ভাইরাসের ভয় নেই, খিদের ভয় কর্মহীন বুয়াদের

0
36
ভাইরাসের ভয় নেই বাসাবাড়িতে কাজ করা কর্মহীন বুয়াদের
ভাইরাসের ভয় নেই বাসাবাড়িতে কাজ করা কর্মহীন বুয়াদের

মরণঘাতী করোনা ভাইরাস সকল পেশার মানুষের মনকে হতাশায় ডুবিয়ে রেখেছে। মানুষের স্বাভাবিক জীবনকে ভয়ংকর ভাবে গ্রাস করছে। উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত মানুষের দিন কিছুটা স্বাভাবিক ভাবে কেটে গেলেও নিম্নবিত্ত মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।
আমাদের দেশে বসবাস করা, বিশেষ করে শহর অঞ্চলের দিকে বাসাবাড়িতে কাজ করা বুয়াদের সংখ্যা অনেক আছে। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে দেশে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসস্থা নেয়া হয়েছে। সারা দেশের মানুষকে সচেতন করার জন্য নানা ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সারা দেশে কর্মস্থল গুলোতে সাধারন ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। সামাজিক দূরত্ব মানার জন্য সকলকে সচেতন করা হচ্ছে। আর এ সচেতনতা মানতে শহরের বাসা বাড়িতে কাজ করা বুয়ারা কাজ হারিয়ে ফেলছে। যাদের আয়ের একমাত্ত উৎস বাসা বাড়িতে কাজ করে উপার্জন করা, যা এখন সম্পূর্ণ বন্ধ।
ভবন মালিকেরা সচেতন থাকার জন্য বুয়াদের বাসায় এসে কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। কারণ, তারা অনেক বাসা বাড়িতে কাজ করে এবং কখনো বুয়া এক বাসা থেকে সংক্রমিত হয়ে যাতে অন্য বাসায় না যায়, সেই ভয়ে মালিকেরা তাদের কাজে আসতে নিষেধ করেছে। এ অবস্থায় তাদের জীবন দূর্বিষহ হয়ে উঠেছে।
মিরপুর রূপনগর আবাসিক এলাকায় বস্তিতে থাকা সালমা( ছন্দনাম) বাসা বাড়িতে কাজ করতো। বর্তমানে তার অবস্থা সম্পর্কে সে জানিয়েছে, তার দুর্দিনের বর্ননা দিতে গিয়ে সে অঝোর ধারায় কান্না করছিল। বাসায় তার অসুস্থ স্বামী ও তিন জন ছেলে মেয়ে নিয়ে একরকম না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে। সারাদিন সে ৯/১০ টা বাসায় কাজ করতো, সেখান থেকে পাওয়া বেতন দিয়ে সংসার চলতো। কিন্তু এখন সংসার চালানোর মতো উপায় তার কাছে নেই। মাস শেষ হলেই বাসা বাড়া, সবার খাবার জোগান এসব কিভাবে করবে সে কোন উপায় খুজে পাচ্ছে না। দুশ্চিন্তার মধ্যে সে দিন কাটাচ্ছে। চারপাশে সে ত্রান পাওয়ার খবর শুনে কিন্তু এখনো সে কোন ত্রান পায়নি। একদিন কলেজপড়ুয়া এক ছেলের কাছ থেকে একটা খাবারের ব্যাগ পায়, সেখানে যা ছিলো তা দিয়ে ৫/৬ দিন কোনরকম কাটিয়ে নিয়েছে। কিন্তু এভাবে কি দিন যায়, আর কতজনই বা তাদের এভাবে সাহায্য করবে। তার কথায়, না খেয়ে মরে পরে থাকলেও কেউ জানতে পারবে না।
একই বস্তির সালমা (ছন্দনাম) বলেন, “বাসা বাড়িতে কাজ করতাম তখন ম্যাডামেরা বেতনের পাশাপাশি বকশিস ও দিতো, খাবার দাবার ও মাঝে মাঝে দিতো। এখন সব বন্ধ। সামনের দিনগুলো কিভাবে কাটাবে, বাচ্চাদের কি খাওয়াবে তার জানা নেই।”
‘গরিবের খবর কেউ রাখে না, আমারা না খাইয়া মইরা গেলেও কার কিচ্ছু যায় আহে না’ বলেন রহিমা (ছদ্মনাম)।  ভাইরাসের ভয় তার মধ্যে তেমন কাজ করে না, ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মরার ভয়ের চেয়ে না খেয়ে মরার ভয় তার মধ্যে বেশি কাজ করে। আবার কারো কাছ থেকে সাহায্য পাওয়ার অপেক্ষায় সে দিন গুনছে, যদি কেউ কিছু দেয়। তা না হলে শুধু মাত্র না খেয়ে খেয়ে মৃত্যুর অপেক্ষা করতে হবে, যা তার কাছে এই করোনা ভাইরাসের চেয়েও অনেক বেশি ভয়ংকর। এই করোনা ভাইরাস নিয়ে সর্তক থাকার ব্যাপারে তার কাছে জানতে চাইলে সে জানায় খিদের জ্বালা বড় জ্বালা, কোন ভাইরাস সচেতনতা তার মধ্যে কাজ করে না।
লিখেছেন: সৈয়দা মুমতাহিনাহ্ সোনিয়া

Previous articleকরোনা আক্রান্তকে শনাক্ত করবে কুকুর!
Next articleকরোনাকালের ধরিত্রী দিবস

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here