বিষণ্ণতা থেকে মুক্ত থাকার কিছু কৌশল

0
119
বিষণ্ণতা যেন

বিষণ্ণতা যেন অনেকের জীবনকে ঠিক ঘন কুয়াশারর মত আচ্ছন্ন করে রেখেছে। অনেকের কাছে বিষণ্ণতা যেন চোরাবালির মত যার মাঝে তারা আটকে আছে। আবার অনেকের পায়ে বিষণ্ণতা যেন এক বেড়ির মত। চাইলেও যার কবল থেকে মুক্তি পাওয়া যেন অসম্ভব।

বিষণ্ণতা ঠিক এভাবেই মানুষের জীবনে কখনো ঘন কুয়াশা, কখনো চোরাবালি আবার কখনো পায়ের বেড়ি হয়ে পরজীবীর মত বসবাস করে। এই পরজীবী আপনার মানসিক জোর,আত্মবিশ্বাস সব কিছু শোষণ করেই টিকে থাকে। শারীরিক কোন অস্তিত্ব না থাকলেও মানসিক ব্যাধির মতই এটি আপনাকে ধিরে ধিরে গ্রাস করে ফেলে।

বিষণ্ণতা আপনার মানসিক শক্তি ধিরে ধিরে শোষণ করে আপনাকে দুর্বল করে দেয়। তাই এর সাথে যুদ্ধ করে একে বিতাড়িত করতে হলে আপনাকে আপনার মানসিক জোরকেই নিজের অস্ত্র করে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। বিষণ্ণতা যেন আপনাকে গ্রাস না করতে পারে তার জন্য কিছু উপায় অবলম্বন করা যেতে পারে-

১. নিয়মিত শরীর চর্চা করা: কথায় আছে অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা। কর্মঠ মানুষ শারীরিক ও মানসিকভাবে অধিক সুস্থ এবং বিষণ্ণতামুক্ত থাকে। নিয়মিত শরীর চর্চা করতে খুব আড়ম্বর করে জিম যেতে হবে এমনটা নয়। নিয়মিত কিছু সময় হাঁটা, সাইকেল চালানো কিংবা সাঁতার কাটার মাধ্যমে সহজেই শরীরচর্চা করে নিতে পারেন।

২. প্রাত্যহিক কাজকর্মের সূচি প্রস্তুত করা:  প্রতিদিনের কাজকর্মের একটি সূচি প্রস্তুত করে দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনা করলে জীবনে ভারসাম্য বজায় থাকে। সঠিক সময়ে খাওয়া, ঘুমানো, ঘুম থেকে ওঠা এবং অন্যান্য কাজকর্ম পরিচালনা করলে শরীর স্থিতিশীল এবং মন সুদৃঢ় থাকে। এতে করে বিষণ্ণতা থেকে দূরে থাকা যায়।

৩. নিয়মিত স্বাস্থ্যকর আহার: সম্প্রতি কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, বিষণ্ণতার সাথে প্রাত্যহিক খাওয়া দাওয়ার বেশ নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। যারা প্রতিদিন খুব ভারি মশলাযুক্ত খাবার খায় তাদের মাঝে বিষণ্ণতার হার বেশি মাত্রায় দেখা যায়। আর যারা নিয়মিত স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ করে তাদের মাঝে বিষণ্ণতার হার অনেক কম দেখা যায়।

৪. দৃষ্টিভঙ্গী পরিবর্তন: অন্য সব কিছুর আগে নিজের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গীর পরিবর্তন করে নিজেকে আবার আত্মবিশ্বাসী করে তুলতে হবে। বিষণ্ণতা যেমন আপনাকে গ্রাস করতে সর্বপ্রথম আপনার আত্মবিশ্বাসকে গ্রাস করতে উদ্যত হয়, তেমনি বিষণ্ণতাকে দূর করতে আপনাকেও মনের জোর বাড়াতে হবে। বিষণ্ণ প্রতিকূল পরিবেশকে নিজের অনুকূল করে কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলতে হবে।

৫. অন্যদের সাথে সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি: বিষণ্ণতা একজন মানুষকে একটা নির্দিষ্ট গণ্ডির মাঝে আবদ্ধ করে দেয়। এই একাকী অবস্থা থেকে শুধুমাত্র নিজের চেষ্টায় মুক্তি পাওয়া খুবই কঠিন হয়ে যায়।  এক্ষেত্রে নিজের মনের কথাগুলো অন্য কারও সাথে ভাগ করে নিলে জীবনের কঠিন সময়টাও অনেকটা সহজ হয়ে যায়। সামাজিক বন্ধন আমাদের মাঝে সহযোগিতা, সদ্ভাব এবং একে অপরের প্রতি সমর্থন বৃদ্ধি করে।

৬. আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি: বিষণ্ণতা মানুষকে মানসিকভাবে দুর্বল করে দেয়। আর মানসিকভাবে দুর্বল ব্যক্তি নিজের উপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে। তাই বিষণ্ণতা দূর করতে হলে প্রথমে নিজের মানসিক জোর বাড়াতে হবে। আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পেলে আত্মনিয়ন্ত্রণ করাও সহজ হবে।

৭. প্রয়োজনে কাউন্সিলিং করা: একজন ভাল কাউন্সিলর আপনাকে সব ধরণের নেতিবাচক চিন্তাভাবনা থেকে মুক্ত থাকতে সাহায্য করতে পারবেন। তাই প্রয়োজনে একজন ভাল কাউন্সিলরের পরামর্শ অবশ্যই নিন।
এই বিষয়গুলো খেয়াল রাখলে বেশ সহজেই আপনার মন থেকে বিষণ্ণতা নামক পরজীবী চিরতরে বিদায় নেবে। কখনোই বিষণ্ণতার কাছে আত্মসমর্পণ করবেন না। বিষণ্ণতার বিরুদ্ধে মানসিক প্রতিরোধ গড়ে তুলুন।

স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে

 

Previous articleশিশুরাও হতে পারে মানসিক অবসাদের শিকার
Next articleকোভিড-১৯ এর সময়ে মানসিক স্বাস্থ্যই মূল সম্পদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here