মনের খবর ও স্কয়ার ফার্মার আয়োজনে লাইভ ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত

করোনার উপসর্গ দেখা দিলে অনেকেই চিকিৎসকের কাছে আসতে চান না, টেস্ট করাতেও চান না অনেকে। এর পেছনে কুসংস্কার এবং সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি বড় বাধা। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য মানুষকে আশস্ত করতে হবে, ভুল ধারণা দূর করতে হবে এবং চিকিৎসা পেতে হয়রানি দূর করতে হবে বলে মনে করেন দেশের খ্যাতনামা মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞগণ।

গতকাল (১৪ জুলাই) মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন মনের খবর ও স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল্‌স লিমিটেড আয়োজিত Psychosocial  Analysis & Management in Covid 19 র্শীষক ওয়েবিনারে তারা এসব কথা বলেন।

ওয়েবিনার এর স্পীকার ডা. মুনীম রেজা করোনায় স্বজন হারানো একটি পরিবারের মানসিক অবস্থাসহ পারিপার্শ্বিক বিষয়ে আলোকপাত করেন। এ বিষয়ে মনোসামাজিক বিশ্লেষণ করেন ওয়েবিনারে অংশগ্রহণকারী বিশেষজ্ঞগণ।

মনের খবর সম্পাদক ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় এর মনোরোগবিদ্যা বিভাগ এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সালাহ্‌উদ্দিন কাউসার বিপ্লব এ সভাপতিত্বে ওয়েবিনারে প্যানেল অব এক্সপার্ট হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব সাইকিয়াট্রিষ্টস (বিএপি) এর সভাপতি অধ্যাপক ডা. ওয়াজিউল আলম চৌধুরী, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট এর সাবেক দুই পরিচালক অধ্যাপক ডা. মোহিত কামাল, অধ্যাপক ডা. আনোয়ারা বেগম, পাবনা মানসিক হাসপাতাল এর সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মাহফুজুল হক এবং নাট্যব্যক্তিত্ব ও মনের খবর উপদেষ্টা মামুনুর রশীদ।

অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মাহফুজুল হক বলেন, “করোনা বিষয়ে মানুষের ভ্রান্ত ধারণা দূর করতে বেশি বেশি ইতবাচক প্রচারণা চালাতে হবে। জনসাধারণকে বোঝাতে হবে যে এটা অন্যান্য রোগের মতই এবং চিকিৎসায় বেশিরভাগ মানুষ সুস্থ হয়ে যায়।” কুসংস্কারের পেছেন করোনা সংক্রান্ত সঠিক তথ্য উপস্থাপনের ব্যর্থতাকে দায়ী করেন তিনি।

পরিবারের কাউকে হারানোর শোক কাটিয়ে ওঠা সর্ম্পকে অধ্যাপক ডা. মোহিত কামাল বলেন, পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসার ব্যাপারে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। অনেক নেগেটিভ চিন্তা থেকে সুইসাইডাল চিন্তা চলে আসে। সুইসাইডাল অবস্থা থেকে চিকিৎসার মাধ্যমে কিছুটা সুস্থ করে পরবর্তী শোক কাটিয়ে উঠার জন্য ধর্মীয় অনুশাসনের দিকে ধাবিত করার চেষ্টা করা যেতে পারে। এছাড়া মৃত্যুকে ইতিবাচকভাবে দেখলে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা সহজ হয় বলে জানান তিনি।

শুরুর দিকে করোনা নিয়ে ট্রেনিং এর ব্যবস্থা বা প্রয়োজনীয় সুরক্ষা ব্যবস্থা ছিল না, তখন ডাক্তাররাও এড়িয়ে চলছিল আর তখন থেকেই মিডিয়া নানান নেগেটিভ জিনিসই বেশি করে তুলে ধরেছে, যার কারণে মানুষের মধ্যে ভিন্ন ধারণা সৃষ্টি হয়েছে । নেতিবাচক সংবাদ এর পরিবর্তে বেশি বেশি পরিমানে ইতবাচক সংবাদ পরিবেশনের প্রতি আহ্বান জানান করোনা বিষয়ক জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. মোহিত কামাল।

করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আশংকা কিংবা ভয় থেকে মুক্তি পাওয়ার প্রসঙ্গে বিএপি সভাপতি অধ্যাপক ডা. ওয়াজিউল আলম চৌধুরী বলেন, মার্চের দিকে WHO বলেছিলেন কোভিড ১৯ এর সময়ে এবং পরবর্তী সময়ের মানসিক অবস্থা, দৈনন্দিন অবস্থা আগের মত থাকবে না। কোভিডের ক্ষেত্রে ভয় স্বাভাবিক থেকে একটু ভিন্ন। আর এ ভয় থেকে বিষণ্ণতা বাড়ছে, সুইসাইড করছে। যেকোন দুর্যোগ পরবর্তীতে মানুষ মানসিকভাবে আক্রান্ত হয়। এক্ষেত্রে আক্রান্ত হলেই কারো না কারো সাহায্যের প্রয়োজন। অনেকেই ফ্রন্টলাইন থেকে কাজ করছে, কিভাবে সাহায্য পেতে পারে। সাধারণ মানুষদের যাতে সাহায্য করতে পারি, আমরা সেই চেষ্টাই করছি।

অধ্যাপক ডা. আনোয়ারা বেগম বলেন, পরিবারের কেউ মারা গেলেই গিল্টিং ফিলিং হবেই, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়াতে মেনে নিতে পারছেনা , অনেকে নিজেকে দায়ী করছেন। একা একা শোক পালন করাতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছেন অনেকে। যদি শোকটা সবার সাথে ভাগাভাগি করা যেত তহলে ভালো হত, কিন্তু তা হচ্ছে না। যার ফলে বিষণ্ণতা সহ নানা মানসিক সমস্যা  বাড়ছে। মানুষ তার অর্জিত গুণাবলি হারিয়ে ফেলছে। জীবনের আশংকা দেখা দিলে মানবিক গুণাবলি হ্রাস পায়। যখন কোভিডের ভ্যাকসিন, ঔষধ আসবে তখন হয়তো এই মানবিক গুনাবলি আবার ফিরে আসবে।

মতামত ব্যক্ত করতে গিয়ে মামুনুর রশীদ বলেন, আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থাতেই ভুল।যেটা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সেই মানসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে অবহেলিত করে রাখা হয়েছে আমাদের দেশে যুগের পর যুগ। মিডিয়াকে দায়িত্বশীল হতে হবে। করোনা আক্রান্তের কোন কোন বিষয়গুলো প্রচার করতে হবে সে ব্যাপারে সচেতন হতে হবে, শুধু সমস্যার স্টোরি না ছাপিয়ে সাফল্যের স্টোরিও ছাপাতে হবে। একটা সম্পূর্ণ গাইডলাইন আনতে হবে। মানসিক শক্তি দিয়ে যাতে ওভারকাম করতে পারি সেদিক দিয়ে জোর দিতে হবে। ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফার লোভ পরিহারের প্রতিও আহ্বান জানান তিনি।

ডা. ফাতেমা তুজ জোহরা জ্যোতি’র সঞ্চলনায় ওয়েবিনারে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল্‌স লিমিটেড এর জেনারেল ম্যানেজার (সেলস) মাহমুদুর রহমান ভূঁইয়া এবং ডা. রুবায়েত আদনান উপস্থিত ছিলেন।

মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে চিকিৎসকের সরাসরি পরামর্শ পেতে দেখুন: মনের খবর ব্লগ
করোনায় মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক টেলিসেবা পেতে দেখুন: সার্বক্ষণিক যোগাযোগ
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
করোনায় সচেতনতা বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও বার্তা দেখুন: সুস্থ থাকুন সর্তক থাকুন

Previous articleমানবদেহে করোনা প্রতিরোধ ক্ষমতা স্থায়ী নয়: গবেষণা
Next articleঅনলাইনে যৌন হয়রানী বিষয়ে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ওয়েবিনার আজ রাতে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here