বিষণ্ণতায় আক্রান্তদের বিশেষজ্ঞের পরামর্শের প্রতি অনীহা

0
439
বিষণ্ণতায় আক্রান্তদের বিশেষজ্ঞের পরামর্শের প্রতি অনীহা

বর্তমান সময়ের ব্যস্ত জীবনে মানসিক চাপ একটি অতি পরিচিত বিষয়।  এই মানসিক চাপ যখন অত্যধিক মাত্রায় বেড়ে গিয়ে বিষণ্ণতায় রূপ নেয় তখন সেটি নিরাময় করা অত্যন্ত আবশ্যক হয়ে পড়ে। সকলেই চায় মানসিক চাপ মুক্ত একটি সুস্থ জীবন।

তবে বিষণ্ণতা নিরাময়ের ক্ষেত্রে তাদের মাঝে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়ার প্রতি প্রায়শই অনীহা প্রকাশ করতে দেখা যায়। মনস্তত্ত্ববিদগণ খুঁজে বের করেছেন কেন তাদের মাঝে এই অনীহা কাজ করে।

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিলে বা বিষণ্ণতা দূর করতে যেসব মনস্তাত্ত্বিক চিকিৎসা রয়েছে সেগুলো অনুসরণ করলে এগুলো দৈনন্দিন জীবনে আপনি যেসব মানসিক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন সেগুলো দূরীকরণে সহায়তা করে এবং ধীরে ধীরে একজন মানুষ সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে। তাহলে কেন একজন মানসিক চাপ বা বিষণ্ণতায় আক্রান্ত ব্যক্তি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে চাইবেন না? এর পেছনে যেমন ব্যক্তির মানসিকতা সংক্রান্ত কারণ রয়েছে, তেমিন রয়েছে সামাজিক কারণ।

সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, বিষণ্ণতায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে প্রায় তিন চতুর্থাংশ লোক মানসিক স্বাস্থ্য সুবিধাসমূহ নিতে অনাগ্রহী। এটি অবশ্যই একটি বড় সমস্যা। এটি যেমন ব্যক্তি পর্যায়ে বিপদ বাড়াচ্ছে, তেমনি সামাজিক ক্ষেত্রেও সমস্যা সৃষ্টি করছে। এসব কারণে মানুষের মাঝে অসামাজিক কার্যকলাপ, নেতিবাচক মানসিকতার বিকাশ, স্বাস্থ্য ঝুঁকি বৃদ্ধি, এবং আত্মহত্যা প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

যেসব কারণ মানসিক সমস্যার শিকার এসব ব্যক্তিদের বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে অনীহা প্রকাশের পেছনে কাজ করছে সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হল তারা এটিকে এক প্রকার লজ্জাজনক কাজ হিসেবে দেখে। তারা ভাবে অন্যরা তার বিষয়ে কি ভাববে। আমাদের সমাজে এখনও এমন একটি ধারণা প্রচলিত আছে যে মানসিক যে কোন রোগের চিকিৎসা করানো মানেই সেই ব্যক্তি পাগল হয়ে গেছে। এই সামাজিক সম্মানহানির ভয় থেকেই তারা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া থেকে বিরত থাকে। তাকে যতই বোঝানো হোক যে বিষয়টা মোটেও তেমন নয় এবং তার জন্য পরামর্শ গ্রহণ অত্যন্ত জরুরী, তিনি এই দুশ্চিন্তা থেকে বের হতে পারেন না যে অন্যরা তাকে পাগল ভাববে। যার ফলে তাদের সমস্যার সমাধান তো হয়ই না বরং এটি তাদের উপর মানসিক চাপের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয়।

গবেষণায় উঠে এসেছে যে, এসব ক্ষেত্রে রোগীরা তাদের সমস্যা নিজেরাই সমাধান করতে চান। তারা সামাজিক হেনস্তার ভয় এবং লজ্জার কারণে কারও সাথে এই সমস্যা ভাগাভাগি করে নিতেও আগ্রহ প্রকাশ করেননা।  আবার অনেকের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত সুযোগসুবিধার অভাব, সুশিক্ষার অভাব, অর্থনৈতিক কারণ, দীর্ঘ মেয়াদী চিকিৎসা ব্যবস্থা এবং বিশেষজ্ঞদের অপ্রাপ্যতার কারণেও সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করা সম্ভব হয়ে ওঠেনা।
মানসিক স্বাস্থ্যের ঝুঁকি নিরসনে সব ব্যাবস্থা পর্যাপ্ত মাত্রায় হাতের কাছে থাকলেও অনেকাংশেই দেখা যাবে সেটি

অনেকেই গ্রহণ করছেন না। তাই এই সমস্যা সমাধানে শুধু মানসিক স্বাস্থ্য সেবার প্রসার ঘটালেই চলবেনা। বরং সামাজিক ও ব্যক্তি পর্যায়ে মানুষের মাঝে মানসিকতার পরিবর্তন আনতে হবে । মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে এ বিষয়ে আরও বেশী সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে এবং আরও অধিক মাত্রায় মানসিক স্বাস্থ্য কর্মী নিযুক্ত করে একদম প্রান্তিক পর্যায়ে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রচারণা পৌঁছে দিতে হবে।

সূত্র: সাইকোলজি টুডে-https://www.psychologytoday.com/us/blog/fulfillment-any-age/202002/why-do-people-anxiety-disorders-avoid-getting-therapy
অনুবাদ করেছেন: প্রত্যাশা বিশ্বাস প্রজ্ঞা

করোনায় স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে

 

Previous articleটেলিভিশন সামনে না থাকলে খেতে পারি না
Next articleঅটিজম কী, কিভাবে বুঝবেন?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here