মনে মনে পড়ার সময় কণ্ঠস্বর শুনতে পান?

মনে মনে বই পড়ছেন, টেক্সট মেসেজ বা নিজের লেখা ডায়েরি পড়ছেন, কিন্তু মনে মনে কণ্ঠস্বর (ইনার ভয়েস) শুনতে পাচ্ছেন- এমন হয়েছে কখনও? মস্তিষ্কের ভেতরে এমন কল্পিত কণ্ঠস্বর শুনতে পাওয়ার সঙ্গে মানসিক রোগ ‘হ্যালুসিনেশন’র মিল রয়েছে।
সম্প্রতি একটি জার্নালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে গবেষকরা বলেন, পাঠকদের মধ্যে এটি একটি ‘কমন ফেনোমেনা’ (সাধারণ বিষয়)।
ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট রুভানি ভালহার, যিনি একইসঙ্গে নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর। এ বিশেষজ্ঞ একটি অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে ২০০৬ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ২৪টি প্রশ্নের ১৩৬টি সহমত উত্তর সংগ্রহ করেন।
মোট ৮২.৫ শতাংশ ব্যক্তি উত্তর দিয়েছেন, তারা মনে মনে পড়ার সময় কল্পিত কণ্ঠস্বর শুনতে পান। ১৩ শতাংশ বলেছেন, তারা মাঝে মাঝে শুনতে পান, যখন খুব আগ্রহ নিয়ে কিছু পড়ছেন। ১০.৬ শতাংশ জানান, তারা কখনও ‘ইনার ভয়েস’ শোনেননি। যদিও কিছু প্রশ্নের উত্তর এখনও অস্পষ্ট।
যারা এমন কণ্ঠস্বর শুনতে পান, তারা প্রায় প্রত্যেকেই জানিয়েছেন- যে কণ্ঠস্বর তারা শুনতে পান সেগুলো ভরাট আওয়াজ ও বেশ উচ্চস্বর।
কেউ কেউ বলেছেন, তারা নিজেদের কণ্ঠস্বরই শুনতে পান। অনেকে বলেছেন, তারা ওই কণ্ঠস্বর নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না, ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে আবেগ অনুযায়ী স্বর পাল্টে যায়।
দেখা যাক কয়েক জনের উত্তর
‘যদিও আমি নারী, কিন্তু মনে মনে বই পড়ার সময় এক শান্ত যুবকের কণ্ঠস্বর শুনতে পাই।’
‘আদর্শ হিসেবে আমি যে চরিত্র কল্পনা করি, মনে মনে বই বা অন্যকিছু পড়ার সময় সেই কণ্ঠস্বর শুনতে পাই।’
‘আমার দাদা। আমার ছোটবেলা থেকে তার মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তিনি অনেক কিছু পড়ে শুনিয়েছেন আমাকে। আমি আমার দাদার কণ্ঠস্বর শুনতে পাই।’
‘ঘটনা সাপেক্ষে, একেক সময় আমি একেক কণ্ঠস্বর শুনতে পাই।’
‘গল্পের চরিত্র অনুযায়ী সাধারণত আমি আমার বন্ধুদের কণ্ঠস্বর শুনতে পাই।’
গবেষণাপত্রে ভালহার বলেন, বিষয়টির সঙ্গে সাব-কনসাস মাইন্ডের যে অংশ সম্পর্কে আমরা জানি না, এর সম্পর্ক থাকতে পারে।
পরবর্তী গবেষণায় মানসিক রোগ হ্যালুসিনেশন সম্পর্কে আরও পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাবে, আশা করেন তিনি।
দ্য মেনটাল হেলথ ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, কল্পিত কণ্ঠস্বর শুনতে পাওয়া এক ধরনের হ্যালুসিনেশন। মানসিক বিকারগ্রস্ত ব্যক্তি যেমন সিজোফ্রেনিয়ার রোগীরা এমন কল্পিত কণ্ঠস্বর শুনতে পান। মোটা দাগে হিসাব করা হয়, মোট জনসংখ্যার পাঁচ থেকে ২৮ শতাংশ মানুষ কল্পিত কণ্ঠস্বর শুনতে পান, বাকিরা পান না। এর আওতা অনেক বেশি, কারণ মানসিক রোগী হিসেবে বিবেচনা করা হবে- এমন আশঙ্কায় অনেক মানুষ চিকিৎসকের কাছে যান না।
যদিও হ্যালুসিনেশন ও কল্পিত কণ্ঠস্বর শুনতে পাওয়ার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক পাওয়া যায়নি, যোগ করেন ভালহার। তার মতে, পরবর্তী গবেষণায় এ সম্পর্কে আরও স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে।

Previous articleসম্পর্ক টিকিয়ে রাখার দায়িত্ব কার?
Next articleবলার অনেক আগেই ভাবে শিশুরা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here