বাইপোলার ডিজঅর্ডারে ভুগেছিলেন সাহিত্যিক ভার্জিনিয়া উলফ

0
71

বিংশ শতাব্দীর আধুনিকতাবাদী সাহিত্যিক ভার্জিনিয়া উলফ। ১৮৮২ সালের ২৫ জানুয়ারি লন্ডনের দক্ষিন কেনসিংটনে ২২ হাইড পার্কের একটি বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন লেখিকা উলফ। তার পুরো নাম ছিল এ্যাডেলাইন ভার্জিনিয়া স্টিফেন। নিজের অন্যতম সেরা লেখা মিসেস ডেলোয়ে, টু দ্য লাইট হাউজ ও অরলান্দোর মাধ্যমে পুরোবিশ্বের কাছে পরিচিত হয়ে আছেন ভার্জিনিয়া উলফ। তবে দুনিয়াজোড়া পরিচিতি পেলেও সবসময় মানসিক সমস্যার ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছিল এই লেখিকাকে।

শৈশবে সৎ ভাইদের দ্বারা যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছিলেন সাহিত্যিক উলফ। তার বিভিন্ন লেখনীতে সেই বিষয়টি তুলে ধরেছেন তিনি। মায়ের মৃত্যুর পর প্রথমবারের মত মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন ভার্জিনিয়া। আর সেই অসুস্থতা থেকে বের হতে পারেননি। মুড সুইং থেকে শুরু করে মানসিকতা উৎকন্ঠা আর বিষাদ চরম পর্যায়ে পৌঁছায় ১৯০৪ সালে তার পিতার মৃত্যুর পর। মানসিক অবসাদের কারণে তার সামাজিক জীবন বিপর্যস্ত হলেও লেখালেখির তেমন কোন সমস্যা ঘটায়নি। বরং অসুস্থতার জন্য নিয়মিত বিরতি দিয়ে লেখালেখি চালিয়ে গেছেন তিনি।

১৯১০, ১৯১২, ১৯১৩ সাল পর্যন্ত তাকে ৩ বার স্বল্প সময়ের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছিল। আধুনিক মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তিনি বাইপোলার ডিসঅর্ডারে ভুগছিলেন। মানসিক আঘাতের পাশাপাশি তার অবস্থাটা কিছুটা জেনেটিকও ছিল। তার বাবা লেসলি স্টিফেনও অবসাদে ভুগতেন। তার সৎ বোন লোরাও একই সমস্যায় ভুগতেন এবং অনেকদিন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এছাড়া অনেকেই তার সৃজনশীলতাকে তার মানসিক অসুস্থতার কারণ বলে মন্তব্য করে বলেন, অনেকসময় সৃজনশীলতা মানসিক অসুস্থতার জন্ম দেয়।

দীর্ঘদিন বিষন্নতায় ভোগার ফলে বেঁচে থাকবার তীব্রতা কমে যায় তার। মনোরোগে আক্রান্ত হতে হতে বিরক্ত হয়ে উঠেছিলেন তিনি। আর সেই বিরক্তি, ভয় আর হতাশা থেকেই আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। নিজের হাতে তুলে নেন নিজেকে ধ্বংসের দায়িত্ব। নিজের ওভারকোটটির পকেটে নুড়িপাথর ভরে ১৯৪১ সালের ২৮ মার্চ ৫৯ বছর বয়সে বাড়ির পাশে লন্ডনের ওউজ নদীতে ডুব দেন এই মহান সাহিত্যিক। জীবনে আর ফিরে আসেননি, জলের সঙ্গে একাকার হয়ে যান।

১৮ এপ্রিল তার দেহের কিছু অংশ পাওয়া যায়। লিওনেল সেই দেহাবশেষ সাসেক্সের মংক হাউজের একটি এলম গাছের নিচে সমাহিত করেন। শেষ বিদায়ের আগে প্রিয়তম স্বামীর উদ্দেশে এক মর্মস্পর্শী চিঠি লিখে যান ভার্জিনিয়া। চিঠিটি সম্ভবত পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি পড়া সুইসাইড নোটগুলোর একটি। অত্যন্ত মর্মস্পর্শী এই চিঠিটি এখনও সাহিত্যপ্রেমী তথা ভার্জিনিয়া উলফের প্রেমীদের কাছে ভীষণ জনপ্রিয়।

চিঠিতে ভার্জিনিয়া লিখেন- ‘‘প্রিয়তম, আমি নিশ্চিত, আবার পাগল হয়ে যাচ্ছি। মনে হচ্ছে, দ্বিতীয়বারের মতো আর ভয়াবহ সময় পার করতে পারব না। এবার আর সেরে উঠব না বোধ হয়। সবচেয়ে যুক্তিযুক্ত কাজটিই আমি করতে যাচ্ছি। তুমি আমায় সম্ভাব্য সর্বোচ্চ সুখ দিয়েছ। যেকোনো মানুষের পক্ষে যতটা করা সম্ভব তুমি সব দিক থেকে ততটাই করেছ। আমার এই ভয়াবহ অসুখের পূর্ব পর্যন্ত আমরা যেমন সুখী ছিলাম, তেমন সুখী হয়তো আর দুজন মানুষের পক্ষে হওয়া সম্ভব নয়। আমি এই অসুখের সঙ্গে যুদ্ধ করতে আর পারছি না। আমি জানি, তোমার জীবনটাও আমি শেষ করে দিচ্ছি। জীবনে তোমাকে কখনো অধৈর্য হতে দেখিনি। তোমাকে পেয়েছি অবিশ্বাস্য রকমের সুবোধ স্বামী হিসেবে। আমি জোর দিয়ে বলতে চাই, আমি যা বলছি প্রত্যেকেই জানে। আমার এই ভয়াবহ অসুখের আক্রমণ থেকে কেউ বাঁচাতে পারলে সে শুধু তুমিই পারতে। আমার অধিকার থেকে সব কিছুই চলে গেছে- রয়ে গেছে তোমার ভালোবাসা। আবারো বলছি, দুজন মানুষ একসঙ্গে সুখী হতে পারে, তোমাকে না পেলে জানতাম না

সূত্রঃ ইন্টারনেট

করোনায় স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে

“মনের খবর” ম্যাগাজিন পেতে কল করুন ০১৮ ৬৫ ৪৬ ৬৫ ৯৪

Previous articleবিবাহ বিচ্ছেদ পরবর্তী মানসিক পীড়া লাঘবে করণীয়
Next article‘যেকোন বয়সী মানুষেরই মানসিক স্বাস্থ্যের সুস্থতা প্রয়োজন’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here