বাড়ি থেকে অফিস করার সময় নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন

বাড়ি থেকে অফিস করার সময় নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন
বাড়ি থেকে অফিস করার সময় নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন
কোভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাবের কারণে বেশীরভাগ প্রতিষ্ঠানই কর্মচারীদের বাড়ি থেকে কাজ করতে বলেছেন। ওয়ার্কিং ফ্রম হোম বা বাড়ি থেকে কাজ করার নিজস্ব অনেক সমস্যা রয়েছে, কিন্তু কয়েকটি উপায় মেনে চললে আপনি নিজের মানসিক সুস্থতা বজায় রাখতে পারবেন।
ভয় পাওয়া, হতভম্ব অথবা বিভ্রান্ত বোধ করা স্বাভাবিক অনুভূতি
এই ধরনের পরিস্থিতিতে ভয় পাওয়া, হতভম্ব, বিভ্রান্ত এবং বিরক্ত বোধ হওয়াটা স্বাভাবিক। এগুলি নিম্নলিখিত কারণগুলির জন্য হতে পারে-
  • কী ঘটতে চলেছে তা জানা নেই এবং বর্তমান পরিস্থিতির সাথে কীভাবে খাপ খাইয়ে নিতে হবে সে বিষয়ে অনিশ্চয়তা।
  • বর্তমান পরিস্থিতি কতদিন স্থায়ী হতে পারে ও কোনদিকে বাঁক নিতে পারে সে বিষয়ে অনিশ্চয়তা।
  • বাড়ি থেকে কাজ করার সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার চ্যালেঞ্জ- এর মধ্যে রয়েছে লজিস্টিক্যাল চ্যালেঞ্জ যেমন ইন্টারনেটের সংযোগ এবং কাজ সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ যেমন ব্যক্তিগত এবং দলগত লক্ষ্য পূরণের পূনর্মূল্যায়ন করা।
  • কাজের দিকে মনোঃসংযোগ দেবার চেষ্টা করার সময় বিভিন্ন দায়িত্বগুলির জট পাঁকিয়ে যাওয়া, এর মধ্যে রয়েছে গৃহস্থালির কাজকর্ম, বয়স্ক মানুষের পরিচর্যা এবং শিশুর যত্ন নেওয়া।
বাড়ি থেকে কাজ করার সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেওয়া
আপনি যদি এমনটা আগে না করে থাকেন বা এমনটা করার অভ্যাস যদি আপনার না থাকে তাহলে বাড়ি থেকে কাজ করার মত একটি হঠাৎ উদয় হওয়া পরিস্থিতি আপনার কাছে চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। এই ধরনের পরিস্থিতিকে সহজ করার জন্য কিছু নিয়ম মেনে চলা যেতে পারে। বাড়ি থেকে কাজ করার জন্য একটি রুটিন এবং আনুষ্ঠানিকতা তৈরি করতে হবে। নিম্নলিখিত কাজগুলির মাধ্যমে আপনি এটি করতে পারেন।
  • কাজের জন্য নির্দিষ্ট জায়গা তৈরি করুন। বিছানায় বা ইজি চেয়ারে বসে কাজ করবেন না। একটা টেবিল অথবা ডেস্কে বসে কাজ করুন। সেইখানে যেন পর্যাপ্ত আলোবাতাস থাকে।
  • কাজের মুড তৈরি করার জন্য অফিসের পোশাক পরে কাজে বসুন।
  • যেমন আপনি অফিসে করতেন ঠিক সেইরকম ভাবে আপনার কাজের সময় ও বিরতির সময় নির্দিষ্ট রাখুন।
  • কাজের সময় এবং বাড়ির জন্য সময় নির্দিষ্ট করুন। এমন যেন না হয় যে আপনি সারাক্ষণ অফিসের কাজ নিয়েই মত্ত হয়ে রয়েছেন।
  • আপনার মিটিং-এর নির্ঘন্ট অনুসরণ করুন। বাড়ি থেকে কাজ করার সময় মিটিং-এর ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তাই প্রয়োজন হলে আপনার ফোনে অ্যালার্ম লাগিয়ে রাখুন অথবা আপনার ওয়ার্ক ক্যালেন্ডারকে ফোনের সাথে সিঙ্ক করুন।
  • আপনার পেশাগত ও প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্যের বিষয়ে খেয়াল রাখুন।
  • আপনার সহকর্মীদের সাথে যোগাযোগ রাখুন। তাদের সাথে যুক্ত থাকার জন্য প্রতিদিন তাদের খোঁজখবর নিন।
 পরিবারের সাথে চুক্তি
  • পরিবারের একাধিক ব্যক্তি যদি বাড়ি থেকে কাজ করেন তাহলে প্রত্যেকের জন্য আলাদা জায়গা ব্যবস্থা করার কথা বিবেচনা করুন যাতে সবাই নির্বিঘ্নে নিজেদের কাজ করতে পারেন। এই ব্যবস্থাটি বাড়ি থেকে পড়াশুনা করছে এমন বাচ্চাদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য বা যারা ছবি আঁকা বা বই পড়ার মত বিভিন্ন কাজকর্ম নিয়ে ব্যস্ত রয়েছে।
  • পরিবারের লোকেদের সাথে বসে একটি চুক্তি তৈরি করুন যে বাড়ি থেকে কাজ করার পরিস্থিতিতে তাদের ভূমিকা কী। আপনি তাদের সাথে এইগুলি অথবা এর মধ্যে থেকে কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে পারেন। আপনাকে রোজ বাড়ি থেকে কতক্ষণ কাজ করতে হবে? এতে আপনার পরিবারের ভূমিকা কী? আপনার পরিবারের কথাবার্তা বলার বা কার্যকলাপের সময় কোনটা? শান্তিতে বসে আপনি যাতে কাজ করতে পারেন সেই জন্য টিভির আওয়াজকে ইত্যাদিকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।
  • বাড়ির কাজের লোককে যেহেতু ছুটি দেওয়া হয়েছে তাই আপনি গৃহস্থালির কাজকর্মে কতটা সাহায্য করতে পারবেন? প্রয়োজন হলে একটা টাইম টেবিল তৈরি করুন যাতে আপনার কাজের সময়ের কোনও ব্যঘাত না ঘটে।
  • প্রত্যেকের সাথে যোগাযোগ রাখার জন্য পরিবারের কাজকর্মের একটা নির্ঘন্ট তৈরি করুন।
মাথায় রাখবেন যে যদিও আমরা সবাই একটা অনিশ্চয়তার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। আমাদের মধ্যে কেউ কেউ সহজে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে পারেন। যদি আপনার মনে হয় যে আপনি এই চাপ নিতে পারছেন না বা এই লক্ষণগুলি অনুভব করেন তাহলে সাথে সাথে আপনার এমপ্লয়ী অ্যাসিস্ট্যান্স প্রোগ্রাম (ইএপি) প্রতিনিধির সাথে যোগাযোগ করুন। যদি আপনার প্রতিষ্ঠানে কোন ইএপি পরিষেবা না থাকে তাহলে আপনি হেল্পলাইনে ফোন করতে পারেন অথবা আপনার নিকটবর্তী মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞর সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।
কোভিড-১৯ এবং শারীরিক দূরত্ব
শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার ক্ষেত্রে যদি এর মধ্যে একটি বা একাধিক লক্ষণের সাথে মিল খুঁজে পান তাহলে আপনার কোনও বিশেষজ্ঞের সাহায্যের প্রয়োজন হতে পারে।
শারীরিক
  • চূড়ান্ত ক্লান্তি
  • মাথা ঘোরা
  • বুকে চাপ অনুভব করা
  • পেটে ব্যাথা
  • অনিদ্রা/ ঘুমের ব্যাঘাত
  • বমি বমি ভাব
  • শ্বাস কষ্ট
আবেগজনিত
  • ঘনঘন রাগ হওয়া
  • রিলাক্স করতে না পারা
  • ভয় বেড়ে যাওয়া
  • অন্যদের সাথে খিটখিট করা
  • রাগে বা অভিমানে ফেটে পড়া
  • জিনিষ জমিয়ে রাখার প্রবণতা
  • মনোযোগের অভাব

সূত্র: ইন্ডিয়ান সাইকিয়াট্রি বিষয়ক ওয়েবসাইট অবলম্বনে।


মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে চিকিৎসকের সরাসরি পরামর্শ পেতে দেখুন: মনের খবর ব্লগ
করোনায় মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক টেলিসেবা পেতে দেখুন: সার্বক্ষণিক যোগাযোগ
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
করোনায় সচেতনতা বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও বার্তা দেখুন: সুস্থ থাকুন সর্তক থাকুন

Previous articleসরকারি চাকরিজীবীদের জন্য টেলিমেডিসিন সেবা চালু
Next articleদুশ্চিন্তার কিছু ভালো দিকও রয়েছে!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here