যায়-এ নিয়েও মানুষের ধারণা কম। এছাড়া, দ্রুত পরিবর্তনশীল সমাজে নানা ক্ষেত্রের প্রভাবে দেখা দিচ্ছে নানামাত্রিক মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা। এ অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য সর্বস্তরে সচেতনতা সৃষ্টির প্রয়োজন বলে মনে করেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. ওয়াজিউল আলম চৌধুরী। পাশাপাশি মনোরোগ চিকিৎসার কলেবর বাড়াতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
বিলম্বিত হচ্ছে চিকিৎসা:
মনোরোগ নিয়ে ভ্রান্ত ধারণার কারণে অনেকেই চিকিৎসা নিতে আসেন না। আবার অনেকের মনোরোগ নিয়ে ধারণাই নেই, কোথায় চিকিৎসাসেবা নেয়া যাবে সে বিষয়েও জানাশোনা নেই। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. ওয়াজিউল আলম চৌধুরী বলেন, ‘অনেকে ক্ষেত্রে দেখা যায়, ডাক্তারদের কাছে না এনে ঝাড়-ফোঁকের মাধ্যমে রোগীকে নাজেহাল করে ফেলা হচ্ছে। আবার রোগীকে নিয়ে ডাক্তাদের শরণাপন্ন হতে দেরি করে ফেলেন। বিলম্বিত চিকিৎসার কবলে পড়ছে অনেক রোগী।’ এমন অবস্থায় সচেতনতা বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করেন এই মনোরোগ বিশেষজ্ঞ।
পারিবারিক জাল:
কোন কোন শিশুকে পারিবারিক বেড়াজালে আটকে রাখা হয়। এতে তার মনের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। আবার উল্টোদিকে, কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকার কারণে সন্তান উশৃঙ্খল হয়ে যাচ্ছে। ড. ওয়াজিউল আলম বলেন, বর্তমান সময় কাজের ব্যস্ততায় অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের সময় দেন না বা দিতে পারেন না। এতে শিশু একাকিত্বে ভুগে, বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। এজন্য শিশুদের সময় দিতে হবে। শিশুদের সামনে এমন কিছু করা উচিত নয়, যা অনুকরণ করলে আপনার সন্তান সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হয়।
তিনি আরও বলেন, সন্তানকে উচ্চাবিলাশী করে তোলা উচিত নয়। বিভিন্ন পরিবারে দেখা যায় যে, শিশুদের মনমর্জি ঠিক রাখার জন্য, যখন যা চাইছে তাই দিয়ে দেয়া হচ্ছে। কোনটি আপনার সন্তানদের জন্য কল্যাণকর তা বিবেচনা করুন।
সচেতন বাড়াতে কাজ করছে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট:
ড. ওয়াজিউল আলম জানান, জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট করে যাচ্ছে। আয়োজন করা হচ্ছে সেমিনার আলোচনা সভাসহ নানা কর্মসূচি। তবে, তা প্রয়োজন তুলনায় অনেক বলে উল্লেখ করেন তিনি। পাশাপাশি মনোরোগের চিকিৎসায় দক্ষ জনবল তৈরি করতে ইনস্টিটিউট করে যাচ্ছে বলেও যোগ করেন তিনি।
নিজস্ব প্রতিবেদক