বিএসএমএমইউ-তে বিভিন্ন বিভাগে ভর্তি রোগীদের ৪৮.৪ ভাগই বিভিন্ন মানসিক রোগে ভুগছেন

0
91

গত ২০২২ সালে বিএসএমএমইউ, সাইকিয়াট্রি বিভাগ ‘বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস’কে উপলক্ষ্য করে অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন ও সার্জারি অনুষদের বিভিন্ন বিভাগে ভর্তি রোগীদের মধ্যে মানসিক রোগের হার নির্ণয়ে একটি গবেষণা চালান। আজ ১৪ অক্টোবর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ডা. মিলন হলে গবেষণার ফল প্রচার অনুষ্ঠানে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেন বিভাগটি।

২৯ টি বিভাগের মোট ৩৪৭ জন রোগীর উপর তারা একটি জরিপ করেন। এতে দেখা যায়, ৩৪৭ জনের মধ্যে ১৬৮ জন নানা রকম মানসিক রোগে আক্রান্ত। মেডিসিন ও সার্জারি অনুষদের বিভিন্ন বিভাগে ভর্তি রোগীদের মধ্যে যথাক্রমে ৫৫.৩ শতাংশ এবং ৩৯.৩ শতাংশ রোগীর বিভিন্ন ধরনের মানসিক সমস্যা রয়েছে।

গবেষণায় গৃহীত জনগোষ্ঠীর প্রায় অর্ধেক (৪৮.৪%) কোনো না কোনো মানসিক রোগে ভুগছেন। এর মধ্যে ৪৫.২ শতাংশ নারী এবং ৫৪.৮ শতাংশ পুরুষ। গবেষণায় আরও দেখা যায়, বিভিন্ন ধরনের মানসিক রোগে ভোগা রোগীদের মধ্যে ৩৩.৩ শতাংশের বয়স ৫১-৬৫ বছর এবং ১৯ শতাংশ রোগীর বয়স ৩১-৪০ বছর। এই বিশাল সংখ্যক রোগীদের মধ্যে ১৭.৩ শতাংশ রোগী মানসিক রোগের বিভিন্ন ওষুধ সেবন করছেন।

মানসিক রোগে আক্রান্ত এই ৪৮.৪ শতাংশ রোগীদের মধ্যে মাত্র ১.৭ শতাংশ রোগীকে মানসিক চিকিৎসার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে মনোরোগবিদ্যা বিভাগে পাঠানো হয়ে থাকে। ৭.৮ শতাংশ রোগী তাদের রোগ সম্পর্কে জানেন এবং ১৭.৩ শতাংশ রোগী বিভিন্ন ধরনের মানসিক রোগের ওষুধ পেয়ে আসছেন।

গত ১০ অক্টোবর ছিল ‘বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস ২০২৩’। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় “মানসিক স্বাস্থ্য সর্বজনীন মানবাধিকার”। ব্যক্তির অন্যান্য মানবাধিকার অথবা মৌলিক অধিকারগুলোর মতো মানসিক স্বাস্থ্য সেবা পাওয়ার অধিকারও গুরুত্বপূর্ণ। তবে গবেষণা বলছে, বাংলাদেশের প্রায় ৯২ শতাংশ মানুষ তাদের মানসিক স্বাস্থ্য সেবা পাচ্ছেন না। এর বহুমুখী কারণ বিদ্যমান আমাদের স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থায়। গবেষকরা বলছেন, সাধারণ মানুষের মাঝে এই বিষয়ে সচেতনতা কম এবং দেখা যাচ্ছে যে, মানসিক রোগ নিয়ে দেশের হাসপাতালগুলোর অন্যান্য বিভাগের ডাক্তারদের মধ্যেও রয়েছে সচেতনতার অভাব। ফলে রোগীদের মানসিক অবস্থা তারা অনেক সময়ই ধরতে পারছে না।

আগতদের একাংশ

গণমাধ্যমকর্মীদের এক প্রশ্নে গবেষকরা বলেন, এই বিশাল জনগোষ্ঠীর মানসিক স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে হলে সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে। আমরা চাই অন্যান্য বিভাগগুলো মানসিক রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াক। তাদের ছাত্র-ছাত্রীদের আমাদের বিভাগে প্লেসমেন্টের ব্যবস্থা করুক। আমরা তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবো। এতে করে তাদের বিভাগে ভর্তি হওয়া রোগীর মধ্যে মানসিক কোনো রোগ থাকলে তারা আমাদের সাইকিয়াট্রি বিভাগে রোগীকে রেফার করতে পারবে। সম্মিলিতভাবে কাজ না করলে এই ৯২ শতাংশ মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে উঠবে আমাদের জন্য।

গবেষণার ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য  অধ্যাপক ডা. মো.শারফুদ্দিন আহমেদ। আরও উপস্থিত ছিলেন, বিএপির সভাপতি বিগ্রে. জেন. (অব.) অধ্যাপক ডা. আজিজুল ইসলাম, কথাসাহিত্যিক ও অধ্যাপক ডা. এম এ মোহিত কামাল, অধ্যাপক ডা. সালাহ্উদ্দিন কাউসার বিপ্লব, অধ্যাপক ডা. এম এস আই মল্লিক, অধ্যাপক ডা. মহাদেব চন্দ্র মণ্ডল, অধ্যাপক ডা. ঝুনু শামসুন নাহার, বিএপির সেক্রেটারি ডা. তারিকুল আলম সুমন সহ দেশের অন্যান্য হাসপাতালের বরেণ্য সাইকিয়াট্রিস্ট এবং অন্য বিভাগের চিকিৎসকগণ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন, বিএসএমএমইউ সাইকিয়াট্রি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. নাহিদ মাহজাবিন মোরশেদ। গবেষণা এবং ফলপ্রকাশ অনুষ্ঠানে সহযোগিতা করেন সাইকিয়াট্রি বিভাগের শিক্ষার্থীরা। অনুষ্ঠানে সায়েন্টিফিক পার্টনার ছিল জেনারেল ফার্মা।

Previous articleএন আই এম এইচ-এর নতুন পরিচালক হলেন অধ্যাপক ডা. অভ্র দাশ ভৌমিক
Next articleসিলেটের নর্থ ইষ্ট মেডিকেল কলেজে বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস-২০২৩ উদযাপন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here