মহামারী আমাদের সবার জীবন অগণিত সমস্যায় জর্জরিত করে তুলেছে। এ অবস্থায় হয়তো ধৈর্য ধারণ করে সব সামাল দেওয়া খুব কঠিন। কিন্তু ধৈর্য ধারণে কিছু কৌশল অবলম্বন করলে এই দুঃসময়ে ধৈর্য ধারণ করা সহজ হবে।
বিপদে ধৈর্য ধারণ করা সব সময়ই খুব কঠিন কাজ। আমাদের মানসিক স্থিতি প্রতিকূল অবস্থায় আমাদের নিয়ন্ত্রণে রাখা প্রয়োজনীয় হলেও অত্যন্ত দুরূহ। করোনা কালে আমরা বহু দিন ধরে আমাদের স্বাভাবিক জীবন থেকে দূরে রয়েছি এবং অবশ্যই সেটা বাধ্য হয়ে। আমরা বাইরে যেতে পারছিনা, সারাক্ষণ ঘরে থেকে সময় কাটাতে হচ্ছে। এভাবে বহু দিন পার হয়ে গেলেও এখনো সংক্রমণ বা মৃত্যু হার কোনটাই কমানো সম্ভব হয়নি এবং আমরা একইভাবে করোনা ঝুঁকির মধ্যে রয়ে গেছি। এমন অবস্থায় মানসিক অবস্থা ধীরে ধীরে অবনতির দিকে যাওয়াই স্বাভাবিক। আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অত্যন্ত দুশ্চিন্তা গ্রস্ত এবং বর্তমান নিয়ে আশঙ্কিত। আমরা জানিনা ঠিক কতক্ষণ আমরা নিজেদের এবং আমাদের পরিবারের অন্যান্যদের করোনা থেকে সুরক্ষিতে রাখতে পারবো। এ সব কিছু আমাদের চরম ভাবে মানসিক চাপের মধ্যে রেখেছে এবং এই অবস্থায় ধৈর্য সহকারে সব কিছু মোকাবেলা করা অত্যন্ত দুষ্কর হয়ে উঠেছে।
একজন ধৈর্যশীল ব্যক্তির মধ্যে অনেক বেশী মানসিক দৃঢ়তা থাকে। বিপদে যারা ধৈর্যহারা হয়ে পড়ে তারা মানসিকভাবে দুর্বল হয়। দুশ্চিন্তা, অবসাদ, বিষণ্ণতা এসব জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে আসবেই। একজন ধৈর্যশীল ব্যক্তি এসব কিছুতে বিচলিত হয়না। বরং এসব মেনে নিয়ে, মানিয়ে নিয়ে মনের উপর নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে আনতে পারে এবং নিজের মনস্তাত্ত্বিক লড়াইয়ে জয়ী হয়। মনস্তাত্ত্বিক সমস্যাগুলোর সাথে লড়াই করে টিকে থাকার ক্ষেত্রে একজন মানুষের সব থেকে বেশী ধৈর্যের পরিচয় দিতে হয়। মনকে নিয়ন্ত্রণে রাখা বা ধৈর্য ধারণ করে সব কিছু মোকাবেলা করা সব থেকে কঠিন কাজের মধ্যে একটি কারণ আমাদের মন সব সময় সমস্যার দিকেই কেন্দ্রীভূত হয়ে থাকতে চায়। সমাধানের দিকে নয়। সমস্যাকে মেনে নিয়ে ধৈর্যের সাথে সেটি মোকাবেলা করা এবং তার সমাধান খোঁজা সব সময়ই ঐকান্তিক ইচ্ছে শক্তি এবং আত্মবিস্বাসের ফলেই সম্ভব। যা ব্যক্তিত্বে কিছুটা ইতিবাচক পরিবর্তন আনলে সহজেই সম্ভব।
১) সময় অনুসারে স্বীয় করণীয় নির্ধারণঃ
যে কোন বিপদে সমস্যাকে প্রাধান্য না দিয়ে এই সময় সমস্যা মোকাবেলায় নিজের করণীয় নির্ধারণে মনযোগী হলে সেই পরিস্থিতিতে ধৈর্য ধারণ করা অপেক্ষাকৃত সহজ হয়। যখন একজন মানুষের সামনে একটা লক্ষ্য থাকে, তখন সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নে কাজ করার মত মানসিকতা তৈরি হয় এবং ব্যক্তি ধৈর্য ধারণ করে সেই লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যেতে পারে।
২) ইতিবাচক চিন্তাভাবনার বিকাশঃ
জীবনে যত নেতিবাচক ঘটনাই ঘটুক না কেন, সব কিছুর ইতিবাচক দিকে আমাদের মনোযোগ স্থাপন করতে হবে। খুব অন্ধকারের মাঝেও নিজের প্রচেষ্টায় আশার আলো খুঁজে পাওয়া যায়। ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি অস্বাভাবিক পরিস্থিতির প্রতি আমাদের চিন্তাভাবনা বদলে দেয়। সমস্যা নিয়ে না ভেবে আমরা তখন ধৈর্যশীল হয়ে সেটির সমাধান নিয়ে ভাবতে পারি।
৩) নিজেকে নিজে প্রশ্ন করাঃ
দুঃসময়ে নিজেকে নিজের থেকে বেশী সহায়তা আর কেউ করতে পারেনা। ধৈর্যশীল এবং আত্মবিশ্বাসী ব্যক্তি নিজের কাজের প্রতি প্রশ্ন করার সাহস রাখে। দুঃসময়ে ভেঙ্গে পড়লেও মনকে এর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন করার মত মানসিক দৃঢ়তা বজায় রাখতে হবে। এতে নিজের মধ্যে ঘুরে দাঁড়ানোর মত সাহস এবং অবস্থা উন্নতির লক্ষ্যে ধৈর্য ধারণ করে প্রচেষ্টা করে যাওয়ার মানসিকতা তৈরি হয়।
সব সময় মানসিক স্থিতি এক রকম থাকবে এটা কখনোই আশা করা উচিৎ হবেনা। কিন্তু বিপদে ধৈর্য হারা হলে সেক্ষেত্রে আমাদের ভোগান্তিও বহুগুণে বেড়ে যাবে এটাও সঠিক। তাই সকল বিড়ম্বনা দূর করতে আগে ধৈর্য ধারণ আবশ্যক। মহামারীর মত এই দুঃসময়ে আমাদের ধৈর্য সহকারেই ভালো কিছু হবার অপেক্ষায় থাকতে হবে এবং সে পর্যন্ত নিজেদের মানসিক ও শারীরিক ভাবে সুস্থ রাখার প্রয়াস করে যেতে হবে। আর এই সুস্থতা পেতে ধৈর্য ধারণের কোন বিকল্প নেই।
করোনায় স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে