মহামারীর এই দুঃসময়ে শিশুদের সুষ্ঠু লালন পালণ নিয়ে অভিভাবকদের দুশ্চিন্তার শেষ নেই। কিন্তু সম্প্রতি কিছু গবেষণায় করোনাকালে কিভাবে সফলভাবে শিশুদের লালন পালনের ভূমিকা পালন করা যায় সে বিষয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ও সহায়ক কৌশল উঠে এসেছে।
মহামারীর এই দুঃসময়ে অন্যান্য অনেক কাজের সাথে সাথে সন্তান লালন পালনও বেশ কঠিন হয়ে উঠেছে। মহামারী প্রায় দুই বছর ধরে চলছে এবং এই সময়ে বেশ কিছু গবেষণা হয়েছে যেগুলো অভিভাবকদের করোনাকালে সন্তান লালন পালনসহ পরিবারের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে উদ্ভূত দুশ্চিন্তা দূর করবে।
সম্প্রতি কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, মহামারীতে অভিভাবক, শিশু এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্য সবার ভালো থাকা নিশ্চিত করতে শিশুদেরকে স্বাধীনতা অর্থাৎ তাদের নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেরা গ্রহণ করার স্বতন্ত্রতা প্রদান করা সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
বিশেষত যে সকল অভিভাবক তাদের সন্তানদের বিচারের স্বাধীনতা প্রদান করেন তারা মহামারীর এই অস্বাভাবিক সময়েও মানসিকভাবে ভালো আছেন, তাদের মানসিক বিকাশ অপেক্ষাকৃত কম বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং অভিভাবক ও সন্তানদের মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক বন্ধনও আরও দৃঢ় হয়েছে।
অর্থাৎ এই গবেষণায় মূলত দেখা গেছে, সন্তান লালন পালনের প্রক্রিয়ায় যারা সন্তানদের একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় বিচারের স্বাধীনতা প্রদান করেছে তাদের মানসিক উদ্বিগ্নতা একটি সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে।
উদ্ভূত এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে অভিভাবকেরা নিজেদের মানসিক স্বাস্থ্যের সাথে সাথে সন্তানদের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার দায়িত্ব পালন করে কিভাবে সন্তানদের প্রতি আরও সংবেদনশীল, দায়িত্ব পরায়ণ ও ধৈর্যশীল আচরণ করা যায় সেটি নিয়ে মানসিক চাপের মাঝে রয়েছেন।
কিন্তু গবেষণা বলছে, যেহেতু মানসিক চাপ যে কোন কাজের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, তাই উদ্বিগ্ন না হয়ে সমস্যা সমাধানে গঠনমূলক ভূমিকা পালন করতে হবে। শিশুদের মানসিক বিকাশ ত্বরান্বিত করতে হবে, একই সাথে তাদেরকে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ রাখতে হবে।
আর সবকিছু করতে হলে শিশুদের মনের ইচ্ছা গুলোর গুরুত্ব প্রদান করতে হবে। অর্থাৎ তাদের বিচারিক স্বাধীনতা প্রদান করে তাদের ভালো মন্দের বাস্তবিক জ্ঞান প্রদান করতে হবে। আর এটিই পিতা মাতা হিসেবে অন্যতম একটি বড় কাজ যা তাদের মানুষের মত মানুষ হয়ে গড়ে উঠতে সহায়তা করবে।
অনেকেই ভাবেন সন্তানদের স্বাধীনতা প্রদান করলে তারা হয়তো নিজেদের ক্ষতি করে ফেলবে বা ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। তবে মনস্তাত্ত্বিকগণ বলেন, সন্তানকে ভুল করার সুযোগ প্রদান করা তাদের লালন পালনেরই একটা অংশ। সন্তানদের বোঝাতে হবে , কিভাবে ভুল ভ্রান্তি থেকে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাগুলো গ্রহণ করতে হয়।
আর এটিই তাদের চরিত্র গঠনের ইতিবাচক দিক হয়ে উঠবে। অর্থাৎ, শিশুদেরকে তাদের স্বাধীনতা বা বিচারের বাস্তব অভিজ্ঞতা নেওয়ার সুযোগ প্রদান করতে হবে। তাদেরকে অনুকূল এবং প্রতিকূল উভয় অবস্থায় সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহনের উপযোগী করে তুলতে হবে। ভুল ভ্রান্তির দিকে নয় বরং অভিভাবকদের তাদের বাস্তব অভিজ্ঞতা ও শিক্ষা গ্রহণের প্রতি মনযোগী হতে হবে।
জীবনে সমস্যা যেমন আছে, তেমনি তার সমাধানও আছে। তাই কোন কিছু নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত না হয়ে সমাধানের উপায় খুঁজে বের করতে হবে। একই ভাবে মহামারীকালে এই প্রতিকূল অবস্থা পরিবর্তন করতে না পারলেও অভিভাবকেরা একটু সচেষ্ট হলেই এই অস্বাভাবিক অবস্থায় শিশুদের স্বাভাবিক মানসিক বিকাশ ও তাদের সুষ্ঠু লালন পালন বজায় রাখতে পারবেন। শুধু প্রয়োজন কিছু উপযোগী কৌশল এবং অভিভাবকদের ইতিবাচক মনোভাব।
লিংক: https://www.psychologytoday.com/intl/blog/parenting-translator/202107/pandemic-parenting
অনুবাদ করেছেন: প্রত্যাশা বিশ্বাস প্রজ্ঞা
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে