মানসিক চাপ বাড়ছে চাকুরিজীবি এশিয়দের

যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক রিগাস কর্পোরেট কনসালটেনসি গ্রুপ একটি গবেষণার ফল প্রকাশ করেছে সম্প্রতি৷ এতে দেখা যাচ্ছে, ৮৬ শতাংশ চীনা এবং ৫৭ শতাংশ ভারতীয় বলছেন যে, ২০০৭ সাল থেকে তাদের মানসিক চাপের মাত্রা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে৷
বিগত বছরগুলোয় এশিয়ার অর্থনীতি ছিল উর্দ্ধমুখী৷ আর এর সাথে সাথে মানসিক চাপের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে৷এশিয়ার দেশ যেমন – ভারত এবং চীনে দশ জনের মধ্যে ছয় জনই বলেছেন তাদের কর্মক্ষেত্রেই তারা এই মানসিক চাপের সম্মুখীন হচ্ছেন বেশি৷
ভারতের একটি প্রধান তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত পঙ্কজ জইন বর্তমানে কোম্পানির কাজে জার্মানিতে এসেছেন৷ তিনিও তার সহকর্মীদের সঙ্গে একমত৷ তিনি বলেন জার্মানির চেয়ে বরং ভারতে কাজ করবার সময় তিনি বেশি মানসিক চাপের সম্মুখীন হয়েছেন৷
তিনি আরও জানান, জার্মানির থেকে ভারতে অফিসে অনেক বেশি সময় থাকতে হয়৷ জার্মানিতে তিনি সকাল ৯ টা থেকে সন্ধা ৬ টা পর্যন্ত কাজ করেন যেখানে ভারতে সকাল ৯ টায় কাজে গেলেও বাড়ি ফেরার কোন নির্দিষ্ট সময় থাকেনা৷
আর একটি আইটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সূচিতা কেরকার আগে বিদেশে কর্মরত ছিলেন এবং বর্তমানে তিনি ভারতে ফিরে গেছেন৷ কেরকার মনে করেন কাজ করার জন্য পরিবেশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷
তিনি আরও জানান, কোন প্রকল্পের কাজ করতে গেলে কাজের অনেক চাপ থাকে, তখন স্বাভাবিকভাবেই মানসিক চাপও বেড়ে যায়৷ এ অবস্থা সব জায়গায় সমান তা ভারতেই হোক বা বাইরের কোন দেশে৷ তবে, বিদেশে কর্মক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা, মানসিকতা, কাজের পরিবেশ ভারতের থেকে অনেক ভাল বলে তিনি মনে করেন৷
মানব সম্পদ বিশেষজ্ঞরা বলেন, ভারত এবং চীনে ম্যানেজারদের কর্মক্ষেত্রে মানসিক চাপ কমানোর প্রশিক্ষণ দেয়া উচিৎ৷ ব্যাঙ্গালোরের ভারতীদর্শন ব্যবস্থাপনা ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক অভিষেক কুমার জানান, মানুষকে উৎসাহিত করতে হবে যেন তারা কাজে আনন্দ খুঁজে পায়৷ আর এটা কেবল তাদের বস বা অফিসের প্রধান কর্মকর্তাই করতে পারেন৷ ভারত এবং চীনে যদি কাজের সময়সীমা এবং ব্যক্তিগত সীমারেখা তৈরি করা সম্ভব হয় তাহলে সেখানে মানসিক চাপ কমানো সম্ভব হবে৷
ভারতে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক এক প্রযুক্তি কোম্পানির সফ্টওয়ার প্রকৌশলি হিসেবে কর্মরত সৌরভ লাপালকার বলেন, কাজে মানসিক চাপ আসলে তখনই বাড়ে যখন কেউ পেশাগত জীবনে এগিয়ে যেতে না পারার আশঙ্কায় ভোগেন বা কাজ হরানোর ভয়ে থাকেন৷ কর্মস্থলে মানসিক চাপ কমাবার জন্য তার অফিসে ব্যয়ামাগার এবং পিং-পং খেলবার ব্যবস্থা রয়েছে৷ কিন্তু এক্ষেত্রে ছোট্ট একটি বাধা রয়েছে আর তা হচ্ছে এ ব্যয়ামাগারে শরীর চর্চা করা এবং টেবিল টেনিস খেলবার সময় বের করাই দায় হয়ে ওঠে৷
চীনে অনেক কর্মচারী কঠিন সময় পার করছেন তাদের ব্যক্তিগত এবং কর্ম জীবনে ৷ তাদের কর্মক্ষেত্রে তাদের কাজে মানসিক চাপের কারণে অনেক দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়৷ সাংহাইয়ে সিটি ক্রপ সফ্টওয়ের টেকনোলজিতে সিস্টেম অপারেটর হিসেবে কর্মরত লুই লি জানান, তাদের অফিসে কাজ হয় দুই শিফটে এবং খাবারের সময় দেয়া হয় এক ঘন্টা৷ মাঝে মাঝে তাদের সাপ্তাহিক ছুটির দিনে কাজ করতে হয়৷ তবে এর বদলে তারা সপ্তাহের অন্য দিনগুলোয় ছুটি পান৷
জার্মানির একটি প্রধান টেলিফোন কোম্পানির ব্যবস্থাপক ফর্ডিনান্ড ব্রাউন মনে করেন, কাজ সংগঠিত থাকলে কর্মক্ষেত্রে মানসিক চাপ কম পড়ে৷ এছাড়া ব্যবস্থাপক এবং কর্মচারীদের মধ্যে ভাল সর্ম্পক থাকলে কাজের চাপ কমে যায়৷ আর কাজে স্বচ্ছতা থাকলে এবং স্বাধীনতা দেয়া হলে মানসিক চাপ ছাড়াই কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব৷
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্ব মন্দার জন্য করর্পোরেট অফিসগুলোয় মানসিক চাপের শিকার হওয়ার মাত্রা বেড়ে গেছে৷ অনেক ম্যানেজারই ভাবছেন, যোগ্য কর্মীই টিকে থাকবে৷ আর অন্যরা বিশ্বাস করেন, যিনি তার প্রতিষ্ঠানের জন্য কাজ করতে স্বস্তি বোধ করবেন তিনিই উন্নতি করবেন৷
সূত্র: ডয়চে ভেলে

Previous articleযৌন অক্ষমতার বিষয়টি জীবনেরই অঙ্গ এবং সমাধান যোগ্য
Next articleগর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত চাপ শিশুর প্রাপ্তবয়সে তৈরি করে জটিল সমস্যা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here