মন থেকে দূর করে দিন করোনা আতঙ্ক

মন থেকে দূর করে দিন করোনা আতঙ্ক
মন থেকে দূর করে দিন করোনা আতঙ্ক

করোনা আতঙ্ক আজ সমস্ত বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। হ্যা, আতঙ্কিত হওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে আমরা যদি সহজ কিছু কৌশল অবলম্বন করি তাহলে করোনা আতঙ্ক থেকে অনেকটাই মুক্ত হতে পারব এবং মানসিক ও শারীরিকভাবে সুস্থ থাকা সহজতর হবে।
করোনা ভাইরাস সম্পূর্ণ নতুন ধরণের একটি ভাইরাস যার সম্পর্কে আমাদের কারও পূর্বের কোন অভিজ্ঞতা নেই। এই পর্যন্ত এর কোন প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয়নি এবং প্রতি দিন হাজার হাজার মানুষ করোনায় মৃত্যু বরণ করছে। কবে এর শেষ হবে সেটিও সম্পূর্ণ অনিশ্চিত। প্রতি দিন নতুন নতুন  দুঃসংবাদ, সতর্ক বার্তা, জরুরী স্বাস্থ্য নির্দেশনা, বিভিন্ন সতর্কতামূলক ধ্বনি ইত্যাদি আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে অসহনীয় করে তুলেছে। আর দিন দিন এই করোনা আতঙ্ক বেড়েই চলেছে। আমরা করোনা থেকে বাঁচতে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরণের সংবাদ শুনছি এবং বিভিন্ন ভাবে সতর্ক থাকার চেষ্টা করছি। কিন্তু এই বাড়তি সতর্কতা কি আমাদের অতিরিক্ত মানসিক চাপের কারণ হয়ে উঠছে না? আমরা কি আরও বেশী আতংকিত হয়ে পড়ছি না? এই অতিরিক্ত মানসিক চাপ এবং আতঙ্ক আমাদের শরীর ও মন উভয়ের জন্যই ক্ষতির কারণ, যা প্রশমন করা প্রয়োজন।
আতঙ্ক দূর করতে গিয়ে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মাধ্যমে আমরা যত বেশী নেতিবাচক সংবাদ শুনি, আমাদের মধ্যে উদ্বিগ্নতা, দুশ্চিন্তা, ভয় এবং হতাশা ততোই বৃদ্ধি পায়। যখন আমরা এই ধরণের মানসিক চাপের সম্মুখীন হই, আমাদের মস্তিষ্ক থেকে স্ট্রেস হরমোন নিঃসরিত নয়। সাধারণত, একইভাবে, এই স্ট্রেস হরমোনের নিঃসরণ হ্রাস করতে আমাদের শরীর স্বয়ংক্রিয় উপায়ে কিছু স্ট্রেস প্রতিরোধী হরমোনও নিঃসরণ করে যা আমাদের এই ধরণের মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। আমাদেরকে শুধু ইতিবাচক মানসিকতা প্রদর্শন করে এই স্ট্রেস প্রতিরোধের স্বদিচ্ছা আমাদের মস্তিস্কে পৌছে দিতে হবে যাতে আমাদের মস্তিষ্ক এই স্ট্রেস হরমোন প্রতিরোধী হরমোন নিঃসরণ করতে পারে। আর তবেই আমরা সফলভাবে এই মানসিক চাপ থেকে নিজেদের মুক্ত করতে পারব। এমন অনেক কৌশল আছে যার মাধ্যমে আমরা আমাদের ইমিউন সিস্টেম এবং নিজেদেরকে করোনা ভাইরাসের এই আতঙ্ক থেকে সুরক্ষিত রাখতে পারি। সেগুলো নিয়েই নিচে আলোচনা করা হল।
১) অতিরিক্ত মাত্রার সতর্কতা এড়িয়ে চলুনঃ  আমাদের মস্তিককে যদি একটি পানির পাত্রের সাথে তুলনা করা হয় তাহলে সহজেই আমরা অতিরিক্ত সতর্ক থাকার কুফল বুঝতে পারব। একটি পাত্র একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ পানিই ধারণ করতে পারে। অতিরিক্ত পানি ঢালার প্রচেষ্টা করলে সেটি উছলে পড়ে যায়। একইভাবে আমাদের মস্তিষ্কও একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ তথ্যই ধারণ করতে পারে। অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করলে সেটি আমাদের শরীর ও মনের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। তাছাড়া বিভিন্ন ধরণের মিথ্যা সংবাদ বা গুজব আমাদেরকে বিভিন্নভাবে বিভ্রান্ত করে যা আমাদের মানসিক চাপ বাড়ার অন্যতম একটি কারণ। বর্তমান অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন। প্রতিদিনই নতুন নতুন সতর্ক বার্তা আসছে। অবশ্যই এমন নয় যে আমরা সেগুলো সম্পূর্ণ এড়িয়ে চলব। কিন্তু আমাদেরকে সংবাদ গ্রহণের বিষয়ে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে এবং মস্তিষ্ককে মাত্রাতিরিক্ত চাপ প্রদান করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
২)  শরীরচর্চাঃ শরীর ও মনের উপর স্ট্রেস হরমোনের প্রভাব কমাতে  শরীরচর্চা খুবই কার্যকরী একটি পদ্ধতি। শরীরচর্চা আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখে এবং মনকে প্রফুল্ল করে। যে কোন ধরণের মানসিক চাপ শরীরচর্চা যেমন, যোগ অভ্যাস, ব্যায়াম ইত্যাদির মাধ্যমে দূর করা যায়। এমনকি অল্প কিছু সময়ের জন্য হাঁটা আমাদের শরীরকে বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্ত রাখতে অনেক বড় ভূমিকা পালন করে।
৩) কাছের মানুষদের সাথে অধিকতর সময় অতিবাহিত করাঃ আমরা সামাজিক প্রাণী। পরিবারের ও কাছের মানুষদের সান্নিধ্য আমাদেরকে আরও সুরক্ষিত ভাবতে অনেক বড় ভূমিকা পালন করে। এটা আমাদের সহজাত বৈশিষ্ট্য। একজন নিঃসঙ্গ মানুষ খুব সহজেই মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন। কিন্তু পারিবারিক এবং সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাস করা একজন মানুষ শারীরিক ও মানসিকভাবে অনেক দৃঢ় হয়ে থাকেন। তাই সামাজিক ও পারিবারিক বন্ধন আরও সুদৃঢ় করে আমরা এই আতঙ্কের সময়টাতে মানসিক জোর বজায় রাখতে পারি এবং এতে আমাদের আতঙ্ক যেমন কমবে, সময়টাও ভাল কাটবে।
এই অস্বাভাবিক সময়ে দুশ্চিন্তা এবং আতঙ্ক খুবই স্বাভাবিক দুটি অনুভূতি। এগুলো আমাদের মস্তিষ্কের মহামারীর প্রতি একটি সময়োপযোগী এবং স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ মানসিক চাপ আমাদের এই দুঃসময়ে প্রয়োজনীয় সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণে প্ররোচিত করবে। কিন্তু এর মাত্রা অত্যধিক হলে, অতিরিক্ত আতঙ্কিত হলে, সেই মানসিক চাপ আমাদের উপকারের বদলে শারীরিক ও মানসিক ক্ষতির কারণ হয়ে দেখা দেয়। তাই আতঙ্কিত না হয়ে ভয়কে জয় করে মানসিক শক্তিতে পরিণত করতে হবে।

Previous articleসহকর্মীর মৃত্যু করোনা মোকাবিলায় পুলিশকে আরো প্রত্যয়ী করবে: রবিউল ইসলাম
Next articleকোয়ারেন্টাইন লাইফে দাম্পত্য কলহ বৃদ্ধির কারণ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here