মহামারীর সময়ে ঘুমের যত্ন এবং অনিদ্রা (ইনসোমনিয়া) প্রতিরোধ

0
41
মহামারীর সময়ে ঘুমের যত্ন এবং অনিদ্রা (ইনসোমনিয়া) প্রতিরোধ
মহামারীর সময়ে ঘুমের যত্ন এবং অনিদ্রা (ইনসোমনিয়া) প্রতিরোধ

আমাদের অধিকাংশ বাঙালিকে জীবনের প্রথমভাগে যে গানটি মায়েরা শুনিয়েছেন তা হলো “ঘুম পাড়ানি মাসী পিসি মোদের বাড়ি এসো”। খুব ছোটবেলা থেকেই আমরা বুঝে যাই ঘুম কত আনন্দদায়ক আর প্রয়োজনীয়। সুস্থ শরীর আর সুন্দর মনের জন্যে প্রয়োজন পর্যাপ্ত ঘুম।এখন মহামারী চলছে।
এই অস্থির পরিবেশে, আগে থেকে বিষন্নতা, সার্বজনীন অস্থিরতা রোগ বা অন্য যে কোন কারণে অনিদ্রা না থেকে থাকলেও এখন দেখা দিতে পারে। ঘুমের স্বাভাবিক চাকা ঘুরতে পারে উল্টোপথে। হতাশা,রাগ,মানসিক ক্লান্তি আর উত্তেজনা আপনার চোখের পর্দার দূরত্ব বাড়াতে পারে। তাই প্রয়োজন স্লিপ হাইজিন (ঘুমের পরিচ্ছন্নতা নীতি) অনুসরণ করা। আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক এ্যাসোসিয়েশন এর মতে আমাদের ঘুমের অসুখগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় অনিদ্রা।
অনিদ্রা রোগ আখ্যা দেবার আগে ক্রাইটেরিয়া বা বৈশিষ্ট্যগুলো মিলতে হবে। অনিদ্রার ফলে যে সমস্যাগুলো হতে পারে তা হলোঃ

  • মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া।
  • সারাদিন ক্লান্ত এবং দুর্বল অনুভব করা।
  • রাগ এবং অস্থিরতা অরুচি এবং হজমে সমস্যা।
  • মনোযোগ দিতে না পারা।
  • স্মরণ শক্তির সমস্যা।
  • সামাজিক এবং পারিবারিক সম্পর্কে ফাটল ইত্যাদি।

মহামারীর এই সময়ে ঘুমের যত্ন নিতে যা করবেন নাঃ
১.ছুটি পেয়ে বা কাজের ব্যাস্ততা কমায় ঘুমের রুটিন অনেকটা পরিবর্তন করবেন না।
২.ঘুমানো ছাড়া অন্য সময় বিছানায় থাকবেন না।
৩.সন্ধ্যার পরে ব্যায়াম বা ভারী কাজ করবেন না।
৪.চা কফি সন্ধ্যার অনেকটা পরে বা ঘুমের আগে খাবেন না।
৫.ঘুম না হলে,ঘুম থেকে উঠে সিগারেট ধরাবেন না।
৬.যে বিছানায় ঘুমান,সেখানে বসে খাবেন না,ব্যায়াম করবেন না।
৭.ঘুমানোর পূর্বে (কমপক্ষে ১ ঘন্টা পূর্বে) ফোন,ল্যাপটপ বা অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইস দূরে সরিয়ে রাখুন। মানে এসব ব্যবহার করবেন না।
৮.ঘুম না আসলে বার ঘড়ি দেখবেন না।
৯.আ্যালকোহল,তামাক,পান,সাদা পাতা ইত্যাদি নিবেন না।
১০.কোন দুঃখের সংবাদ বা অতীতের পীড়াদায়ক স্মৃতি স্মরণ করবেন না বিছানায় যেয়ে। মনে আসলেও পাত্তা দিবেন না।চি কিৎসকের পরামর্শ ব্যাতিরেকে ঘুমের ঔষধ খাবেন না।
মহামমারীর এ সময়ে ঘুমের যত্ন নিতে যা করবেনঃ
১.ঘুমের রুটিন মেনে চলুন।
২.ব্যায়াম করুন। সকালে বা বিকেলে করুন।
৩.রাতে হালকা খাবার খাবার অভ্যাস করুন। ভারী চর্বি জাতীয় খাবার খাবার অভ্যাস ত্যাগ করুন।
৪.বিছানায় ঘুমাতে যাবার আগে বা ঘুমাতে যাবার পরে কোন অমিমাংসিত ব্যপার বা করণীয় মনে পড়লে কাগজে লিখে রাখুন।
৫.বিছানা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে নিন।
৬.ঘুমানোর রুমটি অন্ধকার এবং নিরিবিলি কিনা লক্ষ্য করুন। এমনটি করার জন্যে সচেষ্ট হোন।
৭.স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করুন। এ্যামাইনো এসিড,ম্যাগনেসিয়াম,ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন বি৬ যুক্ত খাবার ঘুমের জন্যে উপকারী।
৮.বেশি করে সবুজ শাক সবজি, দুধ,সামুদ্রিক মাছ,আপেল,কলা,নাশপতি,দই,চিজ খুব উপকারী হবে ঘুমের জন্যে।
৯.ক্যাফেইন যুক্ত খাবার যেমন চা,কফি,ঝাল খাবার,চর্বি জাতীয় খাবার,বেশি পানি,পানি যুক্ত ফল (তরমুজ) না খাওয়া ভালো সন্ধ্যার পর।
১০.দুপুরে ঘুমানো অভ্যাস ত্যাগ করবেন যদি রাতে ঘুমাতে সমস্যা হয়।চিকিৎসক এর পরামর্শ গ্রহণ করবেন যদি অবস্থা অসহনীয় হয় বা স্বাভাবিক জীবনের ব্যাতিক্রম ঘটায়।
সবাই সুস্থ থাকুন। মহামারীর এ সময়ে বাসায় থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন এবং ঘুমের যত্ন নিন।
লিখেছেন: ডা. মোহাম্মদ হাসান, রেসিডেন্ট সাইকিয়াট্রি (ফেইজ এ)।

Previous articleলকডাউনে হোম অফিস ও সংসার সামলাতে চাপে নারীর মানসিক স্বাস্থ্য
Next articleহাইড্রক্সিক্লোরোকুইন প্রাণঘাতীও হতে পারে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here