মাদকাসক্ত সন্তানকে চেনায় উপায়

মাদকাসক্ত সন্তানকে চেনায় উপায়

কিশোর-কিশোরীরা মাদক গ্রহণ করছে কি করছে না, তা নিয়ে প্রচুর ড্রামা রয়েছে। কিন্তু মাদক ব্যবহারকারীকে চিহ্নিত করার মূল চাবিকাঠি হল- আপনার কিশোর সন্তানের আচরণে আকস্মিক বা সুস্পষ্ট পরিবর্তন সন্ধান করা। আপনার সন্দেহপূর্ণ ধারণাকে গুরুত্ব দিন।

যদি কোনোকিছু আপনাকে দুশ্চিন্তিত করে, এটি সম্পর্কে আপনার স্বামী বা স্ত্রী বা সঙ্গী, বিশ্বস্ত শিক্ষক বা কোচ এবং সন্তানকে ভালোবাসে বা যত্ন করে এমন কারো সঙ্গে কথা বলুন। দুই মাথা সবসময় একমাথার চেয়ে অধিকতর ভালো এবং আপনার দুশ্চিন্তা শেয়ার করার ফলে আপনি বেশি কনফিডেন্ট হবেন ও আপনার কিশোর সন্তানকে সাহায্য করার জন্য কার্যকরী পরিকল্পনা তৈরি করতে সক্ষম হবেন।

মাদক গ্রহণের ফলে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন ঘটে। আর সে পরিবর্তন পরিবারের সদস্যরা খুব সহজে ধরে ফেলতে পারেন। আজ আমরা মাদকাসক্ত কিশোর-কিশোরীদের শারীরিক ও আচরণগত পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা করবো।

শারীরিক লক্ষণ

খাওয়ার প্রবণতা এবং ঘুমের সময়সীমার পরিবর্তন চলে আসলে। ওজন হঠাৎ করে বেড়ে গেলে বা কমে গেলে। চোখ লাল হয়ে থাকলে এবং চোখের মণি স্বাভাবিকের চেয়ে বড় বা ছোট দেখালে। নাক দিয়ে প্রায়ই রক্ত পড়লে। সাধারণত কোকেইন বা নিঃশ্বাসের সাথে গ্রহণ করতে হয় এমন মাদকের বেলায় এই লক্ষণ দেখা যায়। চেহারা এবং পোশাকের পরিধান ও যত্নে অবনতি দেখা দিলে।

শরীরে এমন কোন ক্ষত বা কাটা ছেড়া দেখা গেলে যা সম্পর্কে তারা জানে না বা কীভাবে আঘাত পেলো তা আপনাকে বলতে না চাইলে। তাদের মুখে বা শরীরে বা পোষাকে অদ্ভুত বা অপরিচিত কোন গন্ধ পেলে। মাদকাসক্ত ব্যক্তির চেহারায় কালো ছোপ ছোপ দাগ তৈরি হয়।

আচরণগত পরিবর্তন

যৌন ক্রিয়ায় অনীহা বা ক্ষমতা হ্রাস পেলে। ক্লাস বা অফিসে ঘনঘন যেতে না চাওয়া বা প্রতিষ্ঠানে কোন ঝামেলায় জড়িয়ে পড়া। কাজে অমনযোগী হলে, ব্যক্তিগত শখ বা খেলাধুলায় আগ্রহ হারিয়ে ফেললে। তার সহকর্মী, শিক্ষক বা বন্ধুদের কাছ থেকে ঘনঘন নালিশ আসতে থাকলে।

বাসায় রাখা টাকার হিসাব না মিললে। কারণ নেশার দ্রব্য কিনতে টাকা লাগে। তাই সাধারণত নেশার দ্রব্যের মূল্য পরিশোধের জন্য আপনার সন্তান টাকা, মূল্যবান সামগ্রী, অলংকার চুরি করতে পারে। পড়াশোনার নাম করে ঘনঘন টাকা চাওয়ার প্রবণতা বেড়ে গেলে।

পরিবাররে সদ্যসদের সাথে ব্যবহারের পরিবর্তন আসলে। সাধারণত মাদকাসক্তির সময়গুলোতে তারা খিটখিটে মেজাজের হয়ে থাকে। বেশিরভাগ সময়ই একা থাকলে বা প্রাইভেসি সচেতন হয়ে পড়লে। বেশির ভাগ সময়ই রুমের দরজা বন্ধ রাখলে । অকারণে বিরক্তিবোধ করলে । অতিরিক্ত মিষ্টি খেতে আরম্ভ করলে।

পুরনো বন্ধুদের পরিবর্তে নতুন নতুন বন্ধু চোখে পড়লে। ঘরে বা বিছানায় পাউডার জাতীয় জিনিস পাওয়া গেলে। প্রায়ই কারো না কারো সাথে মারামারি বা ঝগড়া ইত্যাদিতে জড়িয়ে পড়া। সব সময় রুমে এবং শরীরে পারফিউম বা এয়ারফ্রেশনার ব্যবহার করা । চোখের লাল ভাব কাটানোর জন্য ড্রপ ব্যবহার শুরু করলে। অকারণে রেগে গেলে।

আপনার পরিবারের কারো মাঝে এ ধরনের শারীরিক ও আচরণগত পরিবর্তনের কয়েকটি লক্ষণ একসাথে থাকলে বুঝে নিবেন নিঃসন্দেহে সে একজন মাদকাসক্ত।

কিশোর-কিশোরীরা কখন মাদক গ্রহণ করে

বন্ধু বান্ধবের চাপে পড়ে, তাদের সঙ্গ দিতে গিয়ে এবং তাদের থেকে আলাদা হয়ে যাওয়ার ভয়ে অনেকে মাদক গ্রহণে বাধ্য হয় এবং একপর্যায়ে আসক্ত হয়ে পড়ে। কেউ নিছক মজা করে একবার-দুবার নিতে নিতে আসক্ত হয়ে পড়ে। নিজেকে স্মার্ট দেখানোর জন্য অনেকে মাদক নেয়। অনেকে প্রথমে কৌতূহলের বশে মাদক গ্রহণ করে, ভাবে সে আসক্ত হবে না কিন্তু একপর্যায়ে সেও আসক্ত হয়ে পড়ে।

মানসিক ভাবে বিষাদগ্রস্থ হলে বেকারত্ব, সম্পর্ক ভেঙে যাওয়া, ব্যবসায় ক্ষতি, পরীক্ষায় ফেল ইত্যাদি নানা কারণে পারিবারিক টানাপোড়েন ইত্যাদি কারণেও মাদকে আসক্ত হয়ে যায় অনেকে। ব্যক্তিত্বের কিছু সমস্যা যেমন এন্টিসোশ্যাল পার্সোনালিটি, শৈশবে বিকাশের সমস্যা, কিছু মানসিক রোগ।

সিগারেট দিয়েই শুরু হয় নেশার জগতে প্রথম প্রবেশ, তাই সিগারেটকে আপাত নিরীহ মনে হলেও এটা মাদকের জগতে প্রবেশের মূল ফটককে উন্মুক্ত করে দেয়। তাই ধূমপানও হতে পারে মাদকাসক্ত হওয়ার অন্যতম কারণ। একটা পর্যায়ে শরীর ও মন এমনভাবে মাদক নির্ভর হয়ে পড়ে যে চিকিৎসা ব্যতীত আর কোনোভাবেই মাদক মুক্ত হওয়া সম্ভব হয় না।

Previous articleঅতিরিক্ত রাগ যৌন সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করে
Next articleগার্লফ্রেন্ডের সাথে কথা বললে লিঙ্গের আগায় বীর্য আসে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here