বাইপোলার ডিসঅর্ডার একটি মানসিক স্বাস্থ্য সম্বন্ধীয় অবস্থা, যেখানে কোন ব্যক্তির মেজাজের পরিবর্তন ঘটে চরম আনন্দ এবং বিষন্নতা যেকোন একটিতে পরিবর্তিত হয়। একে ম্যানিক ডিপ্রেশন’ও বলে, যাতে ব্যক্তিটির রোজকার জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বিশ্বব্যাপী প্রায় ৪৫ মিলিয়ন মানুষ এই বাইপোলার ডিসঅর্ডারে বসবাস করে। মানসি্ক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত জাতীয় সমীক্ষা (২০১৮-১৯) এ দেখা গেছে, বাংলাদশে প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার মধ্যে বাইপোলার ডিসঅর্ডার ও এ সম্পর্কিত ব্যাধিগুলির প্রাদুর্ভাব ০.৪% এবং শিশু ও কিশোর কিশোরীদের মধ্যে ০.১%। বংশগত কারনেই এই রোগ বেশি হতে পারে। বাইপোলার ডিসঅর্ডারের প্রাদুর্ভাব পুরুষদের মধ্যে ০.৫% এবং মহিলাদের মধ্যে ০.৩% পাওয়া গেছে। বাইপোলার ডিসঅর্ডার একটি গুরুতর এবং দীর্ঘস্থায়ী মানসিক রোগ। মনোরোগ বিশেষজ্ঞের অভাব, চিকিৎসা সুবিধা এবং সামাজিক কলঙ্কের কারণে জনসংখ্যার প্রায় ৯২% রোগী এখনও চিকিৎসার বাইরে। সম্প্রতি বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অফ সাইকিয়াট্রিস্টস (বিএপি) বাইপোলার ডিসঅর্ডার ব্যবস্থাপনার জন্য নির্দেশিকা চালু করেছে।
প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্য সেবা। এই নির্দেশিকাটির ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অফ সাইকিয়াট্রিস্ট (বিএপি) ইতিমধ্যে আরও চারটি গুরুত্বপুর্ণ মানসিক রোগ সিজোফ্রেনিয়া, বিষন্নতা, উদ্বেগজনিত ব্যাধি ও ওসিডি সংক্রান্ত নির্দেশিকা চুড়ান্ত করেছে। বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অফ সাইকিয়াট্রিস্ট (বিএপি) বিশ্বাস করে যে বাংলাদেশের সকল শ্রেণীর মানুষের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবা একা মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের দ্বারা নিশ্চিত করা যায় না , এই ফ্যক্টরটি মাথায় রেখে আজকের বাইপোলার ডিসঅর্ডার চিকিৎসার নির্দেশিকা তৈরি করা হয়েছে যাতে সাধারণ অনুশীলনকারীরাও প্রয়োজনীয় নির্দেশিকা পেতে পারেন।
আজ ২২ মার্চ ২০২২ মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের (বিআইসিসি) কার্নিভাল হলে এই বাইপোলার ডিসঅর্ডারের একটি নির্দেশিকা উন্মোচন করা হয়েছে। এই নির্দেশিকাটি রোগীদের জন্য একটি অভিন্ন চিকিৎসার মান অর্জনে সাহায্য করবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজিএইচএস) অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম। বিশেষ অতিথি ছিলেন অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির – অতিরিক্ত মহাপরিচালক আডমিনিস্ট্রেশন ডিরেক্টরেট জেনারেল অব হেলথ সার্ভিসেস (ডিজিএইচএস), প্রফেসর ডা. মো. শামিউল আলম – পরিচালক- প্রশাসন অধিদপ্তর জেনারেল অব হেলথ সার্ভিসেস (ডিজিএইচএস), অধ্যাপক ডা. মো. রোবেদ আমিন, লাইন ডিরেক্টর নন কমিউনিক্যাবল ডিজিজেস কন্ট্রোল (এনসিডিসি)- ডিরেক্টরেট জেনারেল অব হেলথ সার্ভিসেস (ডিজিএইচএস)এবং প্রফেসর ডা. মো. গোলাম রব্বানী – চেয়ারপারসন – এনডিডিপি ট্রাস্ট। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রফেসর ডা. মো. ওয়াজিউল আলম চৌধুরী- সভাপতি – বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অফ সাইকিয়াট্রিস্ট (বিএপি)।
এছাড়া স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অফ সাইকিয়াট্রিস্ট (বিএপি) এর বৈজ্ঞানিক কমিটির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল(অব.) প্রফেসর ডা. মো. আজিজুল ইসলাম এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডা. সুলতানা আলগিন।
অনুষ্ঠানে বাইপোলার ডিসঅর্ডার গাইডলাইন বিষয়ক ওয়ার্কিং কমিটির সম্মানিত সদস্যের ক্রেস্ট ও স্কার্ফ দিয়ে সম্মানিত করা হয়।
নির্দেশিকা প্রনয়ণের অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী ও এই মহৎ প্রকল্পের সমন্বয়কারী বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অফ সাইকিয়াট্রিস্ট (বিএপি) এর সাধারণ সম্পাদক ড. মো. তারিকুল আলম বলেন, বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অফ সাইকিয়াট্রিস্ট (বিএপি) বাংলাদেশের মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য সরকারের সাথে হাত মিলিয়ে কাজ করবে এবং আমরা মানসিক স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
বিশেষ অতিথিরা তাদের বক্তব্যে বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অফ সাইকিয়াট্রিস্ট (বিএপি) এর উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি শারিরীকভাবে উপস্থিত না থাকতে পারার কারণে আন্তরিক ভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। ভিডিও বার্তার মাধ্যমে তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অফ সাইকিয়াট্রিস্ট (বিএপি) যে কাজ করেছে তা অত্যন্ত গুরুতপূর্ণ এবং বাংলাদেশের মানসিক রোগের চিকিৎসায় মাইলফলক হয়ে থাকবে। তিনি আশা করেন যে এই নির্দেশিকাটি সরকারী শাসনামলে অন্তর্ভুক্ত করা হবে এবং সেটা নিশ্চিত করার জন্য তিনি প্রয়জনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।
বাইপোলার ডিসর্ডার গাইডলাইন তৈরিতে লজিস্টিক ও বৈজ্ঞানিক অংশীদার হিসেবে অবদান রাখে সানোফি বাংলাদেশ লিমিটেড।
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে