মানসিক চাপের কোন স্তরে চিকিৎসা প্রয়োজন?

প্রতিদিন আমাদের জীবনে যে সমস্যাগুলো ঘটে তা পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। অতিরিক্ত চাপ ও চিন্তা যখন মানুষকে গ্রাস করে ঠিক তখন শরীরে এক ধরণের চাপ অনুভব হয়। আপনি যখন কোন কঠিন সময়ের মুখোমুখি হন যেমন- ভয় কিংবা বিশ্বাস তখনও এক ধরনের চাপ এসে আপনাকে মানসিকভাবে দুর্বল করেদিতে পারে। এগুলোই মানসিক চাপ।
মেডিক্যাল সায়েন্সের পরিভাষায় শরীর দ্বারা কোন বিশিষ্ট প্রতিক্রিয়া যা শারীরিক, মানসিক, কাল্পনিক কিংবা বাস্তবিক হোক তাই মানসিক চাপ।
শূন্য মানসিক চাপ সবার পক্ষে একপ্রকার অসম্ভব ব্যাপার। সমাজে থাকার জন্য, নিজের দায়িত্বগুলো পালন করার জন্য, আপনাকে একটু-আধটু মানসিক চাপের মুখোমুখি হতেই হবে। এটা ছাড়া আপনি সমাজের বাইরের মানুষ হয়ে পড়বেন বা সবাইকে ছেড়ে একা থাকতে হবে।
মানসিক চাপকে বিভাজন করা সম্ভব নয়, কোন মাপকাঠিও নেই, তাই মানসিক চাপের কোন মাত্রা নির্ধারণ করা যায় না। যারা পরিবারে ও সমাজে বাস করে কিন্তু এর প্রতি দায়িত্ব পালন করেন না বা অনুভবও করেন না তাদের মানসিক চাপ খুবই কম। প্রায় শূন্যের কাছাকাছি।
যে ব্যক্তি ভালো ভালো কাজ করেন, যা কিছু আছে তাতেই সন্তুষ্ট থাকেন, চার পাশে যারা রয়েছেন সবার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখেন, সব পরিস্থিতিতে শান্ত থেকে দায়িত্ব পালন করেন তাদের মানসিক চাপের স্তর মামুলি বা আদর্শগত।
আমাদের দৈনন্দিন কাজের জন্য কিছুটা মানসিক চাপ থাকাটা জরুরি। এটি ছাড়া আমরা কাজ করতে অনুপ্রাণিত হবো না। কিছুটা চাপ না থাকলে আউটপুটও কমে যাবে। সেটা হতে পারে লেখাপড়া, বাড়ির কাজ এবং সহকর্মীকে নির্দেশনা। স্বাভাবিক গতিবিধি ঠিক রাখার জন্য আমাদের সহনশীল মাত্রার মানসিক চাপ অবশ্যই রাখতে হবে।
আধুনিক ব্যস্ত সমাজে অধিকাংশ ব্যক্তিই অধিক মানসিক চাপে থাকেন। তাদের লক্ষ্য নিজ ক্ষমতার বাইরে বেশি উঁচুতে। এখানেই মানসিক চাপ রোগের সূত্রপাত। দিনের শেষে এসব ব্যক্তিরা ক্লান্ত হয়ে পড়েন। এটা হয়নি ওটা হয়নি অথবা একেবারে নিংড়ে নেয়া হয়েছে। আবার ভাবতে থাকেন অন্যদের তুলনায় পিছিয়ে রয়েছেন।
বর্তমান পৃথিবীতে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ লোক মানসিক চাপের এই স্তরে রয়েছেন। এদের ক্ষেত্রেই মানসিক চাপ ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন রয়েছে। এরাই হৃদ রোগেও পীড়িত হন। তাদেরই খাওয়া-দাওয়ার অভ্যাসে বিরাট পরিবর্তন আনা জরুরি। আর ব্যায়াম করার প্রয়োজন যাতে রোগমুক্ত থাকা যায়।
যে ব্যক্তি প্রচণ্ড কাজের চাপে থাকেন, প্রচুর সমস্যা রয়েছে এবং কিছু সামলাতে কঠিনতা অনুভব করেন এই শ্রেণীর লোকেরাই অত্যধিক মানসিক চাপ স্তরে রয়েছেন। এরাই কাজে ভুল করতে থাকেন, উত্তেজিত হন আর খারাপ আচরণ শুরু করেন। এদের আউটপুট অনেক নীচে নেমে আসে। এদের ক্ষেত্রে মানসিক চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন।
মানসিক চাপ দূর করার কিছু উপায় –
নিয়মিত ব্যায়াম করুন :
ব্যায়াম মানসিক চাপ তৈরিকারী হরমোনের নিঃসরণ কমায়। সুখি হরমোন হিসেবে পরিচিত এনডোরফিনের মাত্রা বাড়ায়। তাই যত ব্যস্তই থাকুন না কেন একটু সময় বের করে ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন।
রুটিন মত ঘুমান :
ঘুম শরীরকে সতেজ রাখতে সাহায্য করে। ঘুমাতে যাওয়া এবং ঘুম থেকে উঠার একটি নির্দিষ্ট রুটিন তৈরি করুন। নিয়মিত সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুমানো মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
পরিমিত খাবার খান :
মানসিক চাপে থাকলে খাওয়ার প্রতি অনেকেরই অনীহা হতে পারে। মনে রাখবেন, না খেয়ে থাকা চাপ বা সমস্যাগুলোকে কমিয়ে দেবে না বরং পরিমিত খাবার আপনার শরীরকে কর্মক্ষম রাখবে এবং চাপ দূর করার পদক্ষেপগুলো নিতে সাহায্য করবে। এ সময় পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করুন। দিনে অন্তত ছোটবড় মিলিয়ে ছয় বেলা খাবার খান। ভিটামিন এ এবং ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খান। গ্রিন টি এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবারে অভ্যস্ত হোন।
শিথিল থাকুন :
মানসিক চাপের সময় দেহ ও মনকে শিথিল রাখা জরুরি। মানসিক চাপ দূর হতে সময় লাগে। তাই এসময় নিজেকে শান্ত রাখা জরুরি। মনকে শিথিল রাখতে হালকা ধাঁচের গান শুনুন এবং শরীর শিথিল রাখতে স্নান করতে পারেন।
যোগ ব্যায়াম ও ধ্যান করুন :
মানসিক চাপ কমাতে ধ্যান করতে পারেন। ধ্যানের সময় গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম শরীরকে শিথিল করে। ধ্যান আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করবে। পাশাপাশি চাপ কমাতে যোগব্যায়ামও করতে পারেন।
পছন্দের কাজগুলো করুন :
হয়তো ছোটো বেলায় গান শিখতেন বা ছবি আঁকতেন আপনি। এমনকি ডায়রিও লিখতেন। মানসিক চাপের সময় এই পছন্দের কাজগুলো আবার শুরু করুন এবং কাজগুলোর মাধ্যমে নিজেকে সময় দিন।
ইতিবাচক চিন্তা করুন :
খারাপ চিন্তা হয়তো সবসময় এড়িয়ে যাওয়া যায় না। তবে চেষ্টা করুন ইতিবাচক চিন্তা করতে। ভাবুন যা চাইছেন তা ইতিবাচকভাবেই পাবেন। এটা আপনাকে মানসিক চাপ দূর করতে সাহায্য করবে।
বন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়ে দিন :
মানসিক চাপের কারণ নিয়ে কাছের বন্ধুর সঙ্গে কথা বলুন। বন্ধুকে বলুন, আপনাকে সাহায্য করতে। তবে এমন বন্ধুকে বলবেন না, যে আপনাকে বুঝবে না অথবা একপর্যায়ে আপনাকে উপহাস করবে। কাজের বন্ধুর সঙ্গে বিভিন্নভাবে যোগাযোগ বাড়িয়ে দিন।
আপনার চাহিদা অনুসারে তালিকা বানান এবং সেই তালিকা অনুসারে পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। এই পদক্ষেপগুলোর চর্চা মানসিক চাপ দূর করতে সাহায্য করবে।
তথ্যসূত্র : ডা. বিমল ছাজেড়ের হৃদয় রোগ থেকে মুক্তি গ্রন্থ এবং লাইফস্টাইল বিষয়ক ওয়েবসাইট।

Previous articleআত্মহত্যার শোকের যন্ত্রনাময় দীর্ঘ পথ অতিক্রম করা
Next articleমানসিক অস্থিরতায় কি করতে চায় শিক্ষার্থীরা?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here