কেস নং-১
ক্লাস টেনের একজন ছাত্রী। ঢাকার ব্যয়বহুল একটি স্কুলে অধ্যয়নরত ছিল। বিত্তবান বাবা- মায়ের একমাত্র সন্তান। সে ছিল। প্রবল আবেগ, অনুভূতি, রাগ,ক্ষোভ, হতাশা আর ভালবাসা নিয়েই বিরাজমান ছিল এ পৃথিবীতে। এখন আর নেই। কোথাও নেই। নিজের জীবন সম্পর্কে সে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিজেই নিয়েছে। গতকাল আত্মহত্যা করেছে। সে আচরণ জনিত মানসিক রোগী ছিল।
কেস নং-২
একজন নারী চিকিৎসক। বিবাহিতা। বিত্তশালী ও ক্ষমতাবান পরিবারের বধু। মানসিক রোগে ভুগছিলেন। তার রোগের নাম বাইপোলার মুড ডিজঅর্ডার। তিনিও বেশ কিছুদিন আগে আত্মহত্যা করেছেন।
উপরের দুটো কেসেই আপাত সাধারণ কিন্তু একটি গুরুত্বপূর্ণ মিল রয়েছে। দুজনেই মানসিক রোগের চিকিৎসার বিষয়ে অনিয়মিত ছিলেন।
একজন স্বেচ্ছায় আরেকজন বাবা-মা ‘র সিদ্ধান্তে। দুজনই চিকিৎসকের পরামর্শ পেয়েছিলেন। তবে স্কুল ছাত্রীটির বেলায় তার বাবা ভেবেছেন মানসিক রোগের ঔষধ খেলে অনেক রকম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ( যেমন – ওজন বেড়ে যাওয়া) দেখা দিতে পারে। তাই তিনি শুধু সাইকোথেরাপি চালিয়ে গিয়েছেন। যা তার মেয়ের ইমপালসিভ আচরণ নিয়ন্ত্রণের জন্য যথেষ্ট ছিলনা।
ফলশ্রুতিতে সন্তানের আত্মহত্যা। সঠিক চিকিৎসায় সে অন্তত বেঁচে থাকতো। হয়তো জাগতিক অর্থে অনেক সফল একজন মানুষ নাইবা হতো, কিন্তু বাবা -মা তো সন্তান হারা হতেন না।
দ্বিতীয় ক্ষেত্রে চিকিৎসক হয়েও মানসিক রোগ সম্পর্কে যথাযথ সচেতনতার অভাবে অথবা রোগের তীব্র লক্ষ্মণ থাকাকালীন পরিবারের সদস্যদের প্রয়োজনীয় তদারকি না থাকায় তিনি নির্দিষ্ট মাত্রায় ও মেয়াদে ঔষধ খাননি। তিনিও কিছুদিন আগে রোগের এক পর্যায়ে আত্মহত্যা করেছেন।
দুটো আত্মহত্যাই প্রতিরোধ করা যেত।
তারা শিক্ষিত, বিত্তবান সেই সাথে আধা সচেতন কিংবা অতি আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। বাস্তবতা হচ্ছে চিকিৎসার ক্ষেত্রে সবসময় রিস্ক- বেনিফিট বিবেচনা করেই চিকিৎসা দিতে হয়। কোন অসুখের ঔষধই শতভাগ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বিহীন নয়। আত্মহত্যা অথবা অন্যের জীবনের জন্য ঝুঁকি তৈরি করার থেকে একটু বেশি ঘুমানো বা স্থুলকায়া হওয়া বেশি নিরাপদ নয় কি?
তাই মানসিক রোগের চিকিৎসায় কোন পর্যায়ে কি চিকিৎসা লাগবে তা মানসিক রোগ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের হাতে ছেড়ে দিন। কখন শুধু ঔষধ, কখন শুধু সাইকোথেরাপি আবার কখন একসাথে দুটোই নিতে হবে তার জন্য সংশ্লিষ্ট বিষয়ের বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন, আস্থা রাখুন।