মহামারীর সংক্রমণ থেকে নিজেকে ও পরিবারকে সুরক্ষিত রাখা অবশ্যই জীবন ও সময়ের দাবি। কিন্তু একই সাথে এই দুঃসময়ে বাড়তি মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখাটাও কিন্তু কোন ভাবেই কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। বরং একটির সাথে অন্যটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
এক বছরেরও বেশি সময় কেটে গেছে কিন্তু আমরা একইভাবে এখনো করোনা পীড়িত রয়ে গেছি। আজও প্রতিদিন সংক্রম বেড়েই চলেছে এবং মৃত্যুর সারি দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। ধৈর্য ধরে ধরে হয়তো আমরা অনেকেই ক্লান্ত। কিন্তু ভয় থেকেও কি আমরা কোন ভালো কিছু পেয়েছি? অধিকাংশ মানুষই অত্যন্ত দুশ্চিন্তায় আছেন, ভয়ে আছেন যে ভবিষ্যতে কি হবে, বা আমরা আদৌ সংক্রমণ থেকে বাঁচতে পারবো কিনা, আমাদের কোন নিরাপদ ভবিষ্যৎ আছে কিনা ইত্যাদি।
কিন্তু, এসব দুশ্চিন্তা কি পরিস্থিতি বদলাতে পেরেছে? পারেনি। বরং এতে আমাদের শারীরিক ও মানসিক অবস্থা দিন দিন আরও খারাপ হয়েছে। আমরা ঘরে থেকেও শঙ্কা মুক্ত থাকতে পারছিনা। ভয়ে আড়ষ্ট হয়ে আছি। এবং ফলশ্রুতিতে বিভিন্ন মানসিক জটিলতায় ভুগে শরীর এবং মন দুটোরই বারোটা বাজিয়ে ফেলছি। তাই করোনা মোকাবেলা করার কথা ভাবার আগে আমাদের আগে এই ভয়, দুশ্চিন্তা, উদ্বেগসহ অন্যান্য মানসিক চাপ গুলো মোকাবেলা করার কথা ভাবতে হবে। আগে সুস্থ থাকবো তারপরেই তো করোনা মোকাবেলা করতে পারবো আমরা। করোনা থেকে সুরক্ষিত থাকতে যেমন আমরা বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করার বিষয়ে বেশ আগ্রহ সহকারে জেনেছি, তেমনি করোনা সংক্রান্ত যে ভয় এবং মানসিক চাপ আমাদের মধ্যে বাসা বেঁধেছে সেগুলো মোকাবেলা করার কিছু পদ্ধতি সম্পর্কেও আমাদের ধারণা রাখতে হবে।
১) কোভিড-১৯ যে আর দশটা মহামারীর মতই সেটি অনুধাবনঃ পূর্বের মহামারী গুলোর দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে, মহামারী যত ভয়ানক ই হোক না কেন খুব বেশী সময় ধরে সেটি বলবত থাকেনা। আমাদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনেক আধুনিক এবং অবশ্যই এর কোন কার্যকরী সমাধান খুব দ্রুতই বের হয়ে আসবে। পূর্বের মহামারী সমূহও আমাদের মানব সমাজ এবং পৃথিবীকে হারাতে পারেনি এবং কোভিড-১৯ ও পারবেনা। ধৈর্য সহকারে, মানসিক চাপ মুক্ত হয়ে এবং সতর্ক থেকে আমাদের শুধু অপেক্ষা করতে হবে ভালো সময়ের।
২) নিজের মধ্যে ইতিবাচক মানসিকতার বিকাশ ঘটানোঃ নিজের মধ্যে থাকা ইতিবাচক মানসিক গুণ গুলোর বিকাশ ঘটাতে হবে মহামারীর এই দুঃসময়ে। সব সময় মনে রাখবেন আপনার চিন্তাভাবনাই আপনার আচার আচরণ এবং ভালো থাকা না থাকা নিয়ন্ত্রণ করে। আমাদের ভয় এবং দুশ্চিন্তা আমাদের সুন্দর জীবনকেও নরক যন্ত্রণাময় করে তুলতে সক্ষম। তাই করোনা থেকে সুরক্ষিত থাকার পরেও আমাদের মানসিক নেতিবাচক ভাব আমাদের সব কিছু নষ্ট করে দিতে পারে। এর মোকাবেলা একমাত্র আমাদের মধ্যে থাকা ইতিবাচক মানসিক শক্তিই করতে পারে। তাই নিজের মধ্যে ইতিবাচক চিন্তা ভাবনার বিকাশ এবং আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি করতে হবে।
৩) প্রাত্যহিক কাজের একটি নির্ঘণ্ট নির্ধারণ করাঃ আমরা বহু দিন ধরেই স্বাভাবিক কাজকর্ম স্বাভাবিক উপায়ে করতে পারছিনা। এতে স্বভাবতই মানসিক অবস্থার উপর চাপ সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু এই চাপ মুক্ত থাকতে আমাদের এই দৈনন্দিন কাজগুলো এই পরিবর্তিত অবস্থায় পরিবর্তিত উপায়ে করার মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। নেতিবাচক মানসিকতার পরিবর্তে ইতিবাচকভাবে নিয়ে সেগুলো ঘরে বসে করার প্রচেষ্টা করতে হবে এবং সেগুলো করার জন্য একটি রুটিন তৈরি করে সারা দিনের কাজ মনোযোগের সাথে করতে হবে। এতে আমাদের মনোযোগ অন্য দিকে থাকবে এবং নেতিবাচক চিন্তাভাবনা থেকে আমরা দূরে থাকতে পারবো। পুনরায় আত্মনিয়ন্ত্রণ ফিরে পাবো।
আমাদের মানসিক অবস্থার নিয়ন্ত্রণ পূর্ণ রূপে আমাদের হাতেই রয়েছে। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিই আমাদের জীবন চলার পথ নির্ধারণ করে। আমরা করোনা মোকাবেলার জন্য করোনা সংক্রমণের ভয়ে যদি আগেই ভেঙ্গে পড়ি তাহলে করোনা মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় কাজ কখনোই সঠিকভাবে করতে পারবোনা। আর এতে সব থেকে ক্ষতি আমাদেরই হবে। তাই এই করোনা কালে সুস্থ সুন্দর জীবন যাপন করার জন্য করোনার সাথে সাথে মানসিক চাপ মুক্ত থাকারও সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা করতে হবে।
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে